সাদেকুলের দীর্ঘ নয় মাসের নিরলস পরিশ্রম, বাংলাদেশের জেল থেকে বাড়ি ফিরলেন মানিক দেবনাথ

আসিফ রনি,নতুন গতি : তিন বছর জেল বন্দী থাকার পর বাংলাদেশ থেকে ঘরে ফিরলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের এক মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। আর এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজকর্মী সাদেকুল ইসলাম। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত অসহায় বৃদ্ধ পিতামাতা। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলির আন্তর্জাতিক ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় ।

    জানা গেছে, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলির ধরন্দা গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ দেবনাথের একমাত্র ছেলে মানিক দেবনাথ। ভারত – বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হন মানসিক ভারসাম্যহীন মানিক দেবনাথ । সেখানে গিয়ে তার জেল হয় । ২০১৯ সালের ৮ই মার্চ বাড়ি থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে আর ফেরেনি মানিক দেবনাথ। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আগে বেশ কিছুদিন মানসিক অবসাদে ভুগছিল এমনকি চিকিৎসাও চলছিল । অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে মানিকের ১ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সেই দেশের সরকার । এরপরেই সারা বিশ্বে করোনার জন্য লকডাউন শুরু হয় । দেখতে দেখতে একবছর পেরিয়ে আরো একবছর হয়ে গেলেও ছেলেকে ফিরে পাননি ওই দম্পতি বলে জানা যায়। অনেক ঘােরাঘুরি করেও সুরাহা হচ্ছিল না । এরই মধ্যে সাদেকুলের সঙ্গে যােগাযােগ হয় মানিকের বাবা বিনােদ দেবনাথের ।

    জানা গিয়েছে , এ বছরের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ দিনাজপুরের মিলন বর্মন – এর মাধ্যমে মানিক দেবনাথের বাংলাদেশ জেলে আটকে থাকার খবর পান পেশায় আইটি প্রফেশনাল ও সমাজকর্মী সাদেকুল ইসলাম। তিনি খবর পেয়েই বিদেশমন্ত্রীর আগু – সহায়ক ও একজন আইএফএস অফিসারকে ঘটনাটি জানান । তারপরই বাংলাদেশে আটক মানিক দেবনাথের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বাংলাদেশে ভারতের দূতাবাস থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে তথ্য চাওয়া হয় । তারপর কোনও আপটেড ছিল না । এ নিয়ে সাদেকুল ফের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ান্নের আইজির কথা বলে অনুরােধ করেন যাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সঙ্গে যােগাযােগ করা হয় ।

    সাদেকুল আরও জানান বিএসএফ – এর আধিকারিকরা সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখার কথা বলেন। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জয়েন্ট সেক্রেটারিকে ব্যাপারটা জানানাে হয় যাতে বিএসএফ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে ।

    জানা গিয়েছে , কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে যােগাযােগ করা হলে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের চিফ আইপিএস রাজীব রঞ্জন ভার্মার নজরে আসে । তিনিও খোজখবর নিতে থাকেন । এ দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের স্পেশাল সেক্রেটারি অরুণিমা দে – র কাছেও খবর পৌঁছায় । তিনি ভারতীয় দূতাবাস কনস্যুলেট , বিএসএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাদেকুলকে সেই আপডেট দেন। তারপর সমস্ত কাগজপত্র তৈরি হয়।

    এদিন , ১৩ জুলাই , মঙ্গলবার সকাল ১১ টার সময় দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি চেকপােস্টে মানিককে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর লােকজন বিএসএফের আধিকারিকদের হাতে তুলে দেন। এদিন আরও দু’জনকে মুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশ । জানা গিয়েছে দিনজপুরেরই ইসলামপুরের বাসিন্দা মুহাম্মদ ও মাস্টার একেল নামে দু’জনকে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠানাে হয়েছে ।

    ছেলের বাড়ি ফেরা নিয়ে বিনােদ দেবনাথ বলেন , আমরা খুব সাধারণ ছেলে একটু মানসিক সমস্যায় ভুগছিল । সীমান্ত এলাকা থেকে ছেলেকে আটক করা হয় । আমরা জানতে পারি , বাংলাদেশে ১৩ মাসের জেল হয় ছেলের । কিন্তু তার পরেও ছেলেকে ফেরানো হচ্ছিল না । সাদেকুল ও যারা ছেলেকে ফেরানাের বন্দোবস্ত করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি । একইসঙ্গে তাঁর আর্জি ছেলেকে আটক করার সময় বাইক , মােবাহল ও অন্যান্য যেসব জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল তা যেন ফেরত দেয় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষা বাহিনী ।

    এছাড়াও তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি জানান,বেশ ভাল লাগছে মানিককে ফিরিয়ে আনতে পেরে। তবে আরো বেশি খুশি হতাম যদি আরো আগে ওদেশের জেল থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারতাম।