|
---|
নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: কোভিডের বাড়বাড়ন্ত এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, পুণ্য়তোয়া গঙ্গাতেও বেওয়ারিশ লাশ ভাসতে দেখছে ভারত। শুক্রবারও একই চিত্র দেখা গেল উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের গাহমার ঘাটে। পাঁচটি দেহ ঘাটের কাছে পাওয়া যায়। দুটি গঙ্গার পাড়ে বালিতে আটকে, একটি ভাসমান এবং দুটি দেহাবশেষ। সেখান থেকে আরও একটু দূরে উন্নাওতে অন্তত ২০০টি দেহ গঙ্গার পাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। চলতি সপ্তাহেই দেহগুলি বালিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টিতে বালি সরে গিয়ে দেহগুলি বেরিয়ে এসেছে।
কিন্তু এই ভয়াবহতা উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের গ্রামীণ মানুষদের অসহাতার বর্ণনা তুলে ধরে। গাজিপুর ও উন্নাওয়ের স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী, প্রশাসনিক আধিকারিক এবং মৃতের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পরিত্যক্ত দেহগুলির নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ বদঅভ্যাস, গভীর আর্থিক সঙ্কট এবং মৃতদেহ সৎকারের তাড়াহুড়ো। করোনা অতিমারী শহর ছেড়ে গ্রামীণ ভারতে কী ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে তার খণ্ডচিত্র হল এই দেহগুলি। এমন বহু মৃত্যু সরকারি খাতায় নথিভুক্তও হয়নি।
বিহার সীমান্ত থেকে ৭ কিমি দূরে গাহমার ঘাটে গত তিনদিন ধরে স্থানীয়রা, পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা দেহগুলি সৎকারে ব্যস্ত। কিছু দেহ জ্বালিয়ে এবং কিছু বালিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে। কমলা দেবী নামে স্থানীয় এক ডোম বলছেন, “এমন দৃশ্য আমি আগে কখনও দেখিনি। নৌকায় চেপে ভাসমান দেহগুলি পাড়ে নিয়ে আসছি আমরা। পচা দুর্গন্ধে বাতাস শ্বাস নেওয়া দায়। এখান গঙ্গা নদী বাঁক নিয়েছে। তাই দেহগুলি নিম্নপ্রবাহে এখানে এসে পাড়ে আটকে যাচ্ছে। অন্তত ৮০টি দেহ তো হবেই।”
প্রদীপ কুমার নামে বাকসার ঘাটের এক নাপিতের কথায়, “করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সৎকারের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। চিতার কাঠ যেখানে আগে ৫০০ টাকায় মিলত, এখান দেড়-দু হাজার টাকা লাগছে। গোটা সৎকার প্রক্রিয়ার জন্য লাগছে অন্তত ১০ হাজার টাকা। দিন ১৫ আগে এখানে বালির মধ্যে স্থানীয় একজনকে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। মদাসক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি বৃষ্টিতে বালি সরে যাওয়ায় কুকুরে তাঁর দেহ খুঁড়ে বের করে। আমি দেখছি, সৎকারের টাকার অভাবে অনেকেই বালিতে দেহ পুঁতে দিচ্ছেন।”
গঙ্গার ঘাটের কাছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অন্তত শখানেক কবরের জায়গা খুঁজে পেয়েছে। বৃষ্টিতে বালির স্তূপ সরে গিয়েছে। স্থানীয় এক জেলে করণ সিং বলছেন, “সপ্তাহ খানেক আগে দিনে ১০০টা দেহ আসত ঘাটে দাহ করার জন্য। অর্ধেক তার মধ্যে বালিতে পুঁতে দেওয়া হত।” কিন্তু বর্তমানে জেলা প্রশাসন বালিতে কবর দেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।