রবীন্দ্রসংগীত সঙ্গে মনচিকিৎসা

 

    কলকাতা,গত ১৪.০৫.১৯ আলিপুর কলেজে অনুষ্ঠত হল Music Therapy for Stress Relief বিষয়ে একটি অপূর্ব কর্মশালা। কর্মশালাটি অতি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করলেন Smt. Ishita Mukherjee ও Dr Debasree Nandy। দুজনেই শিল্পী, গবেষক, ‘Rabindrasangeet and Motivators’ এর শিক্ষিকা এবং বিখ্যাত শিল্পী, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক প্রফ. অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্যা। বিষয় ছিল রবীন্দ্রসংগীতের দ্বারা বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি-নিরাময় ‘বিজ্ঞানের’ ওপর আলোকপাত।

    ভাবছেন তো, এ আবার নতুন কি? আমরা বাঙালিরা তো আজন্মই রবীন্দ্র-পথ্যে সঞ্জীবিত! তবে, আজকের কর্মশালায় অভিনব বিষয় ছিল এই, যে রবীন্দ্রসংগীতের এই ঔষধী গুণ নিয়ে বিশেষ ভাবে তলিয়ে ভেবেছেন কিছু রবীন্দ্রবিশারদ, এবং লোককল্যানার্থে modern psychology and psychiatry-র জ্ঞানের সঙ্গে তার মেলবন্ধন ঘটিয়ে তৈরি হয়েছে এক অপূর্ব প্রয়োগোপযোগী (usable) এবং অনুকরণযোগ্য (duplicatable) চিকিৎসা পদ্ধতি (therapy)। বিভিন্ন psychiatrist ও psychologist এই therapy recommend করছেন, এবং দ্রুত গতীতে পুঞ্জীভূত অভিজ্ঞতায় নিত্য শান দেওয়া হচ্ছে এই পদ্ধতি।

    অনায়াস কথোপকথনের ভঙ্গিতে দুই বক্তা বিভিন্ন psychiatric case study তুলে ধরে বিশ্লেষণ করে বোঝালেন কি করে এই therapy ফলপ্রসূ হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে দেখ যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি মানসিক (এমনকি কিছুক্ষেত্রে শারীরিক) ভারসাম্য হারিয়েছেন, তার বন্ধুত্ব অর্জন করে, তাকে বিভিন্ন সময়ে নিজের পছন্দের মতন গান চয়ন করতে সাহায্য করলে, বা তার মনকষ্ট বুঝে তাৎপর্যপূর্ণ গান চয়ন করে দিলে, এবং উৎসাহপূর্ণ পরিবেশে তা তাকে নিঃসংকোচে গাইতে দিলে বা সেই গান শোনালে, দেখা যাচ্ছে তার মনজগতে আরোগ্যের উদ্বোধন হচ্ছে, কোথাও বা সেই পদ্ধতি দ্রুততর হয়ে উঠছে, আবার কোথাও বা অতি ঢিমে আনুষঙ্গিক psychiatric বা physical treatment কে catalyst-এর ন্যায় তরান্বিত করছে। অবশ্যই সেই ব্যক্তি রবীন্দ্র-অনুরাগী বা সংগীতনুরাগী হলে এই পদ্ধতি দ্রুততর ফলপ্রসূ হচ্ছে।

    উদার্ত কণ্ঠে গানের পর গান গেয়ে, পঙ্খতির পর পঙ্খতি বিশ্লেষণে বক্তারা দেখালেন, কোন গান কোন real life ভারসাম্যহীনতা কে ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সেই পরিস্থিতি কখনও dementia, কখনও suicidal tendency, depression বা একদমই জড় দেহের কোন brain pathology। গানের সুর, তাল, কথার দর্শন, সব মিলিয়ে অনুভূতির জগতে এবং brain-functioning-এ অদ্ভুত ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। শুনতে শুনতে তাক লেগে যাচ্ছিল! এর সঙ্গে রয়েছে therapy-র আরও আনুষঙ্গিক কৌশল যেমন কখনোই মনরোগীকে রুগী হিসেবে চিহ্ণিত (label) না করে, তার রোগের diagnosis তাকে উল্লেখ না করা, মনোযোগ কেবলমাত্র গানের মাধ্যমে তার অন্তর্নিহিত মনোবল জাগিয়ে তোলা, ইত্যাদি।

    এর সঙ্গে কর্মশালায় ছিল রবীন্দ্র-দর্শনে উদ্দীপ্ত নিত্য জীবন বিশ্লেষণের আহবান, যা আমাদের আবারও একবার অনিত্য, অমঙ্গলকর, ক্ষুদ্র আমিত্বে প্রতিষ্ঠিত ক্ষণস্থায়ী সুখের হাতছানি থেকে রক্ষা করে, নিত্য, মঙ্গলময়, চেতনাদ্বীপ্ত, বৃহত্তর আমিতে প্রতিষ্ঠিত আনন্দময় জীবন স্থাপনে প্রলোভীত করলো। এমন জীবন যে বহু মনরোগের প্রতি রক্ষাকবজ।

    এই অপূর্ব বর্ধিষ্ণু গবেষণা ভান্ডার এবং তার আনুষঙ্গিক প্রয়োগক্ষেত্র আমাদের কাছে তুলে ধরার জন্য আজকের দুই বিশেষজ্ঞকে অসীম ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই New Alipore College কর্তৃপক্ষ, তার IQAC ও Psychological Counselling Cell- কে এমন অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য। এই গবেষণা শাখা আরও সমৃদ্ধ হোক ও অনেক মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হোক, এই প্রার্থনা করি। স্বপ্ন রইলো কোনোদিন এই therapy-র healing brain chemistry latest mri cameras দ্বারা আমরা চাক্ষুষ করবো। তাতে সংগীত ও আধুনিক বিজ্ঞানের মেলবন্ধন সম্পুর্ন হবে!