জেলা ভাগের বিরোধিতায় সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিল বাঁকুড়া ভঙ্গ প্রতিরোধী মঞ্চ

নিজস্ব সংবাদদাতা : বিষ্ণুপুর জেলা গঠনের ঘোষণার পর থেকে বাঁকুড়া জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে নেটমাধ্যমে। সেই আবহে এ বার জেলা ভাগের বিরোধিতায় সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিল বাঁকুড়া ভঙ্গ প্রতিরোধী মঞ্চ। অন্য দিকে, জেলা ভাগের সমর্থন করে বিষ্ণুপুরের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে।রবিবার বাঁকুড়ার মাচানতলায় প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয় জেলা ভাগ প্রতিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে। মিছিলে কারও হাতে বিষ্ণুপুরের রাসমঞ্চের ছবি দেখা গিয়েছে, কারও হাতে আবার বাঁকুড়ার পাঁচমুড়ার ঘোড়া। কেউ গলায় মা সারদার ছবি ঝুলিয়ে এসেছেন। কেউ আবার যামিনী রায়ের। তাঁদের মুখে স্লোগান, ‘‘জেলা ভাগ মানছি না, মানব না।’’ মিছিলে পা মেলানো সংহিতা মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের একটাই দাবি— অখণ্ড বাঁকুড়া। আমরা চাই না বাঁকুড়া ভাগ হয়ে যাক। রামকিঙ্কর, যামিনী রায়, যদুভট্ট এই জেলার মানুষ। এঁদের সম্মান, ঐতিহ্য, আবেগ ও অভিমান নিয়ে আমরা বড় হয়েছি। বাঁকুড়া ভাগ হলে আমাদের আবেগও দু’ভাগ হয়ে যাবে।’’ বিক্ষোভকারী চাঁদনি দে বলেন, “বাঁকুড়াকে অখণ্ড রাখার দাবিতে আন্দোলন করব আমরা। আমাদের জেলা ভাগ না রোখা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব আমরা।’’সম্প্রতি রাজ্যের নতুন সাতটি জেলার সঙ্গে বিষ্ণুপুরের নাম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, বিষ্ণুপুর মহকুমা নিয়ে নতুন বিষ্ণুপুর জেলা গঠন করা হবে। মনে করা হচ্ছে, বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর, সোনামুখী, পাত্রসায়র ও ইন্দাস ব্লক বিষ্ণুপুর জেলার আওতায় আসতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই জেলার রাজনৈতিক মহল থেকে শিল্পমহল, পাড়ার চায়ের দোকান থেকে ঘরের অন্দরমহল— সর্বত্রই এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এক দিকে জেলা ভাগের বিরোধিতায় যেমন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে একাংশ, অন্য দিকে সমর্থনে সরব হয়েছেন বিষ্ণুপুর মহকুমার ছয় ব্লক ও দুই পুরএলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। কিছু জায়গায় মিষ্টি বিলি করা হয়।জেলা ভাগের পক্ষে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের যুক্তি, বিষ্ণুপুর জেলা গঠিত হলে বাঁকুড়া জেলা সদরের দূরবর্তী ইন্দাস ও কোতুলপুর ব্লক-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাজের সুবিধা হবে। পাশাপাশিই, তাঁদের আরও বক্তব্য, বিষ্ণুপুর এক সময় মল্লভূমের রাজধানী ছিল। মল্ল রাজারা বিষ্ণুপুরকে কেন্দ্র করেই মল্লভূম শাসন করে গিয়েছেন বহু বছর। এমন প্রাচীন শহরে জেলা সদরের কার্যালয় হওয়া জরুরি বলেই মনে করছেন তাঁরা। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের মতে, দূরবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়ানো সম্ভব হবে। ওই সব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে পদক্ষেপ করা যাবে।