মসজিদে শিশু নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ইসলাম

আসিফ আলম, বহরমপুর :

    কবির ভাষা দিয়ে শুরু করছি
    ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা
    সব শিশুদের অন্তরে’।
    আজ যারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা একদিন শিশু ছিল, শিশু থেকেই তারা আজ যুবক হয়েছে। শিশুরা আল্লাহতায়ালার বড় এক নিয়ামত। পিতা-মাতার জন্য আমানত।

    সেটা ছিলো আমার জীবনের ভীষণ কষ্টকর এক অভিজ্ঞতা। ছোটবেলায় মসজিদের সামনের কাতারে দাঁড়ালে বড়দের অনেকেই বলতেন, “বাবু, তুমি ছোট মানুষ। পিছনে যাও পিছনে যাও।” আবাল্য আমার আত্মসম্মানের অনুভূতি সেন্সিটিভ লেভেলের। যে মানুষগুলো আমাকে পিছনের কাতারে যেতে বলেছিলেন তাদের সঙ্গে দেখা হলে এখনো সেই অপমানের স্মৃতিগুলোই আমার চোখে ভেসে ওঠে।

    জর্জ লিললে বলেছিলেন, “একজন আহত মানুষ যত সহজে তার যন্ত্রণা ভুলে যায়, একজন অপমানিত মানুষ তত সহজে তার অপমান ভোলে না।”

    মসজিদে শিশুদের সঙ্গে আচরণের ব্যাপারে আমাদের সমাজে কিছু ভুল নিয়ম প্রচলিত আছে। বিশেষ করে বয়স্ক শ্রেণীর লোকদের এই কাজটা বেশি করতে দেখেছি আমি। মসজিদে শিশুদের দুষ্টুমি কিংবা হাসাহাসিকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে অত্যন্ত বাজে আচরণ করা হয়। কখনো কখনো সামনের কাতারে দাঁড়ানো কোনো শিশুকে বিশ্রীভাবে পিছনের কাতারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতে শিশুটির মনে মসজিদের ব্যাপারে একধরণের ভীতি চলে আসা অস্বাভাবিক নয়!

    তুরস্কের মসজিদগুলোতে একটি কথা লেখা থাকে, “মুহতারাম, নামাজ পড়ার সময় যদি পিছনের সারি থেকে বাচ্চাদের হাসির আওয়াজ না আসে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাপারে ভয় করুন।” সেখানে শিশুরা মসজিদে গেলে তাদেরকে চকলেট গিফট্ করা হয়।

    রাসূল (সাঃ) ছেলে মেয়েদের ৭ বছর বয়সে নামাজের জন্য তাগিদ দিতে বলেছেন আর ১০ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে প্রহার করতে বলেছেন। [আবু দাউদ-৪৯৫]

    এমনকি রাসূল (সাঃ) তাঁর নাতনী উমামা বিনতে যয়নবকে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন। [আবু দাউদ-৯২০]

    মসজিদে খুতবারত অবস্থায় হাসান হোসাইন এসে পড়লে খুতবা বন্ধ রেখে তিনি তাদেরকে আদর করেছেন, বুকে জড়িয়ে ধরেছেন, চুমু দিয়েছেন।(ইবনে মাজাহ 3600 )

    অনেক বড় বড় ইসলামী মনীষীদের জীবনীতে লক্ষ্য করা যায় , তাদের প্রত্যেকের শৈশবটা কেটেছে বাবার হাত ধরে মসজিদে যেতে অভ্যস্ত হয়েই।

    সুতরাং আসুন শিশুদেরকে মসজিদে যেতে অভ্যস্ত করে তুলি। মসজিদে তাদের সঙ্গে বিনম্র আচরণ করি। জড়বাদী গোষ্ঠীর কম্পিউটার গেমস খেলতে অভ্যস্ত প্রজন্মের বিপরীতে গড়ে তুলি সারিবদ্ধ হয়ে মসজিদের দিকে এগিয়ে যাওয়া একটি প্রজন্ম।

    তাহলে তাদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামীর তারিক বিন যিয়াদ কিংবা সালাহ উদ্দীন আইউবীর মতো বীর সেনানী।

    পৃথিবীর বড় বড় পরিবর্তনগুলি এসেছে একক একজন মানুষের হাত ধরেই। আমাদের প্রয়োজন সেই একজন মানুষের। যে বেরিয়ে আসবে স্নিগ্ধ ভোরের মৃদুমন্দ বাতাস কেটে কেটে মসজিদের দিকে এগুতে থাকা এই শিশুদের মধ্য থেকেই।
    নজরুলের ভাষায়,
    “একটি আলোর পরশ পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে,
    একটি মানুষ মানুষ হলে বিশ্বজগৎ টলে”।