অনিস খান মৃত্যুকাণ্ডে ধিক্কার জানালেন বাংলা সিনেমার তারকারা

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: হাওড়ার আমতার প্রতিবাদী পড়ুয়া আনিস খানের রহস্যমৃত্যুকে ঘিরে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। পরিবারের দাবি সিবিআই তদন্তের। ছাত্রনেতার রহস্যমৃত্যু ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে বৈঠকের পরই নিরপেক্ষ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এবার আনিস-মামলায় মুখ খুললেন কৌশিক সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম শীলরা।

    রবিবারই আনিস খানের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন কৌশিক সেন। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে খানিকক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে এলেন। আনিসের রহস্যমৃত্যু নিয়ে ক্ষুব্ধ কৌশিক সাফ জানান, “এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। তিনি এও বলেন যে, আনিস এই অঞ্চলে যথেষ্ট মেধাবী তো বটেই, পাশাপাশি জনপ্রিয় ছেলেও ছিল। যে কোনও কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত। ফলে সেই ছেলেটা যখন বারবার প্রসাশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল যে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি আছে। তো সেই প্রেক্ষিতে আমাদের প্রশাসনের ব্যর্থতাটাই দেখতে হবে। এবং সেটা কখনও সরকার অগ্রাহ্য করতে পারে না। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত, সেই হিসেবে আনিসে বাড়িতে গিয়েছিলাম। কারণ, ভবিষ্যতে আরেকটা আনিস-কাণ্ড যাতে না হয়। এবং এই ছেলেটি যাতে সুবিচার পায়।”

    পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে, “নিয়মবহির্ভূতভাবেই আনিসের ময়নাতদন্ত হয়েছে। পরিবারের মনেও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। গণতন্ত্রের খাতিরেই আমরা তদন্তে স্বচ্ছতা দাবি করছি। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, উনি হস্তক্ষেপ করলেই দোষীরা শাস্তি পাবে। এবং আনিসের পরিবার সুবিচার পাবে।”

    কৌশিক সেনের ছেলে তথা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ঋদ্ধি সেনের মন্তব্য, “একটা ২৮ বছরের ছেলেকে ভাল কাজ করতে গিয়ে খুন হতে হল, নোংরা রাজনীতির পেশীবলে ওকে শ্বাসরুদ্ধ হতে হল। আনিস খানের জঘন্য এবং পাশবিক মৃতুকাণ্ডের জন্য বিচার চাইছি।”

    পরিচালক অরিন্দম শীলের মন্তব্য, “আনিস খান এর মৃত্যু অত্যন্ত নিন্দাজনক। তীব্র ধিক্কার জানাই । দোষীর শাস্তি চাই।” এক ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি। যদিও পরিচালকের এহেন মন্তব্যের পর নেটিজেনরা তাঁর রাজ্য সরকার ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তাঁকে ট্রোল করা শুরু করেছেন।

    অন্যদিকে, “আনিস খান ইস্যু নিয়ে টুইটে বাকবিতণ্ডায় জড়ালেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতা লিখেছিলেন, হত্যাকারীরা কোন দলের, নিহত কোন দলের ছিলেন, এইসব যুক্তি-তর্ক তথ্য নিষ্প্রয়োজন মনে করছি এক্ষেত্রে। এবং এই সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে আনিস খানের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এই ঘটনার বিচার এবং অপরাধীদের আইনানুগ শাস্তি হওয়া দরকার।”

    পরমের এই টুইটের পাল্টা ঐশী ঘোষ বলেন, “হত্যাকারীর আর নিহতের দলটা কেন শুধু বেছে বেছে নিষ্প্রয়োজন হয়ে যায়, বুঝতে পারলাম না। এক্ষেত্রে অপরাধীরা এক রাজনৈতিক দলের লোক, আর তাঁদের দলের নামটা উচ্চারণ করতে এত দ্বিধা কেন সবার?” ছেড়ে কথা বলেননি অভিনেতাও। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “আপ্তবাক্যের জোরে জোর করে বিবাদ করে কি লাভ? তাও আবার টুইটারের আরামে! যেটা সিপিএমের আমলে কুৎসিত ছিল, সেটা তৃণমূল আমলেও কুৎসিত, এটাই বলার চেষ্টা ছিল!”

    এরপরই বেশ কয়েকটি টুইটে নিজের অবস্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। শেষ টুইটে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, “যে কোনও দলের লোকের সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটলে এরকমই প্রতিক্রিয়া হবে আমার। আনিসের চিঠি আমি পড়েছি এবং পুলিশের ভূমিকার চরম নিন্দা করছি। এই ঘটনার বিচার এবং প্রমাণ হলে চরম শাস্তি প্রয়োজন। তাই অভ্যেসের বিরুদ্ধে গিয়ে এত কথা লিখছি। গণহত্যাকারীরা ‘আমাদের গর্ব’ বলে আস্ফালন করছি না।”