|
---|
নিউজ ডেক্স: ‘থ্রি ইডিয়েটস্ ‘ মুভির একটা ঘটনা মনে আছে! আমীর খান ওরফে রঞ্চো দুই বন্ধু ফারহান আর রাজুকে নিয়ে খিদে মেটাতে অ-আমন্ত্রিত অতিথি হয়েও ঢুকে পড়েছিল বিরু সাহস্ত্রাবুদ্ধির মেয়ের বিয়েতে। বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটে! অবাক হচ্ছেন! হওয়ার মতই ঘটনা। তবে বাস্তবটা একটু আলাদা, তবে অভিনব।
জাঁকজমক বিয়ের আসর। আলোর রোশনাই। দেদার খানাপিনা। এলাহি আয়োজন। কে-কাকে নজর রাখবে! সেই ভরসায়, অনাহুত হয়েই ভুরিভোজে ঢুকে পড়েছিল জনা ছয় অ-আমন্ত্রিত অতিথি। কিন্তু কপাল মন্দ। হাতেনাতে ধরা পড়ে বর বা কনে কোনও পক্ষেরই পরিচয় বলতে পারলেন না তাঁরা। সেক্ষেত্রে বিয়েবাড়ির কতৃপক্ষের বিচার অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত রফা হল, খেতে পারবেন, কিন্তু বদলে উপহার মূল্য দিতে হবে। যে টাকা বর-কনের হাতে নয়, সরাসরি জমা পড়বে গরিবদের চিকিৎসা করা একটি সংস্থার তহবিলে।
অবাক হচ্ছেন! তাহলে বলি, হ্যাঁ কলকাতায় প্রথম পরিবেশ সচেতন বিয়ের আসর বসেছিল শোভাবাজার রাজবাড়িতে। সেখানেই বুধবার রাতে এমন ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজস্ব আধিকারিক সুমাল্য ঘোষ ও অদিতি বিশ্বাসের বিয়ে বাড়িটি ছিল সম্পূর্ণ প্লাস্টিক বর্জিত। বিয়ের অনুষ্ঠানে সাময়িক আনন্দের আড়ালে পরিবেশের যে বিপুল পরিমাণে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতিকে রুখতে এই বিয়েতে অতিথিদের অবাক করেই একক ব্যবহার যোগ্য (সিঙ্গেল use ) প্লাষ্টিক / কাগজ /থার্মোকল নির্মিত থালা, জলের বোতল ,পানীয়ের কাপ কিছু ব্যবহৃত হয়নি। তৃষ্ণা মেটাতে ব্যবহার হয়েছে কাঁচের গ্লাস, কফির চুমুকের জন্যও বরাদ্দ ছিল কাঁচের পেয়ালা। পেপার ন্যাপকিনের জায়গায় উদ্ভিদ তন্তু থেকে নির্মিত রুমাল। অনুষ্ঠানের অন্তর সজ্জায় পুরোটাই পুনর্ব্যবহার যোগ্য ফুল ব্যবহৃত হয়, কাঁচা ফুলের ব্যবহার ছিল না। পচনশীল সবজির খোলা আলাদা পাত্রে জড়ো করে দিনের শেষে তার গন্তব্য হয় পুরসভার কম্পোস্ট প্লান্ট। অনুষ্ঠানের শেষে এত দশ জনের উদ্বৃতি খাবার সানন্দে বিতরণ করা হয় পথচারী দের। এভাবেই সমগ্র বিবাহ অনুষ্ঠানটিকে একটি মডেল বিবাহ উদযাপনের প্রচেষ্টা করা হয়েছে বর্জ্য শুন্য পদক্ষেপের মাধ্যমে। যা হয়তো এই শহরে প্রথম প্রচেষ্টা।
বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়েছিল পোস্ট কার্ডের আদলে। বিয়ে বাড়ির অন্যান্য সজ্জাতেও ছিল পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের বার্তা। কার্ডেই আন্তরিক ভাবে আমন্ত্রিত অতিথিদের বলে দেওয়া ছিল, “লৌকিকতা নয়, আশীর্বাদই প্রার্থনীয়। যাঁরা উপহার দিতে নিতান্তই ইচ্ছুক, তাঁরা উপহারের বিনময় মূল্য সমাজ কল্যাণে জমা দিতে পারেন।” সেই মতোই বিয়েবাড়িতে উপহার নয়, নগদে বা কিউ আর কোড স্ক্যান করেই সমাজকল্যাণে অর্থ দিলেন আমন্ত্রিতরা। বিয়েতে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আমন্ত্রিতদের অন্যতম, সাব ডিভিশনাল ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অফিসার শৈবাল মিত্র সাড়ে চার হাজার টাকা জমা দেন। তিনি জানান মানুষের কল্যাণ হয় সেইরকম সামাজিক উদ্যোগে তিনি সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন।
অনিমন্ত্রিতদের তরফেও জমা পড়েছে সতেরোসো টাকা। কারণ, চুপিসাড়ে অ-আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকেও নেওয়া টাকা জমা সমাজকল্যাণ খাতে। বিনা পয়সায় বিয়ের ভোজ খেতে ঢুকে, ধরা পড়ে গিয়ে এক জন নগদ টাকা দিয়ে ও বাকি দুই জন কিউ আর কোড স্ক্যান করে টাকা দিয়ে মুখরক্ষা করেন।
বিয়ে বাড়ি থেকে আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষদের জন্য চিকিৎসা চালানো ‘এগারো টাকার ডাক্তারবাবু’ নামে একটি সংগঠনের তহবিলে প্রায় তেইশ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। সংস্থার কর্নধার সুজয় রায় এই জানিয়েছেন যে এগারো টাকায় ডাক্তারবাবুর মত এই ধরনের অভিনব বিয়ের উদ্যোগও কলকাতায় প্রথম এবং আগামী দিনে অনেক শুভ বুদ্ধি সমপন্ন মানুষকে প্রেরণা যোগাবে।