আম্ফান ত্রাণে কেন্দ্রের দ্বিচারিতা, জবাব চাইছে বাংলার মানুষ

 

    প্রতিবেদক  মোহাম্মদ রিপন-

    নতুন গতি নিউজ ডেক্স- সূর্য তখন মাথার উপর ঘড়ি জানান দিচ্ছে তার প্রাপ্তির কাঁটা 12 টার ঘরে পৌঁছে গেছে 56 ইঞ্চি ছাতি ওয়ালা একটা মানুষের মিথ্যা গর্জনে গর্জে উঠল বিহারের মাঠ। অসহায় মানুষের সামনে “মেরে পেয়ারে ভাইয়ো ওর বেহেনো” বলে চেঁচিয়ে ওঠা লোকটি একের পর এক গরু-ছাগল কেনার মত প্যাকেজের বুলি আওড়াতে লাগলেন হ্যাঁ আপনি ঠিকই ধরেছেন আমি 2015 সালের 18 আগস্ট বিহার ভোট প্রচারের কথাই বলছি কিন্তু আম্ফান তাণ্ডবে তছনছ হয়ে যাওয়া বাংলার জন্য কখনোই দেখলাম না 56 ইঞ্চির ব্যক্তিটাকে বাংলাকে পুনর্জীবিত করতে একটা বড় প্যাকেজ ঘোষণা করতে!

    বিষের রাতের আম্ফান তাণ্ডব বাংলার জন জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। ঝড়ের আঘাতে বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে পথের পাশে, শেষ সম্বলটুকুও সর্বনাশা আমফান নিয়ে গেছে। গৃহহীন,খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন বাঙালি যখন সর্বহারা ঠিক তখনই বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বাংলার বুকে শেষ পেরেকটি মারেন। মানুষ যখন অসহায় বাংলার রাজ্য প্রশাসনিক ভবন থেকে সোশ্যাল সাইটে টুইট করে বাংলার ক্ষতিকে নূন্যতম ক্ষতি বলে তুলে ধরেন কেন্দ্র সরকারের ময়না পাখি। একই সুরে সুর মিলিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তার বক্তব্য বাংলার এমন কোনো ক্ষতি হয়নি যে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করতে হবে আমফান ঝড়কে। বাঙালির ভোটে জিতে বিজেপির রাজ্যের 18 জন এমপি নিখোঁজ। অন্নহীন,বস্ত্রহীন,গৃহহীন বাঙালির পাশে তাদের দেখা না গেলেও সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়াতে তাদের জুড়ি মেলা ভার।

    ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে বাংলার জন্য মাত্র এক হাজার কোটি টাকা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। যেটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।বাংলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে এক হাজার কোটি টাকা “সমুদ্রে শিশির পড়ার মতো ব্যাপার”।
    কেন্দ্র সরকারের এক হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করার পরে বাংলার নাগরিক সমাজ কেন্দ্রের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । দেশের বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী তোপ দেখে কেন্দ্র সরকারকে বলেন বাংলাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র সরকার মানবিক হোন। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম ও সম্পাদক তন্ময় ঘোষদের কথায় এরা বাংলাকে চাই, কিন্তু বাঙালিকে নয়। বাঙালি বিদ্বেষী মনোভাবাপন্ন মানুষগুলো বারবার বঞ্চিত করছে বাংলাকে। বোধ বুদ্ধি নাগপুরের হাটে বন্ধক রাখা মানুষগুলো কখনোই বাংলার ভালো চাইনা। বরানগর নাগরিক সমাজের যোদ্ধা বিশ্বজিৎ হাজরা বলেন উত্তর দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার মানুষ আজ বড় অসহায়। 99% মানুষের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার দ্রুত এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াক। এই মুহূর্তে গুরুচণ্ডালী, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ, প্রান্তজন, বরানগর নাগরিক সমাজ, আলো ফাউন্ডেশন তাদের সাধ্যমত দক্ষিণ বঙ্গের জেলা গুলির পাশে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গ্রাউন্ড রিপোর্ট বলছে

    উত্তর ২৪ পরগনার যোগেশগঞ্জ-হেমনগরে দ্বীপের সরদারপাড়া ঘাটের কাছে মাধবকাঠি অঞ্চলটি রায়মঙ্গলের জল ঢুকেছে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা-পরিস্থিতিতে রয়েছেন প্রায় ২৫০টি পরিবার।
    রূপমারী এলাকাতে দ্রুত ৫০-৬০টি পরিবারের পাশে দ্রুত দাঁড়ানো প্রয়োজন।
    সব থেকে খারাপ অবস্থা চকপাটলী, মহিষপুকুর, পাটলি খানপুর অঞ্চলটিতে। মাটির ঘর-বাড়ি ভেঙেছে। বিস্তীর্ন এলাকা জলের তলায়। বহু মানুষ উঁচু রাস্তার ওপর অথবা ফ্লাড-সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। ৪০০-৫০০ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাব ব্লকটা বেশ কয়েকটা দ্বীপ নিয়ে তৈরি। এই ব্লকের অন্ততঃ চারটে জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে … পুঁইজালি, জটিরামপুর, রানীপুর, মন্মথনগর। আমাদের টিম চুনোখালী হয়ে ভায়া সম্ভুনগর মন্মথনগর যেতে পেরেছিল। গোটা পথটা যাওয়ার জন্যে গাড়ির রাস্তা নেই। নদি পেরোতেই হয়। মন্মথনগরে বাঁধ ভেঙেছে এক কিলোমিটার জুড়ে।

     

    জোড়াতালি দিয়ে বানানো বাঁধ। ভাঙার পর তার কঙ্কালসার চেহারা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়েছিলো। প্রায় ৬ হাজার বিঘে জমি জলমগ্ন। মানে নোনাজলের তলায়। ফসল নষ্ট হয়েছে, আগামী কয়েকবছর ফসল হবে না। গরু বাছুর মারা গেছে। পুকুর খালের মাছ মরে ভেসে উঠছে ব্যাপকহারে। আনুমানিক ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে। নদীর ঠিক পাড়েই যাদের বাস তাদের সর্বস্ব গেছে। সে সংখ্যাটাই ৫০-৬০ জনের আশপাশে হবে। যেহেতু ওই এলাকায় কোনো ফ্লাড সেন্টার নেই, তাই তাদের যাওয়ার কোনো জায়গাও নেই। ঝড়ের রাতে একটা সরকারী ফার্ম হাউসে তারা সাময়িক আশ্রয় নিয়েছিল। রাতে খিচুড়ি খাইয়েছিল পঞ্চায়েত। ব্যাস এটুকুই। এখনো ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়নি সরকারপক্ষ। এছাড়াও যাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়নি তাদের অন্যান্য ক্ষতিও কম নয়। গাছ পড়েছে, চাল উড়ে গেছে, নৌকো ডুবে গেছে, দোকানের জিনিস নষ্ট হয়েছে। কারো কারো ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক।