|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্য যদি স্থির থাকে, তাহলে যত বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেন, স্বপ্ন পূরণ হতে বাধ্য। আর সেই লক্ষ্যই পূরণ করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করল শিলিগুড়ির রিয়া পাল। একদিকে মারাত্মক অসুখ, অন্যদিকে হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে রিয়া। শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৩৭নং ওয়ার্ডের আমতলা এলাকার বাসিন্দা এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রিয়া। গত ১০ইজুন প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। আর সেই পরীক্ষায় নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে শিলিগুড়ির বিবেকানন্দ হাইস্কুলের ছাত্রী রিয়া পাল। ৪৭৪ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম স্থান অধিকার করেছে রিয়া। তবে এই রেজাল্ট এমনিই তার ঝুলিতে আসেনি, নানান কাঠখড় পুড়িয়ে বাধা বিপত্তি কাটিয়ে তারপরেই এই সাফল্য এসেছে। জানা গিয়েছে, একেবারেই গরীব পরিবারের মেয়ে রিয়া। যেমনটা নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার একবছর আগে থেকেই ছিল না বিদ্যুতের আলো। মোমবাতির আলোতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে! তার উপর রিয়ার বাবা রঞ্জিত পাল দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। ডায়াবেটিস সহ আরও বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত তিনি। প্রায় বিছানায় শয্যাশায়ী তিনি। রঞ্জিত বাবুর চিকিৎসার জন্য পরিবারের শেষ সম্বল ভিটেমাটিও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পরিবারে উপার্জনের কেউ নেই বললেই চলে। ৮জনের সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। দাদু টিকিট বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। সেই সমস্ত দুঃখ কষ্টকে উপেক্ষা করেও কোনোরকমে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল সে। কিন্তু কথায় আছে না, বিপদ যখন আসে সব দিক থেকেই আসে। তেমনটাই ঘটেছে রিয়ার সাথেও। অতিথি হয়ে ঘাড়ের ওপর চেপে বসে মারাত্মক রোগ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েকদিন আগে রিপোর্টে ধরা পড়ে যে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রিয়া! ঔষধ খাবার পর ২ঘন্টা অচেতন হয়ে পড়ে থাকত সে। তারপরেও থেমে থাকেনি রিয়া। শারীরিক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল। আর তারই ফল এই নজরকাড়া সাফল্য। তবে এতবড় সাফল্যের পরেও থেমে যেতে হবে রিয়াকে। রিয়া জানিয়েছে, ভূগোল বিষয়ে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে তার। যদিও রিয়ার পরিবারের পক্ষে তার পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হয়ে উঠছে না। সেজন্য সরকারি ভাবে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে রিয়া এবং তার পরিবার। কারন তারাও চায় না টাকার কারনে আটকে যাক রিয়ার ভবিষ্যত।