লকডাউনে কৃষিঋণের কিস্তি ১০ হাজার টাকা কেটে নেওয়ায় অনাহারে কাটাছে মালেকের পরিবার

নতুন গতি,হরিশ্চন্দ্রপুর ,০১ মে: দেশের শীর্ষ ৫০ জন ঋন খেলাপিদের ৬৮ হাজার কোটি টাকা ঋন মুকুব করেছে আর বি আই। অথচ লকডাউনেও কৃষিঋণের কিস্তি ১০ হাজার টাকা কেটে নেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে এক চাষি। নাম মালেক মসদর। বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির রামপুর গ্রামে।

    মালেক জানান, এস বি আই ব্যাঙ্কের হরিশ্চন্দ্রপুর শাখা থেকে বরাবরই কৃষিঋণ নিয়ে জমি চাষ করে থাকে। ২০১৫ সাল থেকে কৃষিঋণ নিয়ে আসছে এবং ঠিক সময়ে তা পরিশোধও করেছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে ৩৫ হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়ে জমি চাষ করলে আগষ্টের বন্যায় ও ২০১৮ সালের ফনি ঘূর্ণিঝড়ে পরপর দুই বছর তা সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়।


    ২০১৯ সালে মালদা জেলার কিছু অংশ জুড়ে বন্যা হয় এবং সেই বছর সামান্য পরিমাণ ফসল হলেও তা ধারদেনা শোধ করতে সব শেষ হয়ে যায়। এবছর ফসল এখনো মাঠে আছে। ফসল উঠলে তা বিক্রি করে কৃষিঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা করোনা মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পরেছে।লকডাউনকে সমর্থন করে গৃহবন্দী হয়ে রয়েছে। ঘরে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট।

    তিনি আরো জানান তার দুই ছেলে এক মেয়ে ও স্বামী-স্ত্রী সহ মোট পাঁচ জনের অভাবের পরিবার। দুই ছেলে ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে লকডাউনে আটকে পরেছে।লকডাউন চলাকালীন বাবার একাউন্টে এক ছেলে মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা ধারদেনা করে পাঠালে তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট হোল্ড করে পুরো ১০ হাজার টাকাই কেটে নেয় বলে জানান।

    একদিকে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছে এই করোনা সংকটময় পরিস্থিতিতে কোনো ই এম আই ও ঋনের কিস্তি কাটা যাবে না অথচ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে কোনো তুয়াক্কা না করে এক গরীব চাষির কৃষিঋণের কিস্তি হিসাবে ১০ হাজার টাকা কেটে নেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

    এখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। একদিকে বাবা-মা বাড়িতে অর্থাভাব ও খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছে অপর দিয়ে দুই ছেলে ভিন রাজ্যে লকডাউনে আটকে আছে।এই পরিস্থিতিতে কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না।

    এখনো যেন আপতত কিস্তির টাকা না কাটে তার জন্য ব্লক প্রশাসন ও ব্যাংক ম্যানেজারকে লিখিত আবেদন জানিয়েও হয়নি কোনো কাজের কাজ।

    রামপুর গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সামিম জানান, মালেক একজন ছোটো গরীব চাষি। চাষবাস করেই চলে তার সংসার।লকডাউনে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা এক ছেলে বাবর একাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একাউন্ট হোল্ড করে কৃষিঋণের কিস্তি হিসাবে ১০ হাজার টাকা কেটে নেয়। এখন সে প্রশাসনের দপ্তরে শুধু ছোটাছুটি করছে। পাচ্ছে না কোনো ভরসা। অর্ধাহারে ও অনাহারে কাটাচ্ছে তার পরিবার।

    ব্যাংক ম্যানেজার জানান, কৃষিঋণের কিস্তি স্থগিতের এরকম কোনো নির্দেশিকা আসেনি।২০১৭ সালে কৃষি ঋণ নিয়েছে, তিন বছর কেটে গেলেও এখনো পর্যন্ত স্বইচ্ছায় সে একটাও কিস্তি দেইনি।তাই ওর একাউন্টে টাকা ঢুকতেই ১০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।