বেকার জীবন, না পারি বলতে না পারি সইতে

মোঃ রিপন, মুরার‌ই-

    বেকারত্ব একটি অভিশাপ। আর এই বেকারত্বকে পুঁজি করেই শত শত কোটি টাকা আয় করছে সরকার। বিভিন্ন সংস্থা বা বিভাগ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার নামে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের ফি। আর বেকার জনশক্তি একটি চাকরি পাওয়ার আশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।শিক্ষা মানুষকে দেয় আলো এবং সম্মুখে চলার পথ। শিক্ষা যখন আলো দানের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের অন্ধকারে নিক্ষেপ করে তখন আমরা আসলে কাকে দায়ী করব? শিক্ষার্থীদের, না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে, না অভিভাবকদের, না শিক্ষাব্যবস্থাকে না রাজনৈতিক নেতৃত্বকে? আসলে