স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও মিলছেনা চিকিৎসার পরিসেবা প্রশাসনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন অসহায় পরিবারের, শুরু রাজনৈতিক তরজা! কটাক্ষ বিজেপির

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর জন্য যেখানে দুয়ারে সরকারের মতো ক্যাম্প করে রাজ্যের জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।রাজ্যের সমস্ত জনগণ যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসার পরিসেবা পান, সরকারি থেকে বেসরকারি নার্সিংহোমে তার জন্য ভোটের আগেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিতে মরিয়া প্রশাসন। এমনকি স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরানোর লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।স্বয়ং লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে নিজে তুলে নিয়েছেন স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। সেখানে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে ধরা পড়লো উল্টো চিত্র। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও সরকারি থেকে বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে ও চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হলেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত পিংকি দাস। চিকিৎসা না পেয়ে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন পিংকি দেবী। এমনই ছবি ধরা পরল হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বারোডাঙ্গা গ্রামে।

    স্বামীর অত্যাচারের শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই রয়েছেন বাবার বাড়িতে। মা পেশায় দিনমজুর এবং বাবা ভ্যান চালক। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও হচ্ছে না অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা। অবশেষে চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবার। এমনকি চিকিৎসা না পেলে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছে তারা। অসুস্থ মেয়ে এবং অসহায় দরিদ্র মা-বাবা মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও কাতর আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনের মাধ্যমে। যেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফ্রি তে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা। এদিকে নির্বাচনের মুখে এই ঘটনা কে ঘিরে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল।
    স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও হয়রানির ছবি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা গেছে। এবার সেই চিত্র দেখা গেল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১নং ব্লকের অন্তর্গত হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বারোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পিংকি দাস।বয়স ২৪। প্রায় ১০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মিরজাতপুর গ্রামের রঞ্জিত দাস এর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ছোট দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু পিংকির অভিযোগ বিয়ের ২ বছর পর থেকেই স্বামী প্রচন্ড অত্যাচার করত। স্বামী ছেড়ে দেওয়ার পরে বাধ্য হয়েই কয়েক বছর ধরে বাবার বাড়িতে চলে আসে সে। পিংকির বাবা দীপক দাস পেশায় ভ্যানচালক। মা লক্ষ্মী দাস দিনমজুর।

    ভাই বিট্টু দাসও দিনমজুরের কাজ করে। জানা গেছে প্রায় এক বছর ধরে অসুস্থ পিংকি। মাথা এবং সারা শরীরে ব্যথা সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তার। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে তাদের।কিন্তু একমাস ধরে বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা। অবশেষে আজ হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিওর দ্বারস্থ হয় অসহায় এই পরিবার। বাবার ভ্যানে করেই অসুস্থ পিংকি কে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক অফিসে অভিযোগ জানাতে। সেখানে পিংকির মা লক্ষ্মী দাস অভিযোগ করেন। সাথে আবেদন জানান যাতে তার মেয়ের চিকিৎসা পায়। না তো তার সমগ্র পরিবার স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করবে।

    পিংকি দাস বলেন,” সারা শরীর এবং মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমার স্বামী আমাকে দেখেনা। আমার কিছু হয়ে গেলে ছোট দুই সন্তান অনাথ হয়ে যাবে। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব না। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছিনা। মমতা সরকার তো সকলকে ফ্রিতে চিকিৎসা দেয়। আমিও আবেদন জানাচ্ছি যাতে আমি চিকিৎসা পায়।

    অভিযোগকারি পিংকি দাস এর মা লক্ষ্মী দাস বলেন,”আমার মেয়েকে ওর শ্বশুর এবং স্বামী দেখেনা।দুই সন্তান নিয়ে আমার বাড়িতেই থাকে।আমার বর ভ্যান চালক। তাতেই আমাদের সংসার চলে। চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য নেই। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই আজ ব্লকে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছি। প্রশাসন এবং সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে আমার মেয়েটা বাঁচে। সমস্যার সমাধান না হলে আমরা সকলে স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণ করবো।

    হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন,”আমরা এই নিয়ে একটা অভিযোগ পত্র পেয়েছি তবে তাতে পরিষ্কারভাবে কিছু নেই।আমাদের বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে।প্রশাসন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে।আর যেসব হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী লিস্ট এর অন্তর্ভুক্ত সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জেলায় সমস্ত ব্যাপারটি জানানো হবে।”

    হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন,”ঘটনাটি সত্যি বেদনাদায়ক।আমি হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে যোগাযোগ করেছি।পরে চাঁচল রেফার করা হয় সেখানেও যোগাযোগ করেছি।আমি তাদের উপদেশ দিয়েছে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে যেতে।আমরা সেখানে সম্পূর্ণ রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেব।অসহায় মানুষের পাশে তৃণমূল কংগ্রেস সব সময় আছে।

    এদিকে ভোটের সম্মুখে এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছারেনি বিজেপি। বিজেপি নেতা রূপেশ আগারওয়াল বলেন,” তৃণমূল সরকারের সম্পূর্ণটাই ভাওতাবাজি। কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ্মান যোজনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এদিকে সংবাদমাধ্যম খুললেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ প্রতিদিন উঠে আসছে। আজ আমাদের হরিশ্চন্দ্রপুর বারোডাঙ্গা গ্রামের একটি পরিবার চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। সরকারি সব প্রকল্প হল গরিব মানুষদের জন্য।সেখানে গরীব মানুষেরা সেই প্রকল্পের সঠিকভাবে সুবিধা না পায় তাহলে তার সার্থকতা থাকে না।চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানানোর মতন বেদনাদায়ক ঘটনা হতে পারে না। অসুস্থ এই মহিলা যাতে দ্রুত চিকিৎসা পায় প্রশাসনের উচিত সেই ব্যবস্থা করা।