|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রাম: প্রয়াত হলেন ঝাড়গ্রামের প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা তপন সেন রায়। বুধবার কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৩। কিডনির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যা রয়েছেন।তাঁর কন্যা মধুজা সেন রায় বাম ছাত্র সংগঠন এস এফ আই এর প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং বর্তমানে সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য।মধুজা এবারের নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন। তপন সেন রায়ের প্রয়াণে গভীর শােক প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরাের সদস্য বিমান বসু ও পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। শােক প্রকাশ করেছেন পার্টির ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে। তিনি প্রয়াত তপন সেন রায়ের পরিবারকে সমবেদনাও জানিয়েছেন।শোক প্রকাশ করেছেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সিপিআইএমের অনেক বর্তমান ও প্রাক্তন নেতৃত্ব। ১৯৪৮ সালে বর্তমান বাংলাদেশে জন্ম তপন সেন রায়ের। খুব ছােটবেলাতেই তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়, তিনি ঝাড়গ্রামে চলে আসেন। ঝাড়গ্রাম সেবায়তন হাইস্কুলে পড়ার সময়েই ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। ছাত্র সংগ্রাম পত্রিকার একেবারে গােড়ার সময়েই তিনি ঝাড়গ্রামে পত্রিকার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি এসএফআই’র প্রথম রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় তিনি এসএফআই’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হওয়ার পরে মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি, সূর্যকান্ত মিশ্র তখন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন।
সারা ভারত কৃষক সভার নেতা হিসাবে তিনি কৃষক আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। পার্টির তৎকালীন ঝাড়গ্রাম লােকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন তিনি। পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন। মৃত্যুর সময়েও তিনি পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য ও ঝাড়গ্রাম জেলার সভাপতি ছিলেন। ছিলেন ঝাড়গ্রাম ফুটবল অ্যাসােসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অবদান রেখেছিলেন, ভালাে আবৃত্তি এবং নাটক করতেন। রূপক নামে নাটকের সংস্থা তৈরি করেছিলেন তিনি। জেলায় সিআইটিইউ নেতা হিসাবে নির্মাণ শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজও করেছেন।দীর্ঘসময় ধরে এল.আই.সি র এজেন্টদের সংগঠিত করার কাজ করেছেন।এজেন্টদের সংগঠিত করে ট্রেড ইউনিয়ন এর ছাতার তলায় এনে লড়াই আন্দোলনকে বৃহত্তর পরিসরে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।ছিলেন এল আই সি ইউনিয়নের পূর্বতন হাওড়া ডিভিশনের সভাপতি।পরবর্তী কালে খড়গপুর আলাদা ডিভিশন হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর সেখানে দায়িত্ব পালন করেন।এই ইউনিয়নের রাজ্যের সহ সভাপতি হিসাবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।পূর্ব ভারতীয় জোনাল স্তরেও নেতৃত্ব হিসাবে কাজ করেছেন।তাঁর জীবনাবসানে শােকজ্ঞাপন করেছেন গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়। শোক প্রকাশ করেছেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বাম ছাত্র আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন,শ্রমিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বর্তমান ও প্রাক্তন নেতৃত্ব। পাশাপাশি শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের নেতৃত্ব ও তাঁর গুণগ্রাহীরা। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন ছাত্রনেতা তপন সেনরায়ের মরদেহ এস এফ আই এর জেলা দপ্তরে পৌঁছালে তপন সেন রায়ের মরদেহে স্বাধীনতা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র লেখা,লাল তারকা খচিত শ্বেত পতাকায় ঢেকে শেষ শ্রদ্ধা জানান এসএফআই-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক প্রসেনজিৎ মুদি ,শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রয়াত সেন রায়ের কন্যা তথা এসএফআই এর প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায়, সংগঠনের রাজ্য সহসভাপতি ও ঝাড়গ্রাম জেলার সম্পাদক, সৌতম মাহাত, সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য ও ঝাড়গ্রাম জেলার সভাপতি দূর্গাশংকর গিরি , রাজ্য কমিটির সদস্য সুনেত্রা সমাজপতি প্রমুখ। তপন সেন রায়ের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বামপন্থী রাজনৈতিক মহলে।