নারী শক্তি

নারী শক্তি

     

     

     

     

     

    বাবলু হাসান লস্কর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা : দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চাম্পাহাটির এক ছোট্ট পরিবারের শ্যামল ও ছন্দা সরদারের সন্তান চিত্রলেখা সরদার । চাম্পাহাটি অমিয়বালা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে কালিকাপুর রাম কমল বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন । পরে মায়ের স্বপ্ন পূরণে ডাক্তারী প্রবেশিকা পরীক্ষায় ও উত্তীর্ণ হওয়া এবং পরবর্তীতে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর মেডিসিনে এক বছরের হাউস অফ সিট করেন । পরে হলদিয়া পোর্ট হাসপাতালে চাকরি শুরু করেন । এখানে বেশ কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসন নেন । পরে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা গোসাবা রুরাল হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন । কর্মজীবন শুরু করতে গিয়ে প্রথমদিকে দেখেন হাসপাতাল চত্বরে আগাছায় পরিপূর্ণ এবং সাধারন মানুষ জন হাসপাতাল আসার নামই করত না । ঠিকমত পরিষেবা পাওয়া যেত না, এবং তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল। হাসপাতালে ঠিকমতো পরিষেবা না পাওয়ায় তারা হাসপাতাল মুখি ছিল না ।আর সেই সময়ে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ,স্থানীয় বিধায়ক, সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে বিভিন্ন ভাবে অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্প করার পর আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষ হাসপাতাল মুখি হতে শুরু করে । যেখানে প্রতিদিন আউটডোরে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী আসত, বিভিন্নভাবে প্রচার করার পরে গড়ে সাড়ে তিন শতাধিক রোগী আসতে শুরু করলো। গ্রামের গর্ভবতী মায়েদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব করানো যেত না । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়িতে প্রসবের প্রবনতা থাকায় তথা কথিত সভ্য সমাজ থেকে সত যোজন দূরে । বাড়িতে প্রসব হওয়ায় সেখানে মা ও শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা । অধিকাংশ সময়ে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটতো । প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন কে হাসপাতালে প্রসব করানো হত । পরে তা বেড়ে মাসে ১৫০ অধিক হয়েছিল ।বিভিন্ন জায়গায় প্রখর রোদে কিংবা বৃষ্টি ভিজে, পায়ে হেঁটে , ইঞ্জিনভ্যানে কোথাও বা ছোট্ট নৌকা করে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে সচেতনতা প্রচার ও মেডিকেল ক্যাম্প করতেন । প্রচার ও প্রসারের ফলে এই মুহূর্তে এলাকার মানুষ জন হাসপাতাল মুখী হয়েছেন । যেখানে দৈনন্দিন আউটডোরে ৫০ থেকে ১০০ জন রুগি আসতো এখন সেখানেই দাঁড়িয়েছে ৪০০ অধিক । চিত্রলেখা পরে ওখান থেকে স্থানান্তরিত হন জয়নগর রুরাল হাসপাতালে । করণা প্রাক্কালে এক রাতে ৩ নবজাতকের জন্ম হয়, ওই নবজাতক গুলি জন্মের কয়েক ঘন্টা পর প্রচন্ড কান্নাকাটি শুরু করে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না । প্রথম সন্তান হওয়ায় মায়েরা ঠিক মত বুঝতে পারেনি কেন শিশুরা এমন করছে । আর সেই সময়ে ডিউটি করছিলেন চিত্রলেখা সরদার । তিনি দুধের শিশুকে বাড়িতে রেখে এখানে বেশ কয়েক দিন অনবরত ডিউটি করছিলেন। ছোট শিশুকে ফেলে রেখে আসা চিত্রলেখা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ডিউটি করছিলেন । সেই মুহূর্তে প্রশুতি ওয়ার্ডে কিছু নবজাতকের কান্না তার হৃদয়কে দোলা দেয় । তৎক্ষনাত তিনি লেবার রুমে বসে সেই সমস্ত শিশুদের নিজের বুকের দুধ খাওয়ানোর সেই স্পর্শকাতর মুহূর্তের ছবি এক নবজাতকের মায়ের মোবাইলে বন্দি হয়ে যায়। কিছু ক্ষনের মধ্যে সেই ঘটনা আগুনের ফুলকির মতো ছড়িয়ে পড়ে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া পড়ে যায় । এ এক অনন্য নজির, এ প্রসঙ্গে চিত্রলেখার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছিলেন আমি যেটা করেছি (মায়ের) দৃষ্টি কোণ থেকে করেছি । তারই পরশে গ্রামীণ হাসপাতালে সর্বক্ষণ রুগিদের আনাগোনা, সুন্দরভাবে পরিষেবা দেওয়ায় এলাকাবাসী বেজায় খুশি এমনই ডাক্তার মেডাম আমাদের চাই ।