সন্তানদলের উদ্যোগে পণবর্জিত কুসংস্কারমুক্ত অভিনব বৈদিক বিবাহ

ময়নাগুড়ি , ২ ফেব্রুয়ারি : পণপ্রথা আদিকাল থেকে এখনও আমাদের সমাজে বিদ্যমান । সেই পণপ্রথার দায়ে বধূহত্যা , নারী নির্যাতন এখনও আমাদের সমাজে ঘটে চলেছে সে কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই । সেই জায়গা থেকে বিরত থেকে সন্তানদলের উদ্যোগে বুধবার পণপ্রথা বিরোধী আলোচনা সভা ও পণবর্জিত ও কুসংস্কার মুক্ত একটি অভিনব বৈদিক বিবাহ হয় সাপটিবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব – বারঘরিয়া গ্রামে ।

    এদিনের পণপ্রথা বিরোধী আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের উত্তরবঙ্গ কমিটির কনভেনার ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সঞ্জিত দাস , উত্তরবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুশীল সেন , উত্তরবঙ্গ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় সরকার , জলপাইগুড়ি জেলার সংগঠক ও উত্তরবঙ্গ কমিটির সদস্য আশুতোষ চক্রবর্তী প্রমুখ । সঞ্জিতবাবু বলেন , ‘ আমরা এযাবৎ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ ও আসামের বুকে ২৫ হাজারের অধিক পণ বর্জিত কুসংস্কারমুক্ত অভিনব বৈদিক বিবাহ সম্পন্ন করে চলেছি । নারীকে বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখার অর্থ নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা । তাই সামাজিক দিক থেকে নারীর মর্যাদা দান ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে সন্তানদল বদ্ধপরিকর । পণপ্রথা , সামাজিক কুসংস্কার , ডাইনি প্রথা ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত ।’

    এদিন পূর্ব-বারোঘরিয়া গ্রামে মাধবডাঙ্গা-১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ভুষ্কাডাঙ্গা গ্রামের ভূপেষ রায়ের পুত্র পাপু রায়ের সঙ্গে সাপ্টিবাড়ি-২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব-বারোঘরিয়া গ্রামের রমেশ বর্মনের কন্যা কুন্তি বর্মনের পণবর্জিত কুসংস্কারমুক্ত অভিনব বৈদিক বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় । এই বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল না কোন ব্রাহ্মণ ও ক্ষৌরকার । ছিল না কোনো সানাইয়ের সুর , ছিলনা কোনো মন্ত্র উচ্চারণ , না ছিল লগ্নের বালাই । সেখানে শুধু দুটি মানব-মানবীর অন্তরাত্মার মিলন হয় । বালক ব্রহ্মচারী মহারাজের প্রতিকৃতির সামনে ‘রাম নারায়ন রাম’ মহানামের সঙ্গে মালা বদলের মাধ্যমে ছেলে মেয়ে উভয়েই অঙ্গীকারবদ্ধ হন । আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে প্রীতিভোজের ব্যবস্থা থাকলেও উপহারের কোনও বালাই ছিল না । যা অন্য পাঁচটা বিয়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল ।

    বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরা এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা সকলেই এই বিয়ের প্রশংসা করেন । ছেলে ও মেয়ের বাবা ভূপেশ রায় ও রমেশ বর্মন জানান , তারা উভয় পরিবারের সম্মতিতে এই বিয়ের আয়োজন করেন । তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিয়েও এই নিয়ম মেনে হবে ।