|
---|
“সোনারপুর উদ্যোগ” পরিবারের মানবিক রূপ। মুগ্ধ সোনারপুর-বাসী
জাহির হোসেন : ২০১৬ সালে মাত্র ১৩ জন অনন্যপ্রাণ সদস্য নিয়ে পথ চলা শুরু তাদের। নিজেদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে মাসে মাসে ৪০/- টাকা জমিয়ে স্বল্প পুঁজির তহবিল গড়ে তোলা। সেই পুঁজি নিয়েই দুঃস্থ মানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়া। সদস্য বন্ধুদের মধ্যে এই কাজ টেনে আনল আরো অনেক সহমর্মী সচেতন বন্ধুদের। সদস্য সংখ্যার সাথে বাড়লো তহবিল, বাড়লো কাজের পরিধি । কবি প্রণামের সন্ধ্যায় প্রথমে ৩০ জন অভাবী পড়ুয়ার হাতে যাবতীয় শিক্ষণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছিল তাদের পক্ষ থেকে, পরে যথাক্রমে ৪০,৫০ এবং ৭৫ জন দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের হাতে বইখাতা সহ অন্যান্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পুজোর সময় দূর গ্রামের দুঃস্থ শিশুদের নতুন জামাকাপড় দেওয়া হয়। উদ্যোগের সবচেয়ে বড়ো কাজ বোধহয় যেকোনো অনুষ্ঠান বাড়ির উদ্বৃত্ত খাবার সংগ্রহ করে এনে সোনারপুর রেলস্টেশন চত্বরে রাত্রিবাস করা ৩৫ জন মানুষকে প্রদান করা। এছাড়াও অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগ নতুন কিংবা পুরনো বইপত্র দিয়ে সাহায্য করে থাকে। সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু সহসা অতিমারী “করোনা” আতঙ্কিত আক্রমণে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে নেমে এলো লকডাউনের ছায়া। স্তদ্ধ হলো জনজীবন। রোজেই যাদের রোজনামচা তাদের ঘরে নেমে এলো অনাহারের কালরাত্রি।
জনগণ পদের গরিষ্ঠজনই দাঁড়িয়ে পড়ল খাদ্যের সারিতে। অনাহারক্লিষ্ট মানবজাতির এই দুর্বিষহ দৃশ্য বিচলিত করল উদ্যোগ পরিবারকে। কবিপ্রণাম সন্ধ্যার আয়োজন এবছর কার্যত অসম্ভব বুঝে উদ্যোগ দরিদ্র মানুষকে সেবাদানের সিদ্ধান্ত নিল । আজ পর্যন্ত উদ্যোগ ৪৫০টি পরিবারের হাতে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যাদি তুলে দিয়েছে। এই অতিমারি করোনার বিরুদ্ধে যারা একেবারে সামনে থেকে লড়ছেন সেই ডাক্তারবাবু, সিস্টার স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানিয়ে প্রথম পর্যায়ে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান,কলকাতা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল,আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল, এস.এস.কে.এম. হসপিটাল – এর মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ এবং ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ – এর সভাপতি ও সাংসদ শ্রী শান্তনু সেন মহাশয়ের হাতে ৫০ টি পিপিই কিটস তুলে দিয়েছে এবং আগামীতে আরও কিছু হাসপাতালের কাছে পিপিই কিটস পৌঁছে দেবে উদ্যোগ। আরও একটু এগিয়ে এই লড়াইয়ে শামিল অন্য যোদ্ধাদেরও কুর্নিশ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় । সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্যে উদ্যোগ আজ সোনারপুর থানার আই সি মাননীয় শ্রী সঞ্জীব চক্রবর্তী মহাশয়ের হাতে ১০০ টি এবং সোনারপুর জংশন জি.আর.পি প্রধান ঋকবেধ সাহা মহাশয়ের হাতে ২৫ টি মাস্ক ও গ্লাভস তুলে দেয়। কর্তব্যরত তিনজন সাংবাদিকের হাতেও ঐ মাস্ক এবং গ্লাভস তুলে দেওয়া হয়। এরপর আজই সোনারপুর অঞ্চলের ১২ জন অ্যাম্বুলেন্স চালকের হাতে পিপিই কিটস প্রদান করা হয় উদ্যোগ পরিবারের পক্ষ থেকে। চালকেরা প্রত্যেকেই ভীষণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ।
আজ বিকেলেও প্রায় ১০০ টি পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হবে বলে তারা জানান। যাদের আর্থিক সহায়তায় সমৃদ্ধ হয়ে উদ্যোগ নিরবচ্ছিন্নভাবে এই ত্রাণ কার্য চালিয়ে যেতে পারছে উদ্যোগ পরিবার তাঁদের সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।