হিন্দু হকারের শেষকৃত্যে সাহায্যের হাত মুসলিম শিক্ষকের

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: একদিকে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা হরিশ্চন্দ্রপুর এ যেখানে দশজন ছাড়ালো। অন্যদিকে দফায় দফায় লকডাউন বেড়েই চলেছে এই আতঙ্কের পরিবেশ এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করল হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা। এক দরিদ্র হিন্দু হকারের শেষকৃত্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এক মুসলিম শিক্ষক। 12 দিন আগে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার রেল স্টেশন লাগোয়া রেলের জমিতেই বসবাসকারী বিটটু কর্মকার নামে বছর চব্বিশের 1 রেলের হকারের মৃত্যু হয়। একমাত্র রোজগেরেছেলের শেষকৃত্য থেকে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করার মত কোনটারই আর্থিক সামর্থ্য ছিল না মৃত হকার বিট্টু কর্মকারের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের। বাড়িতে নাবালিকা ছোট বোন দশম শ্রেণীর ছাত্র। একমাত্র রোজগেরে সদস্য বিটটু কর্মকার এর অকাল মৃত্যুতে চোখে অন্ধকার দেখছিলেন তার পরিবারের লোকেরা। লকডাউন এর জেরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল ছেলের রোজগার। এর মধ্যেই হঠাৎ করে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে অর্থের অভাবেপ্রায় বিনা চিকিৎসাতেই মারা যায় তার ছেলে বলে জানালেন বৃদ্ধ পিতা মন্টু কর্মকার। লকডাউন এরমধ্যে কিভাবে ছেলের শেষকৃত্য ও শ্রাদ্ধের টাকা জোগাড় করবেন ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না। এমন সময় স্থানীয় এলাকাবাসীর মুখে খবরটি জানতে পেরেই ওই হতদরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ান এলাকার দক্ষিণ মুকুন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বারিকুল ইসলাম বাবু। তিনি ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে তার ছেলের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের সমস্ত খরচ পরিবারটি হাতে তুলে দেন। তার সাথে পরিবারটির হাতে বেশ কিছু খাদ্য সামগ্রী সহ অন্যান্য সাহায্য তুলে দেন তিনি। আগামীতেও ওই পরিবারটিকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক বারিকুল ইসলাম জানান আমি এলাকাবাসীর মুখে ঘটনার কথা জানতে পেরেই ওই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছি। শুনতে পেলাম ওর ছেলে রেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করতো। হঠাৎ করে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে শ্বশুরবাড়িতে মারা গেছে। এদিকে অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মা ও নাবালিকা বোন তারা সকলেই এই লক ডাউন এর মধ্যে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এদের নিজস্ব কোন জমি জায়গা নেই। রেলের জমিতে কোন মত মাথা গুঁজে রয়েছে। আমি আমার সাধ্যমত উনাদের সাহায্য করেছি। এলাকার ভূমি কর্মদক্ষ কে অনুরোধ করেছি ওদের জন্য জমির ব্যবস্থা করতে যাতে সরকারি কোন প্রকল্প থেকে ওদের মাথা গোঁজার জন্য কোন ঘরের ব্যবস্থা করা যায়। ওর বোন দশম শ্রেণীর ছাত্রী আমি চেষ্টা করব আগামী তে ওর পড়াশোনার জন্য যতটা পারা যায় সাহায্য করার।
ছেলেকে হারিয়ে শোকাতুর মন্টু কর্মকার জানালেন স্থানীয় শিক্ষক বারিকুল বাবু পাশে না দাঁড়ালে তিনি তার ছেলের শেষকৃত্য টুকু করতে পারতেন না। একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে হারিয়েছি এখন সরকার যদি তাদের দিকে না তাকান তাহলে আগামীতে তারা চরম অসুবিধায় পড়বেন।