শুভ্রজিতের মৃত্যুর জন্য দায়ী আমরা!

সঞ্জয় মুখার্জী : আমরাই এই সিস্টেমকে পুষে রেখেছি।বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু আগে কখনো দেখেন নি? প্রতিদিন চার হাজার মানুষ হাসপাতালের চিকিৎসা না পেয়ে এদেশেই মারা যায় ! হ্যা, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মেডিকেল জার্নাল জানাচ্ছে এই তথ্য।, তারা আরো জানাচ্ছে যে ৩০ লাখ মানুষ বছরে এইভাবেই মারা যায়। কেন এতকাল কেউ জানতেন না? তাহলে আপনারা এদেশের সেই উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষ, যাঁরা রোগ হলে চিকিৎসা করেন বেসরকারি কোনো হাসপাতালে বা নার্সিং হোমে, আর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু দেখলে কষ্টে কবিতা লেখেন কিংবা ফেসবুকে কেঁদে ভাসান বা বিপ্লব করেন শুধু গরম গরম কথা লিখে।

    আপনারা দেখেন নি এতদিন সরকারি হাসপাতালে কিভাবে মেঝেতে রোগী পরে থেকে থেকে অক্সিজেন না পেয়ে মারা যায়? কেউ প্রতিবাদ করেছেন? যাদের ভোট দিয়েছেন তাদের প্রশ্ন করবেন না, প্রশ্ন করুন নিজেকে, কেন নিজের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকা, বাসস্থান না পেয়েও এখনও মনে করেন কেউ আপনার নেতা? কোনো দল আপনার দল? এখনও বিশ্বাস করেন আপনার পছন্দের দল ক্ষমতায় এলেই সব সমাধান হয়ে যাবে। মানুষ হাসপাতালে বেড পাবে। চিকিৎসা পাবে। তাহলে ভারতের সব রাজ্যে এরকম করেই চিকিৎসা না পেয়ে মরে কেন?

    ভাবুন।আপনার স্বপ্নের ভালো সুন্দর উচিত বাক্য কতটা মিথ আর কতটা মিথ্যে। জনগনএভাবেই নিজে একটা মিথ্যাকে নিয়ে চলতে ভালোবাসেন, আর কেউ বিনা চিকিৎসায় মরছে দেখলে হটাৎ করে কেঁদে ওঠেন!! এই করোনা অতিমারির গত চারমাসে এরকম কত ঘটনা তো ঘটেছে ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি,, ভোপাল… আরো কত শহরে। এই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কিভাবে একটার পর একটা হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে কোথাও ভর্তি হতে না পেরে মারা গেছেন কত বৃদ্ধ, কত শিশু, কত সন্তান সম্ভবা? খবর রাখেন তাঁরা কত জন? যান গুগোল খুঁজুন পেয়ে যাবেন।

    ভেবে দেখেছেন, স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও আমাদের দেশে টিবি তে, অপুষ্টিতে, হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় বিশ্বের সব চাইতে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে? বিশ্বের সব চাইতে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়? কোনো দিন নিজেকে প্রশ্ন করেছেন কেন এতগুলো লোক মরার পরেও আপনি তাদেরকেই ভোট দেন!আছে আপনার সামনে কোনো বিকল্প রাজনৈতিক দল? যার শাসনে এমন ঘটনা ঘটে না। বা ঘটে নি বা ঘটবে না । তাহলে বলুন, এদেশের কোন রাজ্যে ঘটে না বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, হাসপাতালের অবহেলায় মৃত্যু?

    শুভ্রজ্যোতির মৃত্যু যদি আপনাদের ঘুম ভাঙিয়ে থাকে তাহলে জেনে রাখুন পশ্চিমবঙ্গে শুধু না, সকল রাজ্য মিলিয়ে এই দেশে প্রতি বছর ১৬ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুবিধাটুকু পায় না বলে বিনা চিকিৎসায় তাদের মরতে হয়, ভারতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু নিয়ে প্রকাশিত সম্পাদকীয় প্রবন্ধে এই পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বিশ্বের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মেডিকেল জার্নাল Lancet এরপর কেউ আছেন যিনি বলবেন, হ্যা আমি শুভ্রজিতের এই অকালে ঝরে যাওয়ার প্রতিবাদে মিছিল করব, সরকারের কাছে জানতে চাইব কেন এভাবে একটা কিশোরের প্রাণ যাবে? গাফিলতির দায় কার সেটা খুঁজতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে না? আজ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আমজনতার স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দাবি নিয়ে সরব হতে চেয়েছে? আমজনতা কি এখনও বুঝেও বোঝে না যে তাদের জন্য কোনো দল নেই। কেউ ভাবে না।

