রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে শপথ নিয়েই বাংলা ভাগের দাবি করলেন বিজেপির নগেন্দ্র রায় ওরফে অনন্ত মহারাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা :রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে শপথ নিয়েই বাংলা ভাগের দাবি করলেন বিজেপির নগেন্দ্র রায় ওরফে অনন্ত মহারাজ (Ananta Maharaj)। যা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। দলের রাজ্যসভার (Rajya Sabha) মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় সাফ জানিয়েছেন, বিজেপি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করলেও তাদের বাংলা ভাগের চক্রান্ত সফল হবে না। তবে অনন্ত মহারাজের এই দাবি ঘিরে অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি (BJP)। উত্তরবঙ্গে ভোট ভাগের আশঙ্কা করছে গেরুয়া শিবির।

     

    সোমবার শপথ গ্রহণের কিছুক্ষণের মধ্যেই সংসদ ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে বাংলা ভাগের দাবি করেন অনন্ত। বলেন, “গ্রেটার কোচবিহারের দাবি তো উঠছেই। সেটা নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে যেতে হবে। সরকারের যা করণীয় তা করতে হবে। সে বিষয়ে আমি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। গ্রেটার কোচবিহারকে যাতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা যায়, সেই দাবি কেন্দ্রের কাছে তুলতেই হবে। সেখানকার সাধারণ মানুষ যেটা চাইছে… সঙ্গে শুধু উত্তরবঙ্গেই নয় অসমও চাইছে, বিহারও চাইছে, সবাই চাইছে।”অনন্তর বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সুখেন্দু পাল্টা বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব বাংলার মানুষ গত এক দশক ধরে লোকসভা, বিধানসভা, পুর নির্বাচনে বিজেপিকে অপমানজনক পরাজয়ের স্বাদ দিয়েছে। তারপরেই বিজেপি বাংলা, বিহার ও অসমকে ভাগ করার চক্রান্ত সফল করার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। কেএলও নামক নিষিদ্ধ সংগঠনের একজন পলাতক নেতাকে অসমে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। তিনি সেখানে বিভাজনকারী শক্তিকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এসব যা-ই করুক না কেন, বাংলার মানুষ বিজেপির এসব জঘন্য খেলাকে বাংলায় নস্যাৎ করে দেবেই বলে একজাট হয়েছে। তারা বাংলা ভাগের যে কোনও চক্রান্তকেই লড়াই করে প্রতিহত করবে।” গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের নেতা অনন্তকে বিজেপি রাজ্যসভার প্রার্থী করার পরেই সংসদে তিনি বাংলা ভাগের কথা তুলবেন কি না প্রশ্ন উঠেছিল। কোচবিহারকে যে তিনি বাংলার অংশ বলে মানেন না, তা এদিন স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিলেন অনন্ত মহারাজ। এ প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, “বাংলা ভাগ করার কথা উঠছে কেন? কোন বাংলা ভাগ করতে চাইছে বলছে, আমি তা জানি না। কোচবিহার একটা রাজ্য। ওটা যাতে ফের পুনর্গঠন করা যায় তার জন্য বলছি। গ্রেটার কোচবিহারের কথা বলছি, ১৯৪৭ সালে ১৮ জুলাই যেটা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিল পাস হয়, ইন্ডিয়ান ইনডিপেনডেন্স অ্যাক্ট যেটা হয় তাতে একটা ধারা আছে সেভেন ওয়ান-বি। সেখানে আমাদের মহারাজের কাছ থেকে যে সমস্ত জমি ব্রিটিশরা দখল করেছে, সেই চুক্তি সমাপন করে মহারাজাকে সব ফেরত দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই কোচবিহার গ্রেটার কোচবিহার হয়েছে। সেটাই আমরা আবার গঠন করতে বলছি ভারত সরকারকে।”

     

    সোমবার রাজবংশী উষ্ণীষ-সহ সাদা পোশাকে হিন্দিতে শপথ গ্রহণ করেছেন অনন্ত। তিনি বাঙালি নন, তাই বাংলায় শপথ নেননি বলেও জানিয়েছেন। এদিন এ বিষয়ে পরে সুখেন্দু জানান, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে এখনও যা জানা গিয়েছে, তাতে মহারাষ্ট্রে বিদর্ভ, গুজরাতের সৌরাষ্ট্র, অসমে বোড়োল্যান্ড এবং কার্বি আংলং, উত্তরপ্রদেশে বুন্দেলখণ্ড এবং পশ্চিমাঞ্চল বা হরিৎ প্রদেশের মতো ২০টি নয়া রাজ্য গড়ার দাবি উঠেছে। তা হলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সব ছেড়ে কেন শুধু বাংলা ভাগ নিয়ে পড়েছে? বাংলার পুণ্যভূমিতে কার্জনের প্রেতাত্মা আর পৈশাচিক বিজেপি সরকার ফের পরাজিত হবে। লক্ষ লক্ষ ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, মাস্টারদা এবং মাতঙ্গিনী দিল্লির শাহেনশাহদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।”