|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক ,মালদাঃ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহ দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হল রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ ও ইউনিসেফের পক্ষ থেকে। রাজ্যের সব কটি জেলার মধ্যে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ পর্ব প্রথম শুরু হয়েছে মালদাতেই। সাফল্য এলে পরবর্তীতে রাজ্যের অন্যান্য জেলার সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও এই প্রকল্প কার্যকরী করা হবে বলে মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। ১৬ জুন থেকে মালদার ৩০টা মাদ্রাসায় এই বিজ্ঞান প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। বিক্রমশীলা এডুকেশন সোসাইটিকে এই বিশেষ প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউনিসেফের সঙ্গে যৌথভাবে এই পাইলট প্রজেক্ট শুরুর জন্য মালদা বেছে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু কারণে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সারা রাজ্যে ৬০০টার উপরে মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে মালদা জেলাতেই শুধু আছ ৮২টা।
মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর পড়ুয়াদের শিক্ষার অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এক বছর আগে একটি সমীক্ষা চালানো হয় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে। তাতে দেখা গেছে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ারা সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে উঠতে না উঠে বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাচ্ছে। পরবর্তীতে আবারও বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে জানতে দ্বিতীয়বার সমীক্ষা চালানো হয়। এবার সমীক্ষা করা আসা হয় শিক্ষার্থীদের সাথে পাশাপাশি, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের নিয়েও। এই সমীক্ষায় মাদ্রাসা পড়ুয়াদের বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়গুলির প্রতি ভয় এবং আগ্রহের অভাব লক্ষ্য করেই এই বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় পর্ষদের পক্ষ থেকে।
প্রথম পর্যায়ে মালদার প্রায় ৩০টি মাদ্রাসাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মাদ্রাসাগুলির বিজ্ঞান শিক্ষকদের কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে পর্ষদ। এপ্রিল মাসে এই প্রশিক্ষণ হয়। এরপরেই ওই মাদ্রাসাগুলিতে পড়ুয়াদের বিজ্ঞান প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ক্লাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের প্রতিটি মাদ্রাসায় প্রথম পর্যায়ে তিনদিনের জন্য পাঠিয়ে পড়ুয়াদের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ সিলেবাস অনুযায়ী হাতে কলমে বিজ্ঞান শেখানো শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণ ১৬ জুন থেকে শুরু হয়েছে। চলবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
প্রথম পর্যায়ে ভৌত ও জীবন বিজ্ঞানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে গণিতের উপর জোর দেওয়া হবে বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কালিয়াচকের একটি মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণ দিতে আসা শিক্ষক জুলফিকার আলি বলেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পড়ুয়াদের মন থেকে বিজ্ঞানভীতি দূর করে তাদের বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে আগ্রহ বাড়ানো। হাতেকলমে এই বিজ্ঞান শিক্ষায় পড়ুয়াদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই নতুন ধারার বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ পেয়ে খুশির হাওয়া মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মধ্যেও। ইফতেসান খাতুন নামে সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রী বলেন, আগে বিজ্ঞান পড়তে ভয় করত। নতুন ক্লাস করে বুঝেছি বিজ্ঞান খুব মজার বিষয়। যে হলুদ খাচ্ছি সেটায় ভেজাল আছে কিনা তা নিজেই বুঝা সম্ভব। পরেও আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। এই প্রকল্পে ইতিবাচক সাড়া মিলবে বলেই আশা করছেন রাজ্য মাদ্রাসা পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপস বিশ্বাস বলেন, এটি খুব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আমার ধারণা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এই নতুন রকমের বিজ্ঞানের ক্লাস করে বিজ্ঞান পড়তে উৎসাহ পাবেন।