সোশ্যাল মিডিয়ার ও গতিময় যুগে এক পুরুষের আত্মকথা!

সোসিয়াল মিডিয়ার যুগে এক পুরুষের আত্মকথা, তন্ময় দেবনাথের কলমে

    নতুন গতিঃ দুনিয়া এগিয়েছে…. এগোচ্ছে… আর এতোতেই থাকবে। সাথে সাথে সারা দুনিয়া মেতে রয়েছে নেট দুনিয়ায়। বাড়িতে বসে মোবাইল খুলেই পেতে চাইছে সারা দুনিয়ার খবর। এরই মাঝে লাইক-পোস্ট-কমেন্টের আশায় শিকার হতে হচ্ছে ভুঁয়ো নিউজ দ্বারা।এই খবরাখবরের মাঝে আমার আপনার অজান্তে ভুঁয়ো কাহিনীর ভয়াবহ বর্ননার দিকটা কলমে তুললেন তরুন যুবক তন্ময় দেবনাথ।

    সত্যি হলেও গল্প: 🙂 ঘটনা ১: সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুক খুললাম,একটা মেসেজ।ফ্রেন্ডলিস্টের একজন মেয়ে মেসেঞ্জারে কানেক্ট হয়েছে,সেটারই মেসেজ।ব্যাক করতে গিয়ে আচমকা ভুল করে ভিডিও কল বাটনে চাপ পড়ে গেলো।তাড়াতাড়ি কেটে দিয়ে, ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম। মিনিট দশেক পরেই একের পর এক বন্ধুর ফোন, “তুই শর্মি নামের কোনো মেয়েকে ভিডিও কল করে বিরক্ত করিস?” ফেসবুক খুলে দেখলাম, মেয়েটি ভিডিও কলের স্ক্রীনশট পোস্ট করে আমার ব্যাপারে বেশ করে আজেবাজে লিখেছে, অথচ কস্মিনকালেও কথা বলিনি আগে! কমেন্ট বক্সে দেখলাম আমার বিরুদ্ধে যা না তাই বাজে কথা শুরু হয়েছে। ইগনোর করলাম। ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে। বাড়ি ফিরে দেখা যাবে।

    ঘটনা ২: বাসে উঠলাম। ঠায় দু ঘন্টা দাঁড়িয়ে। অবশেষে একটা লেডিস সিট খালি হতেই বসলাম। পা টা বড্ড ব্যথা করছে! তখনই পরের স্টপেজে একজন যুবতী উঠলেন। “নিন উঠুন,এটা লেডিস সিট!” আমি বললাম, “দেখুন আমি দু ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি,পায়ে খুব ব্যথা করছে। আরেকটু বসতে দিন,তারপরেই উঠে যাবো।” উনি শুনলেন না,চরম গালিগালাজ করে হাত চালাতে লাগলেন। দু একবার বাধা দিয়ে,শেষে উঠেই পড়লাম। নাহ,আজকে ইন্টারভিউ! মাথা গরম করলে হবেনা। বাস থেকে নামলাম। সামনের দোকানে খবরের চ্যানেলে দেখলাম একি! আমি তো..! হেডলাইনে “ভর দুপুরে বাসের মধ্যে মহিলার সম্মানহানি করার চেষ্টা যুবকের..” হয়ত বাসের মধ্যেই কেউ ভিডিও করেছিল । মুখ ঢেকে অফিসের দিক এগিয়ে গেলাম। অন্যদিক কনসেনট্রেট করলে হবেনা,আজকে ইন্টারভিউ!

    ঘটনা ৩: সকাল থেকে দুটো ঘটনার জন্য অনেকটা  ডিপ্রেসড ছিলাম। ইন্টারভিউ বোর্ডে ও সিলেক্টেড হলাম না। বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় এক দোকান থেকে পাউরুটি কিনলাম। মুখে নিতেই দেখলাম,একেবারে বাসি,গন্ধ! থুঃ করে ফেললাম রাস্তার পাশে। দুর্ভাগ্যবশত এবারও কেউ সেটা লেন্সবন্দি করে পোস্ট করেছে ফেসবুকে। বন্ধুদের অবিরাম মেনসন এ পোস্টগুলো দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন পেজে। স্বচ্ছ ভারত এ রাস্তায় থুতু ফেলার জন্য অনেকে আমাকে দেশদ্রোহী বলেও সম্বোধন করছে,সেটাও দেখলাম।

    ঘটনা ৪: বাসে আবার দাড়িয়ে থাকতে হবে নাকি,এই কারণে মেট্রোতে উঠলাম এবং সিট ও পেলাম। থাই আর কুচকির জায়গায় চুলকাচ্ছিল,খুবই সাধারণ ঘটনা এটা। প্যান্টের ওপর দিয়েই থাইতে হালকা করে হাত ঘষে নিলাম সেকেণ্ড দশেকের জন্য।তারপর চোখ ডুবিয়ে দিলাম পাশের ভদ্রলোকের খবরের কাগজে। মেট্রো থেকে নামতেই অনেককে দেখলাম আমার দিক অন্যভাবে তাকাতে । “আরে এই ছেলেটাই তো, কি অসভ্য..” বুঝলাম দুপুরে বাসের ঘটনাটার জন্য হতে পারে। কিছুক্ষন পরে স্টেশনেই এক যুবতী সোজা গালে চড় মেরেই বলে দিলো,”ট্রেনের মধ্যে মেয়েদের দেখে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি না করলে চলেনা..?” বুঝলাম,এবারও সোশাল মিডিয়ার ম্যাজিক! হ্যাঁ,সেটাই। মেট্রোর মধ্যে যুবকের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি! সাথে ভিডিও!

    ঘটনা ৫: সন্ধ্যা,বাড়ি ফিরছি অন্ধকার গলি দিয়ে। হঠাৎ চার পাঁচটা কুকুর তেড়ে এলো। দৌড়ানো শুরু করলাম। মিনিট খানেক দৌড়ানোর পর লোকালয়ে এলাম। কিন্তু ফেরার পথ একটাই। আবার গলির মুখে এলাম। হাতে লাঠি আর ঢিল নিয়ে। লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়ে কুকুরগুলোকে সরালাম। বাড়ি ফিরে ঘরে বসে আছি। বাইরে তুমুল চিৎকার অনেক লোকজনের। জানলা দিয়ে দেখলাম, হাতে প্ল্যাকার্ড সবার। “Say no to animal cruelty” !

    নাহ, এরা শান্তিতে বাঁচতে দিলো না আমাকে। সকাল থেকে একটা গোটা দিন অপরাধী প্রমাণিত হয়ে গেলাম বারবার। ঘড়িতে ঢং ঢং করে সাতটা বাজলো। সাত জন্ম বলে কিছু হয় শুনেছি। পরেরবার আর চাইনা এরকম জীবন।বিদায় নেবার পালা। শুধু সত্য মিথ্যা যাচাই করে নেওয়ার শিক্ষাটা কাউকে দিয়ে যেতে পারলাম না,আক্ষেপ থেকে গেলো।

    তন্ময় দেবনাথের কলমে

    প্রোফাইল লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/tanmoy1001