এম.আর.এফ-এর ভুয়ো প্রতিনিধি সেজে আর্থিক প্রতারণা, বিহার ও কলকাতা থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করল সাইবার থানার পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, নতুন গতি : ১০ আগস্ট একটি গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ে কলকাতা পুলিশের সাইবার থানায়। গার্ডেনরিচের রামনগর সার্ভিস স্টেশনের ম্যানেজার অগ্নিভ পাল জানান, এম.আর.এফ সংস্থার ভুয়ো প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেছে কয়েকজন।
২২ জুলাই, একটি ওয়েবসাইটে কলকাতায় এম.আর.এফ টায়ারের ডিলারশিপ নেওয়ার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে অগ্নিভ পালের। বিজ্ঞাপনের নিচে একটি মেইল আইডি এবং টোল ফ্রি নম্বর। বিজ্ঞাপনটি যে নকল হতে পারে, ভাবতেই পারেননি অগ্নিভ। এম.আর.এফ টায়ারের ডিলারশিপ চেয়ে তিনি যোগাযোগও করেন ওই নম্বরে। এরপর, নিজেদের ওই সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা শুরু করে কয়েকজন। ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও ধাপে ধাপে জমা দিতে বলা হয়। তাদের কথামতো বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে মোট ৫,৬৮,৫০০ টাকা জমা দেন অগ্নিভ। গোটা বিষয়টাই এত নিখুঁত ও পেশাদারভাবে সাজিয়েছিল প্রতারকরা, যে সামান্য সন্দেহও হয়নি তাঁর।
কিন্তু টাকা জমা দেওয়ার পরেও ডিলারশিপের কাগজপত্র হাতে আসেনি। এদিকে সংস্থার প্রতিনিধিদেরও তখন আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে এরপর সাইবার থানায় অভিযোগ জানান অগ্নিভ।
শুরু হয় প্রযুক্তি প্রহরা। যে-যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়েছিলেন অগ্নিভ, তার প্রত্যেকটির অ্যাকাউন্ট-মালিকদের খোঁজ শুরু হয়। অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে জড়িত সমস্ত তথ্য খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে শুরু করেন সাইবার থানার তদন্তকারী অফিসারেরা। বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে অগ্নিভকে ফোন করত প্রতারকেরা। সেইসব মোবাইল নম্বরের যাবতীয় কল রেকর্ডসও খতিয়ে দেখা শুরু হয়। এরই পাশাপাশি, যে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনটি দেওয়া হয়েছিল, সেটির সম্পর্কেও খোঁজখবর চলতে থাকে।
মোবাইল নম্বরগুলির নথি যাচাই করে কলকাতা ও জগদ্দলের কয়েকজন বাসিন্দার নাম জানা যায়। শুরু থেকেই তদন্তকারী অফিসাররা অবশ্য আন্দাজ করতে পারছিলেন, ভুয়ো পরিচয়পত্র দিয়েই সিমগুলি তোলা হয়েছে। এদিকে কল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা যায়, ফোনগুলি এসেছিল দক্ষিণ কলকাতার পঞ্চসায়রের চক গড়িয়া আর বিহারের পাটনার গান্ধী ময়দান রোড অঞ্চল থেকে।
ইতিমধ্যে, ওয়েবসাইটের নথি যাচাই করে একটি ই-মেইল অ্যাড্রেসের হদিশ মেলে। গুগলের সাহায্য নিয়ে শুরু হয়ে পরবর্তী অনুসন্ধান। ক্রমে আরও একটি মোবাইল নম্বরের খোঁজ পান তদন্তকারী অফিসারেরা। দেখা যায়, সেই নম্বরটিও সক্রিয় পাটনার গান্ধী ময়দান রোড থেকেই। অঙ্ক দুইয়ে-দুইয়ে চার করতে আর অসুবিধে হয়নি।
দ্রুত বিহারে রওনা দেয় সাইবার থানার বিশেষ টিম। ১৫ নভেম্বর, কলকাতার চক গড়িয়া আর বিহারের পাটনায় ভার্মা নিবাস—দুটি জায়গাতেই তল্লাশি চালায় সাইবার থানার দুটি টিম। কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দীপক কুমার আর ঋতু রাজকে। আর পাটনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই প্রতারণা চক্রের আরেক কুশীলব কুণাল রাজকে। ৩ জনেই বিহারের বাসিন্দা। তল্লাশিতে দুটি ডেরা মিলিয়ে মোট ৯টি মোবাইল ফোন, ৪টি সিম কার্ড, ল্যাপটপ-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
গোটা চিত্রনাট্যটা প্রায় নিখুঁতভাবেই সাজিয়েছিল প্রতারক-ত্রয়ী। প্রথমে ভুয়ো পরিচয়পত্রের সাহায্যে একাধিক সিম নেওয়া আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। তারপর নকল ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞাপন। সেই ওয়েবসাইট আর বিজ্ঞাপন দেখে নকল বোঝা প্রায় অসম্ভব। এরপর এম.আর.এফ-এর প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা।
ধৃতদের ২৫ নভেম্বর অবধি পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় বিচারক। ছবি রইল তিন অভিযুক্তের।