ছয় দফা দাবি নিয়ে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের ডেপুটেশন

 

    নিজস্ব সংবাদদাতা, বীরভূম- সোমবার বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের বীরভূম শাখার পক্ষ থেকে রামপুরহাট ও সিউড়ি মহকুমাতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মহকুমা শাসকের কাছে ডেপুটেশন দেয় বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের জেলা প্রতিনিধিরা। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সুদীপ দাস, নুরুল আলম, ইয়াসিন আক্তার, রাজকুমার ভুইমালি,আশরাফুল আমিন সম্রাট, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ রিপন,জুয়েল মন্ডল,আশরাফুজ্জামান এছাড়াও প্রমূখ ব্যক্তিত্ব। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের পক্ষ থেকে এক সদস্য আশরাফুজ্জামান জানান আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, বীরভূম জেলায় গত লোকসভা ভোটের সময় অনেক নাগরিকের নাম 7 নম্বর ফর্মের মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোনো বিজ্ঞপ্তি (নোটিশ 21A) দেওয়া হয়নি। যার ফলে মূলত আদিবাসী, দলিত এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু স্বল্পশিক্ষিত মানুষ, যাঁরা এবিষয়ে সম্মক অবগত নন, তাঁরা ভোটদানের অধিকার পান নি।

    বর্তমানে ভোটার, কিন্তু ভোটার কার্ডের তথ্যে বিভিন্ন ভুল রয়েছে এমন বহু ব্যক্তি বারবার ফর্ম 8 এর মাধ্যমে ভুল সংশোধনের আবেদন জানিয়েও তার কোনো সমাধান বা সদুত্তর পাচ্ছেন না।

    EVP’র মাধ্যমে ভোটারদের নিজতথ্য যাচাই এবং সংশোধনের জন্য যে একমাস সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও পোর্টাল যান্ত্রিক ত্রুটিতে দীর্ঘদিন অকেজো থাকায়, অনেক ভোটারই নিজের সঠিক তথ্য পোর্টালে পূরণ করতে পারেননি।

    EVP র তথ্য যাচাই ও সংশোধন করার সরকারী প্রক্রিয়ায়, কর্মচারীরা সব কাজ আজকের তারিখে যেহেতু কোনোরকম প্রত্যক্ষ নথি ছাড়াই করে চলেছেন, তাই সেই যাচাইয়ের পরেও বহু ব্যক্তির তথ্যে পুরোনো ভুল সংশোধন হয় নি এবং হচ্ছে না।

    এমতাবস্থায়, আমরা বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের তরফে, ভারতের নাগরিক বীরভূমের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে, মহকুমা শাসকের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ ও সত্ত্বর সঠিক ব্যবস্থাগ্রহনের অনুরোধসহ নিম্নলিখিত দাবী পেশ করেছি

    ১. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে নির্ভুল e-Electoral Roll দ্রুত প্রকাশের প্রতিশ্রুতিদান এবং তার বাস্তবোচিত সময়সীমা কী, তা আমাদের জানানো হোক।

    এই প্রসঙ্গে অবশ্যই –
    ১.ক. নতুন ভোটারের ক্ষেত্রে ফর্ম 6 এবং এবং পুরোনো ভোটারের ক্ষেত্রে 7 এর মাধ্যমে ব্যক্তির উল্লিখিত এবং প্রদত্ত তথ্য, সঠিক ও নির্ভুলভাবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় প্রতিফলিত হতে হবে।

    ১.খ. নির্বাচকের তথ্য যাচাই ও সংশোধনের ক্ষেত্রে সরকারী কর্মচারীরা ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের e-portal এ যে তথ্য নথিভুক্ত করছেন, সেই কাজে যত্ন সহকারে তথ্যের নির্ভুলতা বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক।

    ১.গ. অনলাইন আবেদনকারীদের তথ্য নথিভুক্তির সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, বুথস্তরে এবং ব্লকস্তরে B.L.O এবং D.O র অধীনে উপযুক্ত, কার্যকর ও সুবিধাজনক বন্দোবস্ত সত্ত্বর বাড়ানো হোক।

    ২. জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তথ্যপঞ্জি প্রস্তুত করে তাদের নিজের জেলায় ভোটদানের অধিকার সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা।

    এই প্রসঙ্গে অনুরোধ –
    ২.ক. অন্যত্র (ভিন্ন রাজ্যে বা দেশে) কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের সরকারি নথিভুক্তির মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র প্রদান করা হোক।

    ২.খ. কর্মসূত্রে অন্যত্র বসবাসের সময়, হঠাৎ বিপদকালে তাদের নিজের জেলায় ও জেলার স্থানীয় সরকারি প্রতিনিধির সাথে আপৎকালীন যোগাযোগের জন্য একটি Toll free ফোন নম্বর চালু করা হোক।

    আরো এক সদস্য আশরাফুল আমিন সম্রাট ও সুদীপ দাস জানান সরকারী সুত্রে আমরা জানতে পেরেছি বীরভূমের মহঃবাজারের ডেউচা পাঁচামি এলাকায় কয়লাখনি প্রকল্প চালু হতে চলেছে। কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষদের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নের পথ সুগম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে প্রস্তাবিত এলাকাটিতে মূলনিবাসীদের বাস। আদিবাসিন্দা, তফশিলী জাতি ও নিম্নবিত্ত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ যুগযুগ ধরে এখানে বাস করছেন। কয়লাখনি প্রকল্প শুরু হলে এই শ্রেণির মানুষই ভিটে থেকে উৎখাত হবেন। পিছিয়ে পড়া এই শ্রেনির মানুষের জীবনযাপনের সুবিধা, অসুবিধা ও মানবাধিকারের কথা ভেবে “বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ” এর পক্ষ থেকে আমাদের কয়েকটি দাবি রয়েছে।

    ১) ভূমিপুত্রদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।

    ২) উৎখাত ভূমিপুত্রদের পরিবার পিছু একজন করে সরকারী চাকুরির ব্যবস্থা করা হোক।

    ৩) কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে যাতে কোন অশান্তি সৃষ্টি না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে প্রশাসনিকভাবে স্থানীয় মানুষদের নিয়ে পর্যায়ক্রমিক আলোচনা সভার আয়োজন করা ব্যবস্থা করা হোক।

    ৪) কয়লাখনি হলে পরিবেশের ক্ষতিসহ এলাকায় দূষনের মাত্রা বেড়ে যাবে, এ কথা অনস্বীকার্য। তাই এলাকার মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও দূষন নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।