মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল এ প্রথম টিকা নিলেন হেলথ সুপারভাইজার, খুশির হাওয়া এলাকাজুড়ে

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: ভারতে করোনা টিকাকরণ শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেএই তথ্য দেওয়া হয়েছিল। কবে থেকে ভারতে টিকাকরণ শুরু হতে পারে, তা নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবং সেই মতো আজ থেকে টীকাকরণের কাজ শুরুও হয়ে গেল রাজ্যে। প্রতিটি জেলার মতো মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকেও টীকাকরণ শুরু হয়ে গেল আজ।

    প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল যে, টিকাকরণে অগ্রাধিকার পাবেন প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা, স্বাস্থ্য কর্মীরা। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যাটি প্রায় ৩ কোটি। তারপর ২৭ কোটি ভারতীয়, যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি তাঁদের দেওয়া হবে করোনার টিকা। তারপর ৫০-এর কম বয়সি যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাঁরা করোনার টিকা পাবেন। সেই মতো আজ মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকে হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে টীকা দেওয়া হলো। গতকালই ৭২ টি ভায়েল এসে পৌঁছেছিল হরিশ্চন্দ্রপুর স্বাস্থ্য দপ্তরে। আজ টীকা করণের পর ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর এখনও পর্যন্ত কোনো অসুবিধা তারা বুঝতে পারেননি। বরং তারা এবার স্বস্তি অনুভব করছেন। গত নয় মাসের দুর্বিষহ পরিস্থিতি এবার হয়তো সত্যিই কাটতে চলেছে বলে অনুমান সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীর। ভ্যাকসিন নিয়ে অযথা বিভ্রান্ত না হতে বলছেন তারা। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের টীকা করণের পর সাধারণ মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছাবে বলে জানাচ্ছেন তারা। টিকাকরণ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক ১ বিডিও অনির্বাণ বসু, হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস,হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল বি এম ও এইচ চিকিৎসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল,চিকিৎসক ছোটন মন্ডল, হরিশ্চন্দ্রপুর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে প্রথম টীকা নেন হেলথ সুপারভাইজার গৌরী দাস।তিনি বলেন,”খুব ভালো লাগছে। ভয়ের কিছু নেই। নেওয়ার পর আমার শরীর সুস্থ আছে। সকলেরই নেওয়া উচিত।যাতে সবাই সুস্থ থাকে।

    হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ছোটন মন্ডলের বক্তব্য অনুযায়ী, খুব সুন্দর ফিলিংস, অসাধারণ একটা ফিলিংস যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। গত নয় মাসের যে লড়াই তার শেষের সুচনা হলো। ভ্যাকসিন নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কথায় তিনি বললেন, “আমার পাশে যিনি বসে রয়েছেন তিনি আধঘন্টা আগে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তিনি এখনও সুস্থ আছেন, বেঁচে আছেন। আমিও দশ মিনিট আগে ভ্যাকসিন নিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোনো অসুবিধা বুঝতে পারছিনা। যেখানে টীকা দেওয়া হবে সেই জায়গাটা হয়তো একটু ফুলে যেতে পারে, একটু জ্বর আসতে পারে তার বেশি কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, যারা প্রথম শ্রেনীর যোদ্ধা ছিলেন তাদের মধ্যে যারা মেডিসিন চেইনে ছিলেন তারা প্রথমে ভ্যাকসিন পাবেন। এই পাঁচদিনের মধ্যে এই ফেজটা আমরা কাভার করবো। তারপর ধাপে ধাপে বাকিদের ভ্যাকসিনেট করা হবে।

    হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল বি এম ও এইচ চিকিৎসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, “আমি যেরকম নর্মাল ছিলাম সেরকমই আছি। আর পাঁচটা ভ্যাকসিনের মতোই। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। অনেকেই অযথা ভয় পাচ্ছে। আমি ষাট বছরের একজন ব্যক্তি, টপ অফ দা লিষ্টে আমার নাম ছিল। টেস্টেড ভ্যাকসিন আমাদের দেওয়া হচ্ছে। এক লক্ষ লোকের মধ্যে একটা ভুল রেজাল্ট আসতেই পারে। সেটা তো নর্মাল, সমস্ত ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ভ্যাকসিনে যা সাইড এফেক্ট রয়ছে এক্ষেত্রেও তাই। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আমি একদম নর্মাল আছি। হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক ১ বিডিও অনির্বান বসু এই প্রসঙ্গে বলেন, হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানের কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। এখানে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করেছেন তারা আজ ভ্যাকসিন পেতে চলেছেন। দু একজন হয়তো ভ্যাকসিন নিতে ভয় পাচ্ছেন। যেটা স্বাভাবিক, সব ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক ভয় থাকে। তবে এটি নিরাপদ একটা ভ্যাকসিন। প্রথমে স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে যারা যুক্ত তারা এগিয়ে এসেছেন। ১০০ জনের মতো স্বাস্থ্যকর্মীদের আজকে ভ্যাকসিনেট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি আশা করবো এখানে ভ্যাকসিনেশনের কাজ সুষ্ঠভাবেই সম্পন্ন হবে। হরিশ্চন্দ্রপুর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ধরে আমরা সকলে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করলাম। আজ টিকা করন প্রক্রিয়া শুরু হলো। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীরা পাচ্ছেন। ধীরে ধীরে সকলেই পাবে। আজ খুব আনন্দের দিন।