জোর কদমে চলছে শেষ প্রস্তুতি পতিরাম ধামে 

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জেলা দক্ষিন দিনাজপুর। এই জেলাতে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন সহ ধর্মীয় দর্শনীয় স্থান সহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিক। তথাকথিতভাবে আষাঢ় মাস শেষ হতে চলেছে হাতেগুনা মাত্র আর দুইদিন তারপরেই জেলার পতিরাম ধামে দেবাদিদেব মহাদেবের জন্ম মাস শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার ভোলেবাবার মাথায় বা মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে ভিড় আবাল বৃদ্ধ বনিতা। আর সেই কারণেই সেজে উঠছে পতিরাম ধামসহ সমগ্র পতিরাম। পুজোর আনন্দে মেতে উঠছে সকলেই। শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার থেকে পতিরাম ধামে শিবের আরাধনায় জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা, ভিনরাজ্যের লক্ষাধিক ভক্তের ভিড় হয়। দূরদূরান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা জল নিয়ে হেঁটে পতিরাম ধামের মন্দিরে বাবা ভোলানাথের মাথায় জল ঢালেন। শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার থেকে তা শেষ সোমবার পর্যন্ত চলে। শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলিতে মন্দিরের সামনে ভক্তদের ঢলে পা ফেলার জায়গা থাকে না। প্রসঙ্গত, ধামকে কেন্দ্র করে  প্রতি বছর জাতীয় সড়কের উপরে বিরাট মেলাও বসে। যাকে ঘিরে উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এই মেলার নাম শ্রাবণী মেলা। মন্দিরের পুরোহিত হরিহরানন্দ গিরি বলেন, যুগযুগ ধরে শ্রাবণ মাসে প্রথম সোমবার থেকে পতিরাম ধামে লক্ষাধিক ভক্ত ভিড় করেন। তবে করোনা আবহে এবার মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই ফোন করছেন বাবার মাথায় জল ঢালতে আসবেন বলে তারা অগ্রিম যোগাযোগ করছেন, শ্রাবণী মেলা ও ধামে বাবার জন্ম মাসে পুজোকে কেন্দ্র প্রচুর ভক্তের সমাগম হবে প্রতিবছরের ন্যায়। পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজের অন্যতম কার্যকর্তা বিশ্বজিৎ প্রামাণিক বলেন, প্রতি বছর লক্ষাধিক ভক্তের আগমন হয়। ভক্তদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সেজন্য আমরা মেডিক্যাল ক্যাম্প, জলছত্র খুলি। সারাবছর পতিরামবাসী এই মাসটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। ধাম সূত্রে জানা গেছে, ৭৫ বছর আগে স্বামী সুদামা গিরি নামে এক শিব ভক্ত ছিলেন। তিনি আত্রেয়ী নদীতে স্নান করার সময় প্রতিদিনই কিছু একটায় ধাক্কা খেয়ে শব্দ শুনতে পেতেন। একদিন জল কমে যেতেই তিনি দেখেন সেখানে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। তা তুলে এনে পতিরাম হাটের কাছারি ঘরের পাশে স্থাপিত করেন। এরপর তিনি পতিরামের রানিহাট সংলগ্ন একটি জায়গা মন্দির তৈরির জন্য দান করেন। সেখানে ছোট করে মন্দির করে সেই শিবলিঙ্গ স্থাপন করে পুজো শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাবা ভোলানাথের মহিমা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তিনি কাশি ও বদ্রিনাথ থেকে আরও দু’টি শিবলিঙ্গ এনে মন্দিরে স্থাপন করে। বর্তমানে মন্দিরে তিনটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। আত্রেয়ী নদী থেকে পাওয়া শিবলিঙ্গের নাম ট্যাংকেশ্বর। যেহেতু জলের নীচে টং টং শব্দ হতো, তাই এই নাম রাখা হয়েছে। বাকি দু’টির বিশ্বনাথ ও বৈদ্যনাথ নাম দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন হরিহরানন্দ গিরি। শ্রাবণ মাসের প্রথম রবিবার বিকেল থেকে পতিরামে ভক্তদের লাইন পড়ে যায়। কেউ হেঁটে তো কেউ গাড়ি করে বক্স, ডিজে বাজিয়ে নাচতে নাচতে সকালে এসে ধামে পৌঁছন। পতিরামে এসে আত্রেয়ী নদীতে স্নান করে কলসিতে জল ভরেন। আত্রেয়ী থেকে জল তুলে শিবের মাথায় ঢালেন। শ্রাবণী মেলা বসে জাতীয় সড়কসহ যেখানে প্রচুর ভক্ত সহ জেলার মানুষ ও দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। আর এখানে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রচুর পুলিস ও স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োগ করা হয়। তবে বলাই বাহুল্য, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরাম ধামে শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটবে যাকে কেন্দ্র করে আনন্দ মেতে উঠেছে পতিরাম বাসিসহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রত্যেকটি বাসিন্দারা।