তাঁদের জীবনে আর আসে না বসন্ত শরীরে আর লাগেনা নানা রঙের ছোঁয়া বয়সের ভারে এখন তাঁরা ব্রাত্য

নিজস্ব সংবাদদাতা : তাঁদের জীবনে আর আসে না বসন্ত। শরীরে আর লাগেনা নানা রঙের ছোঁয়া। বয়সের ভারে এখন তাঁরা ব্রাত্য। তাই তো তাঁরা সাড়ম্বর পূর্ণ উৎসবেও থাকেন আড়ম্বর পূর্ণ পরিবেশে। হ্যাঁ তাঁরা হলেন বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধ বৃদ্ধা। কারও বয়স ৯০ তো কারো বয়স ৮০, কেউ শারীরিক ভাবে অসুস্থ তো কেউ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তবুও যেন তাঁদের চোখে মুখে উজ্জ্বল চাহিদা প্রকাশ পায়। তাঁরা বলেন, এখানেও যদি বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান হয় তাহলে বেশ মজা হয়। কিন্তু কেমন যেন গলার ভেতর আটকে থাকা শব্দ, পরিবার পরিজনদের সঙ্গে রঙ খেলার আনন্দটাই আলাদা। কিন্তু হয়তো অনেক বেশী কিছু চেয়ে নেওয়ার ভয়ে শব্দটা মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে না। তাই বসন্ত উৎসবটাই জীবনের ডাইরি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন শেষ বয়সের এই মানুষগুলি। মেদিনীপুর শহরের একপ্রান্তে কংসাবতী নদী লাগোয়া এই বৃদ্ধাশ্রমে বর্তমানে আবাসিক বৃদ্ধ বৃদ্ধা রয়েছেন ৩৭ জন। কারো সন্তান ইঞ্জিনিয়ার তো কারো সন্তান চিকিৎসক, কারো সন্তান আবার বিদেশে থাকেন। কিন্তু তাও এইসব মানুষগুলি যেন সর্বহারা।আনন্দ উচ্ছ্বাস মাখা এই রঙের উৎসবে তারা শৈশব, কৈশোর বা যৌবন কাটিয়েছেন কিভাবে ?জানতে চাইতেই সবার মুখে ফুটল হাসি, চোখের সামনে যেন ভেসে উঠল সেই কাটিয়ে আসা দিনগুলোর ছবি। কেউ বললেন, খুব আনন্দে কাটানো মজার মজার জীবনের অংশ। বললেন, তখনের স্বাধীন জীবনের কীর্তি, সারাদিন বাড়ির বাইরে, বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে হোলি খেলে, দুপুরের মধ্যে রঙ মেখে একাকার হয়ে বাড়িতে ঢুকে মা বাবার কাছে বকুনি খাওয়ার স্মৃতি। আবার কেউ শোনালেন, তাঁর বাড়ির কঠিন ডিসিপ্লিনের জীবনকথা। দোলের দিনে বাড়ির বাইরে পা না রাখার কড়া বিধিনিষেধ। একে একে শুনলাম অনেকের জীবনের বসন্তের কাহিনী।তারপর প্রশ্ন করলাম, এখন কেমন কাটে বসন্ত ?অনেকে আকাশের দিকে মুখ তুলে চাপাস্বরে বললেন, কেটে যাচ্ছে ওইরকম। তারই মাঝে একজন বলে ফেললেন, “এখন আর আমাদের জীবনে বসন্ত আসেনা।” নিয়ম রক্ষার্থে অনেকেই এসে পায়ে আবির দিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে যায়। অনেকে খাবার দাওয়ারের ব্যবস্থা করে আনন্দ ভাগ করে নিতে। আর এইসব দাদু ঠাকুমারা ভবিষ্যতের অন্ধকারে অতীতের স্মৃতি হাতড়ে কিছু না পেয়ে মেতে ওঠেন বর্তমানে অন্যের আনন্দে।বৃদ্ধাশ্রমের কর্নধার সত্যব্রত দোলই বলেন, “অনেকেরই পরিবার পরিজনেরা মাঝে মাঝে আসেন, খোঁজ খবর নেন, বিভিন্ন উৎসবে সীমিত সময়ের জন্য সামিল হোন। আবার অনেকের পরিজনেরা দেখা করতে আসতে পারেননা, তবে ফোনে খোঁজ খবর নেন। এছাড়াও আমাদের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে আমরা এঁদের অংশগ্রহণ করাই, অনেকে নিজেরাই অংশ নেন। জীবনের অনেক স্মৃতিবিজড়িত দিন গুলি পেরিয়ে আসা মানুষগুলিও, জীবনের শেষ দিনগুলোতেও যে আনন্দে থাকার চেষ্টা করে, সেটাই হয়তো আমাদের পরম প্রাপ্য।”