যোগদান নিয়ে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল

মালদা ১৮জুন: যোগদান নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল। একে অপরের দিকে তুলছে অভিযোগের আঙুল। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগদান নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। উল্লেখ্য, দুইদিন আগে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল কার্যালয়ে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগদান করেন মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য মোহাম্মদ মুজাহিদ। সাথে যোগদান প্রায় পাঁচ শতাধিক কংগ্রেস কর্মী। যোগদান করেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানিক দাসের হাত ধরে। তার পরেই যোগদানকে ঘিরে ছাড়াই উত্তেজনা। প্রকাশ্যে আসে মহেন্দ্রপুর অঞ্চল এবং হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল। মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত শাসক দলের দখলে রয়েছে, পঞ্চায়েতে মোট সদস্য ১৩ জন, তৃণমূলের-১০, কংগ্রেস-১, সিপিআইএম-২, বিজেপি-০,আর সেই কংগ্রেসের সদস্য কে মানতে নারাজ মহেন্দ্রপুর অঞ্চল কমিটি, ৮১ নং জাতীয় সড়কে ভবানীপুর ব্রিজের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। তাদের দাবি ছিল এই যোগদান তারা মেনে নেবেন না। তারপরেই শুক্রবার যোগদানকে প্রত্যাখ্যান করে হলো সাংবাদিক সম্মেলন। জেলার সহকারি সভাপত বিকাশ ব্যানার্জীর উপস্থিতিতে হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মহেন্দ্রপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি পঙ্কজ কুমার দাস। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই যোগদানের বিরোধিতা করেন। অভিযোগ অঞ্চল কমিটি ও এলাকার বিধায়ক তজমুল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই যোগ দান কর্মসূচী হয়েছে। অঞ্চল নেতৃত্ব, এ ছাড়া ওই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১নং ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি জিয়াউর রহমান, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহকারি সভাপতি বিকাশ ব্যানার্জি, ছাত্র-নেতা বিমান ঝাঁ,তৃণমূল নেতা স্বপন আলী সহ অন্যান্যরা।

    জেলার সহকারি সভাপতি বিকাশ ব্যানার্জীর হাত দিয়ে জেলা নেতৃত্বর কাছে চিঠি দেন। যদিও পাল্টা মানিক দাসের দাবি ব্লক কমিটি এবং জেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই যোগদান করিয়েছেন। ব্যক্তিগত ইগোর কারণে তারা এই যোগদানের বিরোধিতা করছেন। যদিও অঞ্চল সভাপতি পঙ্কজ কুমার দাস বলেন কংগ্রেস থেকে যিনি যোগদান করেছেন তিনি তোলাবাজ। অঞ্চল সভাপতির দাবিকে কার্যত মেনে নিয়েছেন জেলার সহকারি সভাপতি বিকাশ ব্যানার্জি। পাল্টা মানিক দাস বলেন ওই এলাকায় সিন্ডিকেট রাজ আটকে যাবে। তাই তারা এই যোগদানের বিরোধিতা করছেন। যোগদানকারী সদস্য মোহাম্মদ মুজাহিদ ওই একই দাবি করেছেন। আর সব মিলিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। প্রকাশ্যে এসেছে দলের গোষ্ঠী কোন্দল।

    মহেন্দ্রপুর অঞ্চল সভাপতি পঙ্কজ কুমার দাস বলেন, ” কংগ্রেসের যে সদস্য যোগদান করেছেন তিনি তোলাবাজ। পঞ্চায়েত থেকে বহু দুর্নীতি করেছেন। এলাকায় ওনার প্রতিচ্ছবি ভালো না। তাই এরকম লোকের যোগদান আমরা মানতে পারছিনা। এই যোগদানের বিরুদ্ধে আমরা জেলা নেতৃত্বকে জানাচ্ছি।”

    এই বিষয়ে মালদা জেলা তৃণমূলের সহকারি সভাপতি বিকাশ ব্যানার্জি বলেন কয়েকজন ব্যক্তি কে দলে যোগদান করানো হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে পূর্বেকার অভিযোগ রয়েছে, মানুষের সঙ্গে তাঁরা শত্রুতা করেছে তারা জনগনের শত্রু। সেখানকার নেতৃত্ব যারা আছেন তারা বলছেন ওদের যোগদান আমরা মানবো না, আমরা ওদের সাথে কাজ করব না।এই মর্মে এলাকার অঞ্চল সভাপতি পঙ্কজ দাস একটি চিঠিও দিয়েছেন। বিকাশবাবু আরো জানান যে সমস্ত ব্যক্তি কে যোগদান করানো হয়েছে তাদের সাথে এলাকাবাসীদের কোন সৌহার্দ্য নেই। এই যোগদানকারীরা এর আগে যেভাবে পঞ্চায়েত চালিয়েছেন তাতে পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিকাশবাবু অভিযোগ করেন। আরো অভিযোগ করেন এলাকার বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই যোগ দান কর্মসূচী হয়েছে। এছাড়াও এই সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহকারী সভাপতি বিকাশ ব্যানার্জি বলেন যে এলাকার সভাপতি, ছাত্র-যুব,মহিলা কোনো কর্মীই এই যোগদান মেনে নিতে পারছে না। তাই সেই কথা তারা আমাকে জানাতেই আমি সেই কথা জেলা নেতৃত্বের কাছে জানিয়ে দিয়েছি।

    পাল্টা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক সভাপতি মানিক দাস বলেন,” ব্যক্তিগত ইগোর জন্য উনারা এরকম করছেন। ওই এলাকায় একটা সিন্ডিকেট রাজ চলত। যেটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এতো রাগ। আমি ব্লক নেতৃত্ব এবং জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই সব করেছি।”

    যোগদানকারী সদস্য মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন,” পঞ্চায়েত রাজের সময় থেকে আমার বাবা এই পঞ্চায়েতের সদস্য। কুড়ি বছর ধরে আমি সদস্য। মানুষ জানে আমরা কি রকম। যারা তোলাবাজির অভিযোগ করছে তারা তোলাবাজি করে। তাই আমি যোগদান করার পর তাদের ঘুম উড়ে গেছে।”

    বঙ্গ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে চলছে দলবদলের খেলা। আর যা নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে চলছে। শেষ পর্যন্ত মালদা জেলা নেতৃত্ব এই যোগদান নিয়ে কি পদক্ষেপ নেয় তাই দেখার।