পড়াশুনো চালানোর ক্ষেত্রে ইচ্ছেটাই সবচেয়ে জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক:- পড়াশুনো চালানোর ক্ষেত্রে ইচ্ছেটাই সবচেয়ে জরুরি। প্রতিকুলতা কাটিয়ে কীভাবে পড়াশোনা করা যায়, তার উদাহরণ বীরভূমের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী টুম্পা দাস। কড়িধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিপুর গ্রামের এই টুম্পা দাস কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল এন্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী। আর পাঁচজন পরীক্ষার্থীর মতোটুম্পাও এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তবে টুম্পার লড়াইটা অন্যান্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ২০১৯ সালে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত হেতমপুরের কেন্দলো গ্রামে টুম্পার বিয়ে হয়। পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের এক বছরের মধ্যে বাড়িতে আসে ফুটফুটে এক সন্তান। কিন্তু সেই সন্তানের বয়স যখন তিন মাস সেই সময় টুম্পার স্বামী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। এরপর টুম্পার বাবা-মা টুম্পাকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। বাবা হলধর দাস পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মাছ বিক্রি করেন। এই পেশা থেকে রোজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয় তার। টুম্পার মা একজন গৃহবধূ। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ধারদেনা করে টুম্পার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল৷ মেয়ের বিয়ের পর দুর্ঘটনায় জামাইয়ের মৃত্যু যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত ৷ তবে এসবের পরেও টুম্পার পরিবার, স্কুলের শিক্ষকরা এবং টুম্পা হাল ছাড়েননি। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টায় টুম্পা ফের স্কুলে ফিরে। এরপরই শুরু হয় তার অদম্য লড়াই। কোলের সন্তানকে মানুষ করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাঁথাস্টিচ সেলাইয়ের কাজ শুরু করে সে। সেই সকল কাজ করা, সংসার সামলানো সবকিছুর পর নিজের পড়াশুনা চালিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে সক্ষম হয় টুম্পা। উচ্চমাধ্যমিকে ভালোভাবে পাস করে টুম্পা আগামীদিনে উচ্চতর পাঠ নিতে চায় এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তবে আর্থিক ভাবে পিছিয়েথাকলেও সে নিজে লড়াই করেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা টুম্পার এই অদম্য লড়াই দেখে আপ্লুত। তারা মনে করছেন, এই মেয়েরাই সমাজের আইকন। যাদের দেখে অন্যান্যরাও এইভাবে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত হবেন। শিক্ষক শিক্ষিকারা টুম্পার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন।