আরোগ্য সেতু অ্যাপ নাকি রাষ্ট্রের নজরদারি করার যন্ত্র: আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে তো!

মোহাম্মদ মারুফ,কলকাতা: কন্টেনমেন্ট জোনে থাকা সমস্ত নাগরিকদের ক্ষেত্রে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড সম্প্রতি বাধ্যতামূলক করেছে ভারত সরকার।সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও যাতে এই অ্যাপ ডাউনলোড করে, প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।বিরোধী দলের নেতারা অভিযোগ জানিয়েছেন যে আরোগ্য সেতু হল জনসাধারণের উপর রাষ্ট্রের আধুনিক নজরদারির একটা ব্যবস্থা।

    এটি ব্যবহার করলে নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তা অসুরক্ষিত বা চুরি হতে পারে বলে সম্প্রতি আশংকা প্রকাশ করেন রাহুল গান্ধী। এবার তার সেই আশংকাকেই মান্যতা দিলেন এলিয়ট আন্ডারসন নামের এক এথিক্যাল হ্যাকার। তিনি একসময় ট্রাই চিফ আর এস শর্মার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তার আধার নম্বর থেকে তার মোবাইল নম্বর ট্যুইটারে শেয়ার করে বুঝিয়ে দেন যে আধার সার্ভারের নিরাপত্তা আদতে কতটা ঠুনকো।সম্প্রতি তিনিই ট্যুইটারে আরোগ্য সেতু নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে লেখেন যে এই অ্যাপে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে।

    ৯ কোটি ভারতবাসীর গোপনীয়তা প্রশ্নের মুখে।এই ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করার ও পরামর্শ দেওয়া হয়।অ্যাপ নির্মাতা সংস্থা তার সাথে যোগাযোগ করার পরেও অ্যাপটি ত্রুটিমুক্ত হয়নি এটা বোঝাতে পরের ট্যুইটে তিনি প্রধানমন্ত্রীর, অফিস,আর্মি হেডকোয়ার্টারের অফিস,পার্লামেন্ট,স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অফিসে কজন আক্রান্ত সেটা ট্যুইটে লিক করে দেন। এর পরের ট্যুইটে তিনি তাদের ব্যক্তিগত নম্বর প্রকাশ করবেন বলেও জানিয়েছিলেন। এর পরেই সরকার নড়েচড়ে বসে। এই অ্যাপটি নিয়মিতভাবে উন্নতির চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়।যদিও এখনও কোন গোপন তথ্য চুরির সম্ভাবনা থাকার কথা সরকারের তরফে অস্বীকার করা হয়।এই অ্যাপ ইন্সটলের সময় বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয় আর অ্যাপ ব্যবহারের সময় ক্রমাগত ব্লুটুথ অন ও লোকেশন শেয়ার করতে হয়।

    প্রশ্ন হল কোন অ্যাপ ব্যবহার কি বাধ্যতামূলক করতে পারে সরকার যেখানে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি চন্দ্রচূড় প্রাইভেসি রায়ের সময় বলেছিলেন তথ্যের গোপনীয়তা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার।কোন কোম্পানির মালিক বা রাষ্ট্র তা জোর করে দেখতে চাইলে তা আইনত অপরাধ। যখন কোন সরকার জোর করে একটা অ্যাপ ইন্সটল করতে বলে এবং না করলে জেল ও জরিমানা দুই হতে পারে তাহলে সেটা কি ভয়ের নয়? করোনার বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়তে হবে আর তার জন্য প্রয়োজন পরিমানে টেস্টিং, পর্যাপ্ত মাস্ক,গ্লাভস, পিপিই এর যোগান, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের পৃথকিকরন করা।কোন কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ করোনার চিকিৎসায় বাধ্যতামূলক হতে পারেনা।পৃথিবীর ইতিহাসে করোনাই প্রথম মহামারী নয়।এর আগেও কলেরা, প্লেগের মত রোগের সাথে লড়াই করে মানবসভ্যতা টিকে থেকেছে চিকিৎসকদের অসামান্য পরিশ্রম আর বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে। আর হ্যাঁ, তখন কিন্তু স্মার্টফোনের যুগ ছিল না।