|
---|
নতুন গতি, ওয়েব ডেস্ক : দিন কয়েক আগেই ‘লাভ জিহাদ’ ইস্যুতে মুখ পুড়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের। ঢাকঢোল পিটিয়ে লাভ জিহাদ বিরোধী যে আইন আনা হয়েছে, সেই আইনে গ্রেফতার হওয়া দু’জনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। ধৃত ওই দুই মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি যোগী সরকারের পুলিশ। ১৫ দিন জেলে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে একজন বর। দ্বিতীয় জন বরের ভাই। আর সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই এবার বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি বন্ধুকে বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল এক মুসলিম কিশোর। কারণ সেই ‘লাভ জিহাদ’। গত দশদিন ধরে জেলে রয়েছে ওই কিশোর। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরে।
উত্তরপ্রদেশে পুলিশের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, ১৬ বছরের ওই কিশোরীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করতে চেয়েছিল অভিযুক্ত ওই মুসলিম কিশোর। অবশ্য পুলিশের এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কিশোর-কিশোরী দুজনেই। একই দাবি কিশোরীর পরিবারেরও। কিশোরী নিজেও বলছে, ‘১৫ ডিসেম্বর রাতে বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার সময় রাস্তায় কিছু লোক ঘিরে ধরে আমাদের মারধর করে। চুরির অভিযোগও দেয়। পরে আমার বন্ধুটিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ও আমাকে কখনই আমাকে ধর্মান্তরিত করতে চায়নি।’
কিশোরীর মতো একই দাবি তার মায়েরও। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে একটা জন্মদিনের পার্টি থেকে ফিরছিল। ছেলেটি ওকে বাড়ি দিতে এসেছিল। তখনই গ্রামবাসীরা ওদের ধরে। আমার মেয়ে বারবার বলেছে, ওরা কোথা থেকে আসছিল। কিন্তু কেউ কোনও কথা শুনতেই চায়নি। সঠিক বিচার চাই আমরা।’ যদিও কিশোরীর বাবা কথায়, ‘ওই মুসলিম ছেলেটি আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাই পুলিশে খবর দিয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে সাহায্য করেছে। মিডিয়ায় দাবি মিথ্যা।’ কিশোরটির মা’ও বলছেন, ‘আমার ছেলে একটা জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিল। তারপর থেকে ওকে থানায় আটকে রেখেছে। মারধরও করা হয়েছে। আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই।’
অথচ এই ঘটনার আগেও ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে মুুখ পুড়েছে যোগী সরকারের। এই মাসের গোড়ার দিকে মোরাদাবাদের কান্ত এলাকায় একটি ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসে বছর ২২-এর এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে বিয়ের রেজিস্ট্রি করছিলেন এক যুবক। তাঁর ভাই সঙ্গে ছিলেন। সেই সময় তাঁদের বাধা দেন বজরং দলের কিছু সদস্য। ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশ। অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণীকে গোপন একটি জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই তরুণী পরে অভিযোগ জানান, তাঁর গর্ভপাত করার জন্য একটি ইঞ্জেকশন দেন সরকারি চিকিৎসকরা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসের ঘটনার একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি জানাজানি হয়। তাতে দেখা যায়, ওই যুগলকে রীতিমতো হেনস্থা করছেন বজরং দলের সদস্যরা। একজন ওই তরুণীকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে জানাচ্ছে, ধর্ম পরিবর্তন করার জন্য ডিএম যে অনুমতিপত্র দিয়েছেন, তা দেখাতে হবে। আর একজনের হুমকি, ‘আইন জানো না তোমরা?’ সঙ্গে সঙ্গে আর এক জনের সংযোজন, ‘তোমাদের মতো লেকেদের জন্যই এটা বানাতে হয়েছে।’
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর কোর্টের হস্তক্ষেপে মুক্তি পান ওই দুই যুবক। যাঁর বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ, সেই যুবক বলেন, ‘দু’পক্ষের মতামত নিয়েই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। তার পরও আমাকে ১৫ দিন জেলে কাটাতে হল। অবশেষে মুক্তি মিলল।’ যদিও জেলে পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার করেছে কি না, সে প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই যুবক।
গত জুলাইয়ে বিয়ে হয় ওই তরুণ-তরুণীর। তার অন্তত চার মাস পর লাভ জিহাদ বিরোধী আইন আসে উত্তরপ্রদেশে। ওই তরুণী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রাপ্তবয়স্ক। ২২ বছর বয়স আমার। ২৪ জুলাই নিজের ইচ্ছেয় আমরা বিয়ে করেছিলাম। তার পরও আমাদের এই হেনস্থার মুখোমুখি হতে হল।’ মোরাদাবাদ পুলিশ অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণীকে একটি গোপান ডেরায় রেখেছিল। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তিনি মুক্তি পান। তার পরই অভিযোগ আনেন, গর্ভপাত করানোর জন্য তাঁকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। যদিও তা মানে চায়নি যোগী প্রশাসন। অবশ্য গত কয়েক দিনে ওই তরুণীকে পেটের যন্ত্রণা, রক্তপাতের সমস্যার জন্য দু’দফা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
গত শুক্রবারই চারজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি উত্তরপ্রদেশের এই নতুন লাভ জিহাদ বিরোধী আইনের কড়া সমালোচনা করেন। তাঁরা দাবি করেন বিভাজনের লক্ষ্যেই এই নতুন আইন এনেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। তার পরই প্রমাণ না পেয়ে এই আইনে ধৃত দু’জনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হল যোগী আদিত্যনাথ সরকার।
অপরদিকে, লাভ জিহাদ বিরোধী আইনে অভিযুক্ত এক মুসলিম যুবকের গ্রেপ্তারিতে স্থগিতাদেশ দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ওই মামলার রায় দিতে গিয়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে, ওই তরুণ-তরুণী প্রাপ্তবয়স্ক। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে না পুলিশ। ওই দিন মামলাটির পরবর্তী শুনানি। এক হিন্দু তরুণীর স্বামীর আনা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবকের বিরুদ্ধে লাভ জিহাদের ধারা দেয় পুলিশ। যদিও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই যুবক। সেই মামলার শুনানিতে এই নির্দেশ দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট।