হিন্দু ভাইয়ের সৎকারে মুসলিম যুবকরা এগিয়ে এসে সম্প্রীতির উদাহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:- ধর্মীয় পোশাক আর প্রার্থনার আওয়াজকে নিয়ে দ্বিখণ্ডিত ভারতের কিছু মানুষের কাজে যখন মনে হয়, এ বধ্যভূমি আমার দেশ নয়, এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয় তখন ভারতাত্মা যেন বলতে চাইলেন তোমরা ভুল করছ, অতীতেও ভুলের মাশুল দিয়েছ শিকড় উপড়ে, আবারও দিতে চলেছ প্রাণ দিয়ে। ভারতের মজ্জায় আছে সম্প্রীতি। এদেশের সত্ত্বায় আছে ভালোবাসা। চোখে আঙুল দিয়ে সেই সম্প্রীতির নজির দেখালো মুর্শিদাবাদের ছোট্ট জনপদ জিয়াদারা। হিন্দু ভাইয়ের সৎকারে মুসলিম যুবকরা এগিয়ে এসে সম্প্রীতির উদাহরণ গড়লো জিয়াদারা গ্রাম। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি থানার অন্তর্গত জীবন্তির জিয়াদারায় সম্প্রতি বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত হিন্দু প্রতিবেশীর সৎকারে এগিয়ে এলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। বাড়ি থেকে শ্মশান পর্যন্ত শুধু শেষ যাত্রার সঙ্গী হয়ে নয়, সৎকারের যাবতীয় কাজকর্মে হাত লাগালেন তাঁরা। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সবকিছুই দাঁড়িয়ে থেকে দেখভাল করলেন প্রতিবেশী মুসলিমরা। উল্লেখ্য, গতকাল জীবন্তি জিয়াদারা গ্রামের বাসিন্দা অজামিল প্রামাণিক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। দারিদ্র্যের সাথে কোনো রকমে লড়াই করে সংসার চালাতেন অজামিল প্রামাণিক। তাঁর স্ত্রী বলেন গতকাল বিকেলে বাড়ির সামনে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিল অজামিল প্রামাণিক।ঘাস কেটে মাথায় করে ঘাস আনার সময় ইলেকট্রিক তারে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ এসে মৃত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। এই ঘটনার হতবাক হয়ে পড়ে পরিবার। চরমতম এই শোকের মধ্যে অসহায় দরিদ্র্য পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন প্রতিবেশী জহিরউদ্দিন, হাসিরুল, ফাইজুল, সফিকুলরা। মৃত অজামিল প্রামাণিকের সৎকার করার জন্য রমজান মাসে রোজা নিয়েই গ্রামে গ্রামে চাঁদা তুলে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে সৎকার করে সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়লেন জিয়াদারা মুসলিম পাড়া। এ বিষয়ে জহিরুদ্দিন সেখ বলেন \” দীর্ঘদিন ধরেই জিয়াদারা গ্রামে হিন্দু -মুসলিম উভয় সম্প্রদায় মিলেমিশে বসবাস করি। মিলে মিশে ভাগ করে নিই সুখ দুঃখ।হিন্দু ভাইদের যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে আমরা যোগদান করি তেমনি আমাদের জলসা কিংবা ঈদে হিন্দু ভাইয়েরা সহযোগিতা করেন। আজকের হানাহানির ভারতে তাকিয়ে দেখলে অনেকেই অবাক হতেই পারেন কিন্তু আমরা ছোট থেকেই হিন্দু মুসলিম একত্রে দুই ভাইয়ের মতো এক সঙ্গে বেড়ে উঠেছি।