|
---|
মুবারক মন্ডল : আর পাঁচটা দিনের মতই আমার ঈদের দিন কাটে। অভ্যাস মত সকালে ঘুম ভাঙে। তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন জামা পরে ঈদগাহে দিকে রওনা দিই। সকলের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরি। এরপর ঈদের আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করি। শত চেষ্টা করেও ঈদের আনন্দ খুঁজে পায় না। অন্যান্য দিনের মতই কেটে যায় সারা বেলা। ছোট বেলায় ঈদ কবে হবে ৭ দিন আগে থেকে প্রস্তুতি চলত, আর বায়না কি হবে তার ফন্দি ফিকির তো থাকতই। তখন বুঝতামনা ঈদ আনন্দ সারা বিশ্বব্যাপী এর সাথে দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য জড়িত আছে। সঙ্গে আছে বিশ্ব বানিজ্য এবং মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্র শ্রেণীর কিছু বাড়তি আয়ের উপায় ও পরিবারের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনা। আমাদের ঈদগুলো খুব নিরানন্দ। অথচ মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দের দিন হওয়া দরকার ছিল ঈদের দিন। পারিবারিক অনেক অনুষ্ঠানে ঈদের দিনের চেয়ে বহুগুণ আনন্দ হয়। পহেলা জানুয়ারীতে বিপুল উচ্ছ্বাস ও উৎসাহ দেখা যায় সর্বত্র। অথচ ঈদের দিন থাকে প্রায়শই নিস্প্রাণ। কারো জন্মদিনে যে আনন্দ ও হাসি থাকে পরিবার জুড়ে, ঈদেও কি তা-ই থাকে? জন্মদিন বা বিয়েকে কেন্দ্র করে আনন্দ উল্লাস সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। মানুষের আনন্দ যেন ঈদের চেয়েও বেশি এইসব দিনে। আমাদের অনেক জাতীয় দিবসেও ঈদের চেয়ে বেশি আনন্দ হয়। অথচ মুসলিমদের আনন্দিত থাকবার দিন প্রধানত দুইটি, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘প্রতিটি জাতির আনন্দ-উৎসব আছে। আর আমাদের আনন্দ-উৎসব হলো দুই ঈদ। অথচ কি বিপুল কোষ্ঠকাঠিন্য সর্বত্র। কী কারণে আমাদের ঈদগুলো এমন নিস্প্রভ হয়ে উঠলো তার কারণ খুঁজে বের করা হয়তো খুব কঠিন হবে না।
আমাদের সেকুলার ও উপনিবেশী মন এই নিস্প্রভ ঈদের পেছনে দায়ী অনেকটাই। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও সামাজিক উদ্যমের অভাবের কারণও নিহিত আছে এতে। যদিও, ঈদকে কেন্দ্র করে বিপুল ব্যবসা-বাণিজ্য লক্ষণীয়, কেনা-বেচায় আগ্রহেরও খামতি নেই কোথাও। তারপরও ঈদের দিনগুলো এমন নিরস-নিস্পৃহ কেন যায়? ঈদের দিন আসবার আগেই যেন ঈদ ফুরিয়ে যায়! দিনটিকে সাজাবার যে রুহানি চেতনা ও কর্তব্যবোধ তা কেন উবে গেল, মিলিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, ভাবা দরকার। ইসলাম সোনালি যুগে ঈদ নিশ্চয় এমন নিরানন্দ ছিল না। এমনকি, সুলতানি আমলে বা মোঘল আমলেও তো ঈদের চাকচিক্য ও জাঁকজমকের হদিস পাই। বৈধভাবে আনন্দ করবার অজস্র উপাচার আছে। পরিকল্পনা করা উচিত কীভাবে ঈদকে পরিবার ও সমাজের প্রধান আন্দোৎসবে পরিণত করা যায়। হয়তো এই করোনাকালে সম্ভব নয় আনন্দ-পরিকল্পনার সবটুকু বাস্তবায়ন করা। কিন্তু এই দুর্বিপাক তো চিরজীবী নয়। চিন্তাটুকু অন্তত জারি থাকুক। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উদ্যোগে ঈদ হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে আনন্দময় অনুষ্ঠান। ঈদকে অন্যান্য সকল অনুষ্ঠানের চেয়ে আনন্দময় করে তোলা আমাদের ঈমানি দাবি। সমাজের প্রতি প্রান্তে ঈদের রুহানি আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া মুসলিম সমাজের অবশ্য কর্তব্য। ঈদের সালাত, ছাদাকায়ে ফিতর, স্বজনদের পোশাক-আশাক দেওয়া ছাড়াও আরো কি কি ভাবে ঈদকে আনন্দময় করা যায় এটি ভাবা দরকার! ঈদে আনন্দ করবার ও আনন্দকে ছড়িয়ে দেবার কার্যকরী করবার জন্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে,
★বেলুন দিয়ে বা অন্যভাবে সবাই মিলে বাড়ি সাজানো যেতে পারে।
★বন্ধু বান্ধবীদের বই উপহার দেওয়ার চর্চা শুরু করা যায়।
★মিষ্টি বিতরণের আয়োজন করা যায়, দেওয়া যায় প্রতিবেশীকে।
★ঈদের দিন ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যেতো পারে।
★মসজিদের সামনে বাচ্চাদের খেলাধুলার আয়োজন করা যেতে পারে। অথবা সর্বসাধারনের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা যেতে পারে।
আমাদের নারীরা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। পরিবারের পুরুষরা যাতে ইবাদত করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতেই তাঁদের দিন যায়। রান্নাঘরে যায় অধিকাংশ সময়, বাচ্চার পালনে যায় দিনের পুরোভাগ। এ ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষদের এগিয়ে আসতে দরকার। নারী-পুরুষ সম্পর্কের রূপান্তর ছাড়া পরিবার পরিসরে কোন আনন্দ উদযাপন সম্ভব নয়। দরিদ্র কৃষক আর শ্রমজীবী মানুষেরা যাতে ঈদের দিনগুলোকেই বছরের সেরা দিন হিসেবে উপভোগ ও উদযাপন করতে সেই জন্যে জনপ্রতিনিধিদের প্রশাসনিক উদ্যোগে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
মূলকথা হলো, ঈদকে ফিরিয়ে আনতে হবে বছরের শ্রেষ্ঠতম আনন্দের দিন ও উৎসব হিসেবে৷ যদিও বোঝাই যায়, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার “গুণগত রূপান্তর” ছাড়া ঈদকে তার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। ঈদকে প্রধানতম ও বৃহত্তম আনন্দের দিন হিসেবে জারি করা ও জারি রাখা ইসলামের সভ্যতাগত প্রকল্পের সাথে জড়িত। তবুও, সাধ্যে যতটুকু কুলোয় তার সবটুকু দিয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে কীভাবে ঈদকে সকল মুসলমানের জন্যে সবচেয়ে উপভোগ্য ও সর্বাধিক আনন্দময় দিবস করা যায়।