    শুভ্রজিত এই সিস্টেমের বলি। কাল এভাবেই বলি হতে পারি আমি, আপনি, আমরা যে কেউ। তাহলে ভাবতে শুরু করুন, এই সিস্টেমকে ধরে রেখেছে কে? আমরা। এখানে শাসককে গালি দিতে পারে বিরোধী দল — সাধারণ মানুষকে উস্কানি দেওয়ার জন্য, যেটুকু এখনও চলছে সেটুকুও ভেঙে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল তাদের উদ্দেশ্য।বিরোধীরা সমালোচনা করুক, কিন্তু আগে দেখাক তারা কোনো একটা রাজ্যে প্রমাণ দিয়েছে যে তাদের শাসনে এমনটা ঘটে না।তাই সমালোচনা হোক, কিন্তু সেটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে হোক। মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ভোটের রাজনীতিতে মানুষ ঠকানোর কৌশলে জনগনকে যতকাল ছাগলের বাচ্চা বানিয়ে রাখা যাবে, ততকাল জনগন বাঁট পাওয়ার আশায় পিছন পিছন লাফাতে লাফাতে চলতেই থাকবে।ততই শুভ্র জ্যোতির মতো বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হতেই থাকবে।

    ক্ষমতায় যিনি আছেন এখন তাঁর উচিত উদ্যোগ নিয়ে প্রমাণ করা যে এরকম মৃত্যু তাঁর সরকার চায় না। তাহলে সরকারের ক্ষমতায় থেকে তিনি কেন শাস্তি দিচ্ছেন না প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করে ।অবশ্যই সেটা হোক প্রমাণ দেখিয়ে। চেষ্টা করে ভেবে দেখুন যে গত ৭৩ বছরে এসব কোনো আমলেই হয় নি,সেটা কি আজ রাতারাতি হয়ে যাবে? জনগণ দাবি তুলুক, আমরা চাই স্বাস্থ্য শিক্ষা জীবিকা কর্মসংস্থান। কবে ভোট হয়েছে এসব দাবিতে? যে রাজনৈতিক দল স্বজনপোষণের সুবিধার দেবে তাকে সবাই চায়।জনগণের নিজের নীতির ঠিক আছে? নপুংসক মানসিকতায় তাঁদের পা ধরে নিজের কার্যোদ্ধার করাকেই বুদ্ধিমানের লক্ষণ মনে করে, তাই ব্যক্তি পাওনার হিসেবে তো ভোটটা দিতে চায় জনগণ।

    তখন কি হাসপাতালে বেড না পেয়ে মরা শুভজ্যোতির মতন হাজার হাজার বাংলার মানুষের কথা মনে পড়বে? এই রকম অসংখ্য ঘটনা তো মানুষ কংগ্রেস আমলে দেখেছে। এমন ছিল সিপিএম আমলে ও। আছে টিএমসি আমলেও। ভবিষ্যতেও থাকবে… যে দলই রাজ্য চালাক। এই মরেছে, জানেন তো দেশের সব দলকে গালি দিলে লোকে কি ভাবে? ভাবে আমিও একজন আরবান নকশাল। কারণ , সত্যি কথাটা বলা মানেই রাষ্ট্র দ্রোহী।

    এখানেই তো সব শেষ! তাই রাজার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পরম কর্তব্যে কোনো একটা দল করতেই হবে।সে দল যতই মানুষের স্বার্থে অকর্মণ্য কিংবা দুর্নীতিবাজ হোক। সেটা আমাদের চোখে পড়ে না।কারণ সোনার গরু হলো রাজনৈতিক দল। তাঁর বাঁট চাই আমরা জনগণ।আমরা চাই তাই নাটক চলতে থাকে।চলতে থাকে এভাবেই শুভ্রজিতের জন্য কুমিরের কান্না।কেউ চায় না প্রকৃত পরিবর্তন। সত্যিই চান? তাহলে আসুন সারা দেশের সাধারণ মানুষ এক হই। একটা স্মারক লিপিতে লিখে জমা দিই। আমাদের জন্য চিকিৎসা চাই।আমরা কেউ বিনা চিকিৎসায় মরতে চাই নাযে পারবেন সেই নিশ্চয়তা দিতে আমরা ভোট তাঁকেই দেব।

    কেউ বলতে পারবেন এই কথা? যাঁরা রাজনীতির অঙ্কে চলেন, তাঁরা পারবেন না।তাঁরা চান ক্ষমতা। আমরা কি চাই সেটা কে শোনে???????তারপরেও আমরা তাদের জন্য গলা ফাটাবো। তাহলে কি ভুল বললাম? শুভ্রজিতের মৃত্যুর জন্য দায়ী আমরা! আমরাই এই সিস্টেমকে পুষে রেখেছি।হ্যা, দায়ী আমরা।আপনিও এই সিস্টেমের শিকার হলেও একজন পৃষ্ঠপোষক। তাই সত্যি বলাটা বোকামি। নাটকের নতুন মঞ্চ হোক ফেসবুক।