পঞ্চায়েত প্রধান ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হয়েও নিয়মিত বেতন নিয়ে চলেছেন দুই শিক্ষক

জাকির হোসেন সেখ, ১২ জুন, নতুন গতি, মুর্শিদাবাদ: একজন তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। অন্যজন তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। দু’জনেই আবার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকপদেও বহাল। মাস গেলে বেতন‌ও নিচ্ছিলেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের বোর্ড গঠনের সময়েই পঞ্চায়েত প্রধান ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েও ওই দু’জন শিক্ষকতা থেকে ইস্তফাও দেননি এবং ছুটিও নেননি। উল্টে প্রতি মাসে নিয়ম করে বেতন নিয়েছেন। সিপিএম ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গুরুতর এই অভিযোগের পরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি ব্লকের গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন মার্ডি এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ভারতী হাঁসদা এখন তাই চরম বিড়ম্বনায়।

    স্বপন মার্ডি হলেন পাটকেলডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিশালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক। আর ভারতী হাঁসদা হলেন ওই পাটকেল ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতেরই বেলডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
    গুরুতর অনিয়মের এই বিষয় জানাজানি হতেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে স্বপন মার্ডির বেতন বন্ধ করে আগের সব বেতন ফেরতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে খবর। ভারতী হাঁসদার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবারই সাগরদিঘি পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। শোনা যাচ্ছে অভিযোগ ওঠার পর সোমবারেই সাগরদিঘির গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান স্বপন মার্ডি বিডিও-র কাছে প্রধান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কিন্তু ভারতী হাঁসদা এখনও দু’দিক বজায় রেখেছেন বলে সুত্র মারফত জানা যাচ্ছে।

    সরকারি বিধি অনুসারে কোনও পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কিংবা জেলা পরিষদের যে কোনো কর্মাধ্যক্ষ তাঁদের পদে থাকাকালীন কোনও চাকরি করতে পারবেন না। যত দিন ওই পদে থাকবেন তত দিন তাদের চাকরি থেকে ছুটি নিতে হবে। কিন্তু এই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বপন ও ভারতী কেউই তা করেননি। দু’জনেই শাসক দলের হওয়ায় প্রশাসন সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

    স্থানীয় ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ওই দু’জনের কেউই ছুটি নেননি। বরং প্রতি মাসে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাইনে জমা পড়েছে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে। কী ভাবে সব জেনেশুনেও এটা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেল ? আমরা বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাচ্ছি।”

    পঞ্চায়েত বিধি অনুসারে প্রধানদের নিয়মিত পঞ্চায়েত অফিসে আসা বাধ্যতামূলক। না এলে তার জন্য ছুটি নিতে হয়। মাসে মাসে তাঁরা ভাতা পান ৩০০০ টাকা। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদেরও প্রতি মাসে কাজের জন্য সরকারি ভাতা দেওয়া হয় ৪০০০ টাকা।

    শিক্ষা দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে যে, ছুটি না নিয়েই গত আট মাস ধরেই নিয়মিত বেতন পেয়েছেন স্বপন মার্ডি ও ভারতী হাঁসদা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পূরবী দে বিশ্বাস বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই স্বপন মার্ডির বেতন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এত দিন তিনি যে বেতন তুলেছেন সেটাও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে ফেরত দিতে হবে। এই সময় কালের জন্য তাকে স্কুল থেকে ছুটির আবেদন করতে হবে। তবে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ভারতী হাঁসদা যে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা তা আমার জানা নেই। সাগরদিঘি পূর্ব চক্রের এসআইয়ের সঙ্গে কথা বলে সে ব্যাপারে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।”

    গোবর্ধনডাঙার তৃণমূলের সভাপতি ইস্তেয়াক আহমেদ বলছেন, “আইনগত ভাবে যা করণীয় সেটা তো তাঁদের অনেক আগেই করা উচিত ছিল। শিক্ষকতার পদ থেকে তাঁরা কেন ছুটি নেননি, সে দায় তাঁদেরই।’’