|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক,মালদা: ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করা হয়েছিল তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের নাবালক ছেলেকে। ঘটনার তিনদিন পর সেই বালকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হলো। যা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে মোথাবাড়ি থানার বাঙ্গিটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের আমলিতলা গ্রামে। বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে প্রতাপপুর এলাকার একটি জমি থেকে ওই বালকের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে ওই বালকের দেহ উদ্ধারের ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি অপহরণকারীদের সময়ের মধ্যে কেন গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ এবং ওই বালককে কেন অক্ষত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করতে পারল না, তা নিয়েও অসন্তোষ ছড়িয়েছে।
এদিকে তৃণমূল দলের ওই পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলেকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে রাশিদুল শেখ (১৮) এবং রমজান শেখ (১৯) নামে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে মোথাবাড়ি থানার পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অবশ্য অপহরণ এবং খুনের কথা স্বীকার করেছে পুলিশের সামনে। ধৃত দুইজন মৃত ওই বালকের দুরসম্পর্কের আত্মীয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত বালকের নাম ওমর ফারুক (১০)। সে স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত ছিল। তার বাবা হাফিজুল ইসলাম মোথাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সক্রিয় তৃণমূল নেতা হিসাবে পরিচিত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার ওই পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজুল ইসলাম সপরিবারে পাশের গ্রাম চাঁদপুর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। রাতে বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে আসেন। এরপর ওই পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে ওমর ফারুক রাতেই কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। সেই সময় একদল দুষ্কৃতী চার চাকার গাড়ি নিয়ে এসে ওই বালককে এলাকা থেকে মুখ চেপে উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। দীর্ঘক্ষন খোঁজাখুঁজির পর ওমর ফারুকের সন্ধান না পেয়ে রাতেই মোথাবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের লোকেরা।
এদিকে এই ঘটনার পর ওই পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজুল ইসলামের মোবাইলে উড়ো ফোন থেকে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপনর দাবিতে করা হয়।
পাশাপাশি উড়ো ফোনে বলা হয় যে , তার ছেলে ওমর ফারুককে অপহরণ করা হয়েছে। ৫০ লক্ষ টাকা না দিলে তাকে খুন করা হবে । একটি মোবাইল নম্বর থেকে বারবার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজুল ইসলামের মোবাইলে ফোন আসে। এরপর সেটি পুলিশকে দেওয়া হয় তদন্তের জন্য। গত তিনদিন ধরে পুলিশ ব্যাপকভাবে তদন্ত শুরু করে। এমনকি মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশও। এরপরই বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ওই বালকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়।
এদিকে ছেলের মৃত্যুর কথা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা হাফিজুল ইসলাম সহ পরিবারের লোকেরা। কি কারণে তার ছেলেকে অপহরণ করা হল এবং ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হল, এমনকি পরবর্তীতে খুন করা হল সে সব কিছুই ভেবে কূলকিনারা করতে পারছেন না মৃত ওই ছাত্রের পরিবার।
তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমার সঙ্গে কারোর কোনো রাজনৈতিক বিবাদ ছিল না। আমি রাজনীতি করার পাশাপাশি শ্রমিক সরবরাহের কাজ করি। আমার কারোর কাছে কোন টাকা পয়সার ধার বাকি নেই। তাই এব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারছি না। পরে পুলিশ মারফত জানতে পেরেছি, পরিবারের দুরসম্পর্কের দুই আত্মীয় আমার ছেলেকে অপহরণ এবং খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণের পর নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নম্বর থেকে বেশ কয়েকবার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের ফোনে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল দুষ্কৃতীরা । কিন্তু সেই টাকা দিতে পারে নি তৃণমূল দলের ওই পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজুল ইসলাম। তবে দেহটি ওই জমির মধ্যে যে অবস্থায় পড়ছিল তাতে মনে করা হচ্ছে এক থেকে দুইদিন আগে এই খুনের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত করে রাশিদুল শেখ এবং রমজান শেখ নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এরা মৃত ওই ছাত্রের সম্পর্কে কাকাতো ভাই । প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে পারিবারিক কোনো পুরনো শত্রুতার কারণ এই ঘটনার পিছনে জড়িয়ে থাকতে পারে।
পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলেকে অপহরণ এবং খুনের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত রয়েছে এবং কি উদ্দেশ্য ছিল সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।