ড. মিনাল দাখাভে ভোঁসলে আপনাকে কুর্নিশ

ড. মিনাল দাখাভে ভোঁসলে আপনাকে কুর্নিশ

    নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক:

    নাজমুল হালদার : অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই কাজ করেছেন দিবারাত্র। ডাক্তারের দেওয়া ডেলিভারির সময়ও পিছিয়েছেন। দেশবাসীকে বাঁচাতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও কোভিড-১৯ টেস্ট কিট বানাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পুণের মাইল্যাব মলিউকিউলার ডায়াগনস্টিক কোম্পানির এই চিফ ভাইরোলজিস্ট। এতদিন বিদেশ থেকে আমদানি করা টেস্ট-কিট নিয়েই চলছিল কাজ। দেশে এই প্রথম কোভিড-১৯ টেস্ট-কিট বানালেন তিনিই।

    পুণে মাইল্যাবের বানানো এই টেস্ট-কিট ইতিমধ্যেই চলে এসেছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলোতে। এই টেস্ট-কিটকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।

    পুণে এনআইভি জানিয়েছে, করোনা-যুদ্ধে পিছিয়ে নেই ভারতও। সংক্রমণ দ্রুত ধরতে নানারকম টেস্ট-কিট নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। ব্যয়সাধ্য ও সময়সাপেক্ষ আরটি-পিসিআর (RT-PCR) টেস্ট-কিটের বদলে স্ক্রিনিং-কিট বা অ্যান্টিবডি টেস্ট-কিট বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। সেইমতো কাজও চলছে দেশের বিভিন্ন ল্যাবোরেটরি ও সরকারি-বেসরকারি বায়োমেডিক্যাল কোম্পানিগুলিতে। তার মধ্যেই বাজিমাত করে দিয়েছে পুণের মাইল্যাব ডায়াগনস্টিক সংস্থা। বৃহস্পতিবার থেকেই এই টেস্ট-কিট চলে এসেছে বাজারে।

    পুণের মাইল্যাব বায়োমেডিক্যাল কোম্পানি যে আশার আলো দেখিয়েছে তার নেপথ্যে রয়েছে এই মহিলা ভাইরোলজিস্টের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্বার্থত্যাগ। ড. মিনাল দাখাভে ভোঁসলে, মাইল্যাবের রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান। বলেছেন, “করোনার সংক্রমণ তখন একটু একটু করে ধরা পড়ছে দেশে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। সেই সময় প্রসবকালীন নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দেশকে বাঁচাতে হবে, এই চিন্তাই সবচেয়ে আগে ছিল।”

    ড. মিনাল জানিয়েছেন, এই টেস্ট-কিট কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরে দেবে মাত্র আড়াই ঘণ্টায়। বিদেশ থেকে আনানো টেস্ট-কিটগুলিতে সংক্রমণ ধরতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাছাড়া একটা টেস্ট-কিটে অন্তত ১০০ জনের নমুণা পরীক্ষা করা যাবে।

    “মাত্র ৬ সপ্তাহ সময় লেগেছে এই টেস্ট-কিট বানাতে। ১৮ মার্চ পুণে এনআইভি, ভারতের এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ও ড্রাগ কন্ট্রোলের (CDSCO) হাতে এই টেস্ট-কিটের যাবতীয় তথ্য জমা করে দিয়েছিলাম,” বলেছেন মিনাল ভোঁসলে। ওই দিনই তাঁর ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল। মিনাল বলেছেন, সকালের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করে তারপরে সন্ধের সময় ডেলিভারি হয় তাঁর। শিশুকন্যার জন্ম দেন তিনি।

    পুণে মাইল্যাবের ডিরেক্টর ড. গৌতম ওয়াংখেড়ে জানিয়েছেন, মুম্বই, পুণে, দিল্লি, গোয়া, বেঙ্গালুরুতে এই টেস্ট-কিট পৌঁছে গেছে। বাকি রাজ্য ও শহরগুলিতেও পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ১৫০টি টেস্ট-কিট তৈরি হয়েছে। এক একটিতে একশো জনের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। খরচ পড়বে ১২০০ টাকার মধ্যেই। আইসিএমআরের বেঁধে দেওয়া দাম সাড়ে চারহাজারের থেকেও অনেক কম।

    ড. ওয়াংখেড়ে জানিয়েছেন, এক লক্ষ এমন টেস্ট-কিট বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজন হলে দু’লক্ষ টেস্ট-কিট সরবরাহ করতে পারবে মাইল্যাব।

    আরটি-পিসিআর হল এমন একটি টেস্ট যাতে ধরা যায় শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসের জিনোমের প্রকৃতি কী। অর্থাৎ সেটি আরএনএ ভাইরাস কিনা। কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে আরটি-পিসিআর টেস্টেই নির্ভুল রেজাল্ট পাওয়া যায়। তবে এই টেস্ট করতে বহু সময় লাগে এবং খরচও অনেক। চটজলদি পরীক্ষার জন্য এমন টেস্ট-কিট দরকার যা বলে দেবে শরীরে সংক্রমণ হয়েছে কিনা। বাহ্যিক লক্ষণ তো বটেই যারা লক্ষণহীন বাহক (Asymptomatic) তাদের শরীরেও ভাইরাল ইনফেকশন আছে কিনা সেটা দ্রুত ধরা পড়বে এই টেস্ট-কিটে, বলেছেন ড. মিনাল ভোসলে।

    দেশের সবকটা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বহু মানুষের ভিড়। তাঁদের মধ্যে কারা কারা সংক্রামিত সেটা দ্রুত ধরা যাবে এই টেস্টের মাধ্যমেই। সেই ব্যক্তির সংস্পর্শে যদি হাজারজনও আসে, তাদেরও স্ক্রিনিং-টেস্ট করা যাবে দ্রুত। আইসিএমআরের তত্ত্বাবধানে দেশের আরও ৫০টি ল্যাবরেটরিকে টেস্ট-কিট বানানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পুণে মাইল্যাবের ডিরেক্টর ড. ওয়াংখেড়ে জানিয়েছেন, দেশের আরও ১১৮টি ল্যাবে টেস্ট-কিট বানানোর কাজ চলছে।