|
---|
নিজস্ব প্রতিবেদক:- মহিষাদলের পরে পটাশপুর। গ্রাম কমিটির ‘মুখোশে’ জেলায় ফের ‘খাপ পঞ্চায়েত’ চালানোর ছায়া। পটাশপুরে খড়িকাপাটনা গ্রামের একটি ঘটনায় গ্রামবাসীদের উপরে কার্যত ‘দাদাগিরি’ চালানোর অভিযোগে পুলিশ সংশ্লিষ্ট গ্রামের কমিটির সম্পাদক-সহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে বুধবার।স্থানীয় সূত্রের খবর, পটাশপুর-২ ব্লকের খড়িকাপাটনা গ্রামের আদি বাসিন্দা তথা দুই ভাই রতন এবং তপন বিশাই কর্মসূত্রে সপরিবারে ভিন্ রাজ্যে থাকেন। বছরে কয়েকদিনের জন্য তাঁরা গ্রামের বাড়িতে আসেন। গত মঙ্গলবার থেকে বিশাই পরিবারের তরফে গ্রামে নাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়। সেই উপলক্ষে বুধবার হাজার দুয়েক গ্রামবাসীরে ভোগ এবং প্রসাদ বিতরণের প্রস্তুতি নেন তাঁরা। খড়িকাপাটনা ছাড়াও আশেপাশের একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই অনুষ্ঠান এবং প্রসাদ বিলি নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত।গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, খড়িকাপাটনায় ২৭ জন সদস্যের একটি পরিচালন কমিটি রয়েছে। গ্রামের কোনও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান হলে আয়োজক পরিবারকে অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য কমিটিকে আহ্বান জানাতে এবং অনুমতি নিতে হয়। এটাই গ্রাম কমিটির অলিখিত নিয়ম। অভিযোগ, বিশাই পরিবারের অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য গ্রাম কমিটিকে আহ্বান জানায়নি। অনুমতিও নেয়নি। তাতেই ক্ষেপে যায় গ্রাম পরিচালন কমিটি। বিশাই পরিবারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে মঙ্গলবারই তড়িঘড়ি বসে ‘খাপ পঞ্চায়েত’। বিষয়টি জানতে পেরে রতন বিশাই সভায় ক্ষমা চান।অভিযোগ, তাতে মন গলেনি গ্রাম কমিটির। তারা বিশাই পরিবারের অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার কমিটি কার্যত ‘হুইপ’ জারি করে গ্রামবাসীদের জানায় যে, বিশাই পরিবারের অনুষ্ঠানে যেন কেউ প্রসাদ খেতে না যান। কমিটির ওই নির্দেশ অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানারও ঘোষণা করা হয়। জরিমানার ভয়ে গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা অনুষ্ঠানে যাননি। এতে বিশাই পরিবারের রান্না করা প্রচুর খাদ্য নষ্ট হতে বসে। তখন বুধবার গ্রাম কমিটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই প্রসাদ ও তরিতরকারি নিয়ে স্থানীয় বাসন্তী মন্দিরে সামনে অবস্থানে বসে পড়েন বিশাই পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়রা। অভিযোগ করা হয় থানাতেও। তপন বিশাই বলেন, ‘‘গ্রাম কমিটিকে অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে তারা গ্রামবাসীদের প্রসাদ খেতে আসতে বারণ করেছে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে আমরা প্রসাদ নিয়ে অবস্থান করেছি। থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।’’সন্ধ্যায় আশেপাশের গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা এলাকায় জড়ো হন। গ্রামের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়। পরিস্থিতি গুরুতর হতে চলছে বুঝতে পেরে জেলাশাসকের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান বিডিও এবং পটাশপুর থানার পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রাম কমিটির সম্পাদক গোপাল বেরা-সহ আটজন সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃতেরা বৃহস্পতিবার কাঁথি আদালতে জামিন পেয়েছে। কমিটি সম্পাদক গোপালের দাবি, ‘‘মঙ্গলবার রাতে হঠকারিতায় কমিটি বসে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। কোনও ব্যক্তিকে প্রসাদ না খেতে বাধ্য করা হয়নি। পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বিষয়টিও মিথ্যা।’’উল্লেখ্য, গ্রাম কমিটির এমন দাদাগিরি জেলায় নতুন কিছু নয়। সপ্তাহ খানেক আগে মহিষাদলের চক দ্বারবেড়িয়া গ্রামের পরিচালন কমিটি লিফলেট বিলি করে গ্রামবাসীদের জানিয়েছিল যে, গ্রামে থাকতে গেলে তাঁদের করণীয় কী। ওই ঘটনাতেও অভিযুক্তেরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও কিছু এলাকার গ্রাম কমিটির সদস্যেরা যে শিক্ষা নিচ্ছেন না, পটাশপুরের ঘটনা তা আরও একবার প্রমাণ করল।