|
---|
মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, নতুন গতি, চাঁচল:
আব্দুরেহিম হেয়িতের চীনের জেলে নির্যাতনরত অবস্থায় শহীদ হওয়াকে কেন্দ্র করে তুরস্ক সরকার অভিযোগের আঙুল তুলেছে কমিউনিস্ট চীন সরকারের বিরুদ্ধে।আব্দুরেহিম হেয়িত একজন উইঘুর সঙ্গীতশিল্পী ও কবি ছিলেন।উইঘুর সম্প্রদায় চীনে বসবাস করলেও তাদের মাতৃভাষা হল তুরস্ক ভাষা।তাই এই বিখ্যাত কবি ও সংগীতজ্ঞ তুরস্ক ভাষায় গান ও কবিতা লিখতেন।তিনি দুতার(বিশেষ পার্সিয়ান বাদ্যযন্ত্র) বাজাতে পারদর্শী ছিলেন।তিনি সঙ্গীততে দীক্ষা পান বেজিং-এর এক সনামধন্য সঙ্গীত একাডেমি থেকে। চীনের কলা বিভাগে অভিনয় করে তিনি অনেকের প্রিয়পাত্র ও শ্রদ্ধাভাজন হয়েছিলেন।
আব্দুরেহিমের মৃত্যুর খবর প্রথম প্রকাশ করে তুর্কি মিডিয়া ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯। তিনি ২০১০ সাল থেকে বন্দি ছিলেন সাম্প্রদায়িক চীন প্রশাসন দ্বারা। আট বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নিয়ে আব্দুরেহিম হেয়িত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের একটি বন্দিশিবিরে আটক ছিলেন। বন্দী অবস্থায় অমানবিক নির্যাতনের কারণে দুই বছরের মধ্যে তার মৃত্যু হয় বলে তুরস্কের বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়েছে।তুরস্কের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে-চীনের বন্দি শিবিরগুলোতে উইঘুর মুসলিমদের দীর্ঘদিন ধরে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়। এ সব বন্দিশিবিরগুলো বন্ধ করার জন্য চীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে তুরস্ক সরকার ।
তুরস্ক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জিনজিয়াং- এ দশ লাখের বেশি সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমকে আটকে রেখেছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার।উইঘুর মহিলাদের ধর্ষিত হওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যেই অধিকার বঞ্চিত উইঘুর মুসলিমদের বিভিন্নভাবে প্রাণহানির খবর আসে। বিবৃতিতে এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক প্রশাসন।তুর্কি প্রশাসনের পক্ষ হতে হামি অকসয় বলেন, ‘১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমকে বিধিবহির্ভূতভাবে বন্দী করে রেখেছে চীন। বন্দিশিবিরে নির্যাতনের মুখে তাদেরকে রাজনৈতিক মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। যারা এখনো বন্দি হননি, তারাও প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছেন।’
আব্দুরেহিম হেয়িত ছিলেন সঙ্গীত বিষয়ে ডিগ্রিধারী এবং জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী । নিজের করা ‘জনক’ শিরোনামে একটি গানের জন্য তাকে আটক করা হয়। এ গানে ‘যুদ্ধের শহীদেরা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের উস্কানি দেয়ার অভিযোগে আট বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় হেয়িতকে। এরপর বন্দিশিবিরে সাজা ভোগ করার দুই বছরের মাথায় মৃত্যু হয় তাঁর।
উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনের কমিউনিস্ট সরকারের অমানুষিক নির্যাতন মুসলিম বিশ্বের অগোচরে থেকে যাচ্ছে।মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর বিলাসবহুল জীবনের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠছে না চীনের এই মুসলিম নিধন।এদিকে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীনের কর্তৃপক্ষ। চীন সরকারের পক্ষ থেকে বন্দিশিবিরগুলোকে মূলত পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে সারা বিশ্বের উপস্থাপন করছে।এই ভাবে মুসলিম বিশ্বের অগোচরে চীনের কমিউনিস্ট সরকার উইঘুর মুসলিম নিধন যজ্ঞ জারি রেখেছে।