সেদিনের বিপ্লবীদের আশ্রয় স্থল আজ কুটির শিল্পে পরিণত

মহম্মদ রিপন,বীরভূম : 

    শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গেলে বিশ্বভারতী শ্রীনিকেতন দেখার পাশাপাশি পর্যটকরা দেখে নিতে পারেন আমার কুটির৷ ৯৫ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত শ্রীনিকেতনের গ্রামোন্নয়নের কর্মপদ্ধতির আদর্শে ১৯২৩ সালে এটি গড়ে তোলেন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী সুষেণ মুখোপাধ্যায়৷ এটি ছিল এক সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মগোপনের জায়গা। ব্রিটিশ আমলে রাজবন্দিদের আশ্রয়স্থল তথা পুনর্বাসনের জায়গা৷ যেটি পরবর্তী কালে হয়ে উঠেছে রাজ্যের কুটিরশিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷

    আমার কুটিরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আশ্রয়দানের বিষয়টি ১৯৩২ সালে পুলিশের নজরে আসে৷ তারই জেরে সুষেণ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন৷ তখন আমার কুটিরের কাজকর্ম বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল৷ কারাগারে থাকার সময় সুষেণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় পান্নালাল দাশগুপ্ত, মণি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে৷ ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্তি পেলে বেশ কিছু বিপ্লবী এসে আমার কুটিরে বসবাস শুরু করেন৷ গড়ে তোলেন কমিউন৷

    তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ফের কিছু বিপ্লবী আমার কুটির ছেড়ে চলে গিয়ে গ্রামে গ্রামে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন৷ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় এখানকার প্রাক্তন বিপ্লবীদের অনেকেই যোগ দেন৷

    আমার কুটিরের কাজকর্মের কথা সেই সময় ছড়িয়ে পড়ায় তা দেখতে পরাধীন ভারতে সুভাষচন্দ্র বসু, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বদের পদধূলি পড়েছে৷ স্বাধীনতার পরবর্তী যুগে বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এটি পরিদর্শনে এসেছেন৷ ১৯৭৮ সালে পান্নালাল দাশগুপ্তের উদ্যোগে ‘আমার কুটির সোসাইটি ফল রুরাল ডেভলপমেন্ট’ নামে নথিভুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় পরিণত হয়৷ তখন থেকেই আমরা কুটির গ্রামীণ হস্তশিল্প বিকাশে প্রশিক্ষণ, উৎপাদন এবং বিক্রিয়ে সহায়তা দান করে আসছে৷
    সম্প্রতি চর্মশিল্পের পাশাপাশি বাটিক-বুটিকের সমাহারে পরিপূর্ণ এখন ‘আমার কুটির’৷ পর্যটকরা এখানে এসে শো-রুম থেকে তাদের তৈরি জিনিস পত্র যেমন কিনতে পারবেন তেমনই সুযোগ থাকছে ওই সব জিনিসপত্র কেমন করে তৈরি করা হচ্ছে তা কারখানায় গিয়ে নিজের চোখে দেখার৷ চর্মশিল্পজাত পণ্য, কাঁথা স্টিচের শাড়ি, বাঁশের ক্রাফট, ডোকরা এবং হস্তশিল্প নানা ধরনের জিনিস পাওয়া যায়৷ শো-রুম খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত৷ কেবল মাত্র ৫অথবা ৬ জুন প্রতিষ্ঠাতা সুষেণ মুখোপাধ্যায় মৃত্যুদিবস উপলক্ষে ছুটি থাকে৷
    পাশাপাশি এখানে এলে দেখার জন্য আকর্ষণীয় বিষয় হল একটি ইতিহাস-সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। যেখানে গেলে দেখতে পাবেন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে কিছু পুরনো আলোকচিত্র। ওই সংগ্রহশালায় রয়েছে সুভাষচন্দ্র বসু, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ‘আমার কুটির’ পরিদর্শনের সচিত্র বর্ণনা। তাছাড়া আমার কুটির চত্বরে প্রায়ই বাউল গানের ব্যবস্থা থাকে যা পর্যটকদের কাছে উপরি পাওনা৷যেতে চাইলে চলে আসুন বোলপুর – শান্তিনিকেতনে৷ রেলপথ এবং সড়কপথে যাওয়া যেতে পারে সেখানে৷ বোলপুর শহরে এখন পরিচিত নাম আমার কুটির ফলে রিক্সা টোটো গাড়ি করে সেখানে পৌঁছে যাওয়া সহজ৷ কলকাতা থেকে সড়কপথে আমার কুটিরের দূরত্ব প্রায় ১৮০ কিমি এবং বোলপুর স্টেশন থেকে ৭ কিমি দূরে অবস্থিত এটি