“সরকারি আবাসন প্রকল্পে অজয় দে ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কাট মানির অভিযোগ শান্তিপুরে l”

শরিফুল ইসলাম, নতুন গতি,শান্তিপুর। কাটমানি বিতর্কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার কথা ঘোষণার পরেই শাসকদল এবং বিরোধী শিবিরের চুনোপুটি থেকে রাঘব বোয়াল, প্রতিদিনই কারো না কারো নাম জড়িয়ে পড়ার ঘটনা কার্যত নিয়মে পরিণত হয়েছে l
এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো শান্তিপুর পৌরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা শাসক দলের এসসিএসটিওবিসি সেলের সভাপতি, শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান অজয় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বৃন্দাবন প্রামানিকের নাম l অভিযোগ, সরকারি আবাসন যোজনায় ঘর পাইয়ে দিয়ে বহু মানুষের কাছ থেকে ষোলো নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাঁর স্ত্রী সুপ্রীতি প্রামানিক ও তিনি ঘর পিছু চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ‘কাটমানি’ আত্মসাত করেন l

    শান্তিপুর পৌরসভার অধীন গঙ্গাতীরবর্তী ষোলো নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুপ্রীতি প্রামানিক ও তাঁর স্বামী বৃন্দাবন প্রামানিকের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের ঘর দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলে এদিন পোস্টার পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে l

    তিন লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকায় সরকারী অনুদানের ব্যয়ে নির্মিত ওই আবাস যোজনায় ঘর কে পাবেন, নির্দিষ্ট সরকারি গাইড লাইন থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঘর পাওয়ার বিষয় টি মূলত নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উপরেই l শান্তিপুর পৌরসভা এলাকায় সরকারি প্রকল্পের এই ঘর নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ নাকি পর্বতপ্রমান l অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত নির্দেশ মানা হয় নি l গরিব পৌর নাগরিকের বদলে উচ্চবিত্ত এবং কাছের লোক বা অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ঘর পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে l শান্তিপুর পৌরসভা অঞ্চলে এমন দৃষ্টান্তও আছে, সরকারি অনুমোদনের টাকায় ঘর তৈরী করে পরবর্তীকালে ওই অনুদানপ্রাপ্ত ঘরে শীততাপনিয়ন্ত্রণকারি যন্ত্র বসিয়েছেন উপভোক্তা l আবার অবাস যোজনায় ঘর চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত হবার পর নিজের লোক নয় অথবা কাট মানির টাকা দিতে পারেন নি বা গৃহ কর্তা মারা গেছেন সেই অজুহাতে প্রস্তাবিত উপভোক্তার ঘর বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বা একজনের নামে বরাদ্দ ঘর অন্য জনকে দিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে শান্তিপুর বাসির l

    তৃতীয় পর্যায়ের সরকারি অনুদান এলেই তাঁর ঘর সম্পূর্ণ হবে, নাম প্রকাশের বিড়ম্বনায় পড়ে ঘর আটকে যাবে তাই নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে চড় সাড়াগরের জনৈক উপভোক্তা জানালেন, ঘর বাবদ তাঁকে ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সত্যজিৎ সরকারের মাধ্যমে নগদ চল্লিশ হাজার টাকা কাউন্সিলর এর কাছে দিতে হয়েছে l (সত্যতা যাচাই করেনি এই প্রতিবেদক )

    “সবাই জানে ঘর পেতে টাকা তো দিতেই হয়েছে, তবে, কাট মানির টাকার অংকটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম l দলীয় কর্মীর ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে l বিজেপির কর্মী হলে একটু অন্যরকম, সিপিএম-কংগ্রেস বা নিরপেক্ষ হলে টাকাটা একটু বেশিই লেগেছে l” জানালেন ওই এলাকার বাসিন্দা
    সাগর সরকার l
    এতো দিন অভিযোগ করেন নি কেন? প্রশ্নের উত্তরে এলাকার অশীতিপর এক বৃদ্ধ প্রতিবেদক কে বললেন, “আমরা ভয়ে মুখ খুলিনি, কাগজে, রেডিও- টিভি তে দেখলাম আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানি যাঁরা নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে টাকা ফেরত এর ব্যবস্থা করবেন বলছেন l”

    শান্তিপুর পৌরসভায় চেয়ারম্যান অজয় দের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর ঘনিষ্ট এক জন জানালেন ভিতরে মিটিং এ ব্যাস্ত আছেন তিনি l

    সরকারি অর্থে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, ” আমার কাছে প্রচুর অভিযোগ আসছে l কাট মানি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন l
    দলের ভিতরে বা দলের বাইরে যে বা যাঁরা এই ‘ঘোটালার’ সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, অভিযোগ প্রমান হলে কাউকে রেয়াত করা হবে না l”