আজ থেকে শুরু বাংরুয়ায় উরুসের মেলা ও উৎসব

 
হরিশ্চন্দ্রপুর,মহ:নাজিম আক্তার,২৭ নভেম্বর: আজ থেকে হরিশ্চন্দ্রপুরের বাংরুয়ায় শুরু উরুস মেলা ও উৎসব। সেন আমলের পিরবাবা হজরত শা খিজির রহমতুল্লা আলাইহের স্মৃতি বিজড়িত এই উরুস উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেন রাজবংশের রাজা লক্ষণ সেনের নাম। এবার ৭২ তম বছরে পড়ল এই মেলা। মেলা চলবে ২৭ ও ২৮ নভেম্বর দুদিন ধরে।

কথা হচ্ছিল উরুসের আয়োজক তথা উরুস কমিটির সম্পাদক হাজী আবদুল রহমান, সভাপতি শফিকুল হক , সমাজসেবক মোশারফ হোসেন ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জুলফিকার আলীদের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, তারা শুনেছেন একসময়ে বাংরুয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত গঙ্গার শাখা নদী। সেই সূত্রেই পাশের গ্রামের নাম গাংনদীয়া (গঙ্গানদীর তীরে)। বছরটা আনুমানিক ১১৭৮ থেকে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন সময়। বাংলায় তখন লক্ষণ সেন রাজত্ব করছেন। সেসময় একদিন নদীপথে পালতোলা নৌকায় বাংরুয়া গ্রামে এসে উপস্থিত হন পিরবাবা হজরত শা খিজির রহমতুল্লাহ। তখন এলাকার মানুষ প্রচন্ড অভাব অনটনে ভুগতেন। কথিত আছে, অসুখ-বিসুখ থেকে নানা সমস্যার সমাধান করে দিতেন পিরবাবা। শোনাযায় , বাংলায় তৎকালীন শাসক লক্ষন সেন স্বয়ং একবার সমস্যায় পড়ে এই পির হজরত শার শরণাপন্ন হন। সমাধান পেয়ে এবং পিরবাবার ভক্তি ও মহত্বে খুশি হয়ে লক্ষণ সেন তাঁকে ৫০০ বিঘা জমিদান করেন। জমিটি ছিল সম্পূর্ণ নিস্কর। সেই জমিতেই চিল্লাখানা গড়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন ধর্মের, বর্ণের মানুষরা পিরের আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য ছুটে আসতেন। যা এখনো সেই প্রথা বজায় আছে। তারপর হঠাৎ একদিন তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। আর কোনোদিন নিজের চিল্লাখানায় হাজির হয়নি। পিরবাবার যারা খিদমত করতেন, সেই খাদেম তথা ভক্তদের বংশধররা যেমন দুখুয়া ফকির ,জমসেদ আলী, মনুর আলী, শেখ কালুয়ারা আজও বংশ পরম্পরায় বাংরুয়া এলাকায় বসবাস করেন। রাজার দান করা জমির কিছু রয়েছে খাদিমদের হাতে। কিছুটা রয়েছে উরুস কমিটির কাছে। বহু বছর পরে বাসিন্দারা পির সাহেবের স্মৃতিতে এলাকায় উৎসব পালনের উদ্যোগ নেন। কমিটি সূত্রে জানা গেল, পিরবাবার জন্মদিন বা তিরোধানের বিষয়ে কিছুই জানা ছিল না। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান জমি থেকে তোলার পর পিরবাবার চিল্লাখানায় সিন্নি দেওয়া হত গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে। তারপর সেই পায়েস প্রসাদ ঘরে ঘরে বিলি করে নবান্ন উৎসব হত। তাই আমন ধান ওঠার পর অগ্রহায়ণের ১০ ও ১১ তারিখে উৎসব ও মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আয়োজক হাজি আবদুর রহমান, অলিওর রহমান ও মোশারফ হোসেনরা জানান, ১৯৪৭ সালে চন্ডীপুর মৌলানা পীর সাহেবের উদ্দেশ্যে বাংরুয়া গ্রামে হাজি খিসু সাহেবের মাজারে চাদর চড়ান। সে বছর থেকেই পির খিজির শাহ রহমতুল্লার স্মরণে এই উরস উৎসবের সূচনা হয়। বাংরুয়ায় এই উরুস মেলা এলাকায় সম্প্রীতির মেলা ও উৎসব হিসাবে পরিচিত। দুদিন ধরে মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে।

উরুস কমিটির সম্পাদক হাজী আব্দুর রহমান ও সভাপতি শফিকুল হক জানান, এবার উরুস মেলার বিশেষ থীম হচ্ছে পরিবেশ ও সামাজিক চেতনার মধ্য দিয়ে পীরবাবা হজরত শা খিজির রহমতুল্লাহকে স্বরন করা।
এবারের উরূস মেলায় কাওয়ালগণ থাকছে মুম্বাইয়ের স্বনামধন্য ইন্টারনেট জগতখ্যাত কাওয়াল অশোক জখমি ও ইন্দোরের ইউটিউব ও টিভি জগতের স্বনামধন্য কাওয়াল ছটে চাঁদ কাদরী।

    বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জুলফিকার আলী ও সমাজ সেবক মুসারফ হোসেনরা জানান, অতিরিক্ত পরিমাণে গাছ কাটার ফলে পৃথিবীর স্বাভাবিক ভারসাম্য দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর জীবকুল আজ ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। মানুষের পথ নিরাপত্তা সচেতনতার অভাবে রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে যানবাহনের চাকাই পিষ্ট হয়ে অকালে প্রাণ দিতে হচ্ছে ও অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ব্যবহারের ফলে নবসমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। তাই জনসমাজকে সচেতন করতে এবার বাংরূয়া কমিটি এক নতুন উদ্যোগ নিয়ে জনগণের কাছে সেই বার্তা দিতে চেয়েছে।

    জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে মেলায় আসার জন্য উরুস কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ আহ্বান জানিয়েছে।