মুর্শিদাবাদের ডোমকলের শিরোপড়া গ্রামে ছেলের কফিনবন্দী দেহের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে অসহায় বাবা-মা।

নিজস্ব প্রতিবেদক,নতুন গতি:-
কেরলে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে আঁটকে পড়েছিল বছর সতেরোর কিশোর আসিফ। লকডাউনের পর প্রিয়জনের কাছে বারবার বাড়ি ফেরার আকুতি জানিয়েছে। ছেলের অসহ মানসিক যন্ত্রনা সইতে না পেরে অসুস্থ বাবা যাকে সামনে পেয়েছে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করে গেছে পুরো লকডাউন পিরিয়ড জুড়ে।

    কড়া লকডাউন অমান্য করে কারুর পক্ষেই বাবার কাতর আবেদনে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় নি। অসহায় বাবা ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে গেছে, “আর ক’দিন থাক, বাপ, কষ্টমষ্ট করে, সরকার লিশ্চয় কিছু ব্যবস্থা কইরবে”। ছেলে যতবার ফোন করেছে বাবা অসহায়ভাবে ছেলেকে একই আশ্বাস দিয়ে গেছেন।

    বাবার কাছেও নিশ্চয়তা ছিল না তাঁর ছেলেও আদৌ ফিরতে পারবে কি না। ওদিকে খাবারের সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন চারদেওয়ালে আঁটকে থেকে মনে মনে অভিমানী হয়ে পড়ছিল বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছেলে আসিফ। বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছিল না। অভিমান, গ্লানি, অবসাদ ধীরে ধীরে খেয়ে ফেলছিল আসিফকে।

    অপরিনত মন শেষমেস আর মানসিক চাপ নিতে পারল না। তীব্র মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কাল ভোর পাঁচটায় গলায় দড়ি নিয়ে না ফেরার দেশে চলে আমাদের ছোট ভাই আসিফ ইকবাল । সকলের অলক্ষে, কেউ টের পায় নি। ডোমকলের বাড়িতে খবর পৌঁছায় তিন ঘন্টা পর। সকাল আটটায়।

    আসিফের চাচা আনসারুল বিশ্বাসকে ফোনে ধরেছিলাম আমরা “বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ”। অভিমানী সুরে বললেন, “বড়লোকের ছেলেমেয়েরা আরামে বিদেশ থেকে বিমানে করে দেশে ফিরছে, দোকানে দোকানে ভিড় করে দামি মদ কিনছে। লকডাউনের যত নিয়ম আমাদের গরীবের ছেলেদের বেলায়”।

    আসিফকে ফিরে পেতে বহু কাকুতি মিনতি করেছে বাবা মা। কোন লাভ হয় নি। রাষ্ট্র নির্লজ্জভাবে উদাসীন থেকেছে। প্রানহীন আসিফকে ফেরাতে নিশ্চয় এবার উদ্যোগী হবে সরকার। এটুকু আশা অন্তত করা যায়।

    মুর্শিদাবাদের ডোমকলের শিরোপড়া গ্রামে ছেলের কফিন বন্দী দেহের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে অসহায় বাবা-মা।