বেকায়দায় পড়ে গেল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস

বেকায়দায় পড়ে গেল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস

     

     

     

     

    নতুন গতি নিউজ ডেস্ক : এবার বেকায়দায় পড়ে গেল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রায় দেড় দশক বাদে অপরাধ থেকে দায় মুক্ত হল সিপিএম। দায় মুক্ত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও। আর সবটাই হল বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই। একই সঙ্গে ক্ষাভ জেগে উঠল নন্দীগ্রামের বুকেও। তবে সব থেকে বড় তাৎপর্য এটাই যে রাজ্যের জমি আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে আবারও নতুন করে কাটাছেঁড়া করা শুরু হল। সামগ্রিক ভাবে উজ্জীবিত বাম শিবির আর মুখ পুড়ছে তৃণমূলের আর তাও দলনেত্রীর মন্তব্যের জেরে যিনি নিজে কিনা এখন জমি আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন। সেই লড়াইয়ে শুভেন্দু-শিশিরকে কোনঠাসা করতে গিয়ে তিনি এমন একটি বেফাস মন্তব্য করে বসলেন যা রাজ্য রাজনীতিকেই ভিন্ন স্রোতে ঠেলে দিল। ১৪ বছর আগে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৪জন। সেই সময় অভিযােগ উঠেছিল সিপিএমের চটি পরা পুলিশ গুলি চালিয়ে খুন করেছিল জমি আন্দোলনকারীদের। সেই ঘটনাকে টেনে এনে রবিবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামের বুকে দাঁড়িয়ে সভা করতে গিয়ে মমতা বেঁফাস মন্তব্য করে বসেন। বলেন, ‘যারা গুলি চালিয়েছিল আপনাদের মনে আছে, পুলিশের ড্রেস পরে এসেছিল অনেকে। মনে আছে? মনে পড়ছে? অনেকে পুলিশের ড্রেস পরে এসেছিল। নিশ্চয়ই ভুলে যাননি! নন্দীগ্রাম, নন্দীমা, আমার মনে আছে সব। আমি ডেট ওয়াইজে বলে দেব। মনে আছে, হাওয়াই চটি পরে এসেছিল বলে ধরা পড়ে গিয়েছিল। এ বারেও সেই সব কেলেঙ্কারি করছে। অনেক বিএসএফ, সিআইএসএফ-এর ড্রেস-ট্রেস কিনেছেন। কারণ, যাঁরা এ সব করেন না তাঁরা জানেন। আর আমি এখনও বিশ্বাস করি, আমি পরে শুনেছিলাম, এই বাপ-

    ব্যাটার পারমিশন ছাড়া সে দিন পুলিশ নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারত না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি। আমিও একটা গভর্নমেন্ট চালাই। আমিও খোঁজখবর পরে নিয়েছি। দেখুন,আমি ভদ্রলােক বলে কিছু বলিনি। ফেয়ার এনাফ! অর্থাৎ মমতা জানিয়ে দিলেন বুঝিয়ে দিলেন নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছিল শিশির-শুভেন্দুর অঙ্গুলিহেলনে। তাঁর এই মন্তব্যে এটাও পরিষ্কার হয়ে গেল নন্দীগ্রামের গুলি চালনার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না লক্ষ্মণ শেঠ, জড়িত ছিলেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা সিপিএমও। বরঞ্চ দায়ী ছিল তৃণমূলই।

    কারন শিশির আর শুভেন্দু তখন তৃণমূলেই। সেক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে নন্দীগ্রামের ঘটনায় তাহলে কতটা ঘটনা আর কতটা রটনা? কতটা বাস্তব আর কতটা ষড়যন্ত্র।

    শিশিরবাবু অবশ্য গতকালই মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বেফঁস মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘ওঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এত বড় মিথ্যাবাদী বাংলায় জন্মেছে কি না আমি জানি না। আমার ৮২ বছর বয়স। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। কিন্তু এমন মানুষ আমি কখনও দেখিনি। উনি কতগুলাে মানুষের কাধে পা দিয়ে তিনি এখানে এলেন। সেগুলাে তিনি ভুলে গিয়েছেন। শুভেন্দুর রক্ত এখনও ওঁর পায়ে লেগে আছে। উনি যা বলছেন, উপরওয়ালাই তার বিচার করবেন। আমি এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করব না। ওই মিথ্যার জবাব নন্দীগ্রামবাসী দেবেন। মমতা হারছেন। সে কারণেই এ সব কথা বলছেন। হেরে যাওয়ার সঙ্কেত পেয়ে গিয়েছেন উনি।

    তাই পাগলের প্রলাপ বকছেন। তবে উনি পারেন না এমন কিছু নেই। কিন্তু ওঁর কথা কেউ বিশ্বাসও করে না।’ তবে ঘটনার জল যেদিকেই গড়াক না কেন মুখ্যমন্ত্রীর বেফঁস মন্তব্যের জেরে এখন সব থেকে খুশি বামপন্থীরা। কার্যত লালপা্টির গা থেকে খসে গেল এক গণহত্যার দায়ভার।মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে তাই এদিন মুখ খুলেছেন একের পর এক বামনেতা। সােশ্যাল মিডিয়া ভেসে যাচ্ছি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্তুতিতে। বাম নেতারা সাফ জানাচ্ছেন, ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশি অভিযানে যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁরা সকলেই পুলিশের গুলিতে মারা যাননি। নিহতদের মধ্যে আটজনের দেহে গুলির আঘাত ছিল।

    পাঁচজনের দেহে ছিল তীক্ষ্ণ অস্ত্রের আঘাত। বাকি একজনের দেহে ছিল বােমার আঘাত। তখনই সিপিএম প্রশ্ন তুলেছিল,পুলিশ তাে বােমা বা তীক্ষ্ণ অস্ত্র ব্যবহার করে না! এতদিন পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দিয়ে দিলেন।

    তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই বাকি ছ’জনকে খুন করেছিল। নিহতের সংখ্যা বাড়ানাের জন্য। ওই ঘটনার পর প্রথমদিকে বুদ্ধদেববাবু বলার চেষ্টা করেছিলেন, হাওয়াই চটি পরা পুলিশের তত্ত্ব ‘বানানাে গল্প’, চক্রান্ত। এদিন এই প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক নেতা জানিয়েছেন, ‘বুদ্ধদা তাে একাধিক বার এ কথা বলেইছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছিলেন, আগে জানলে পুলিশ পাঠাতেন না। পড়ে থাকত নন্দীগ্রাম আরও কিছু দিন। মুখ্যমন্ত্রী এ বার তাে বুদ্ধদার কথাতেই সিলমােহর দিলেন! সত্যিটা বেশি দিন চেপে রাখা যায় না। তবে নন্দীগ্রামের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর এত দিনের মিথ্যাচারের জবাব এ বার দেবেন ইভিএমে।

    নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনায় মমতার মন্তব্য নিয়ে এখন শােরগােল পড়ে গিয়েছে নেট মাধ্যমেও। সেখানে এখন অনেকেই বুদ্ধদেববাবুর কাছে ক্ষমা চাইছেন। তাঁরা বলছেন, “আপনি জিতে গিয়েছেন স্যর! আপনিই প্রথম চক্রান্তের কথা বলেছিলেন। আমরা কেউ শুনিনি। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, আপনিই ঠিক বলেছিলেন। আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।

    একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছে যে তাহলে কী নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনায় পুলিশেরই একাংশের আধিকারিকদের সঙ্গে তৃণমূলের যােগসাজস ছিল? আর সেই যােগসাজসের অনেকের আবার প্রশ্ন, ‘তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া অধিকারীদের সমালােচনা করতে গিয়ে, তাঁরা কতটা খারাপ, সেটা নন্দীগ্রামকে বােঝাতে গিয়ে আসলে মুখ্যমন্ত্রীর ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। বিজেপি-কে প্যাচে ফেলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই প্যাচে পড়ে গিয়েছেন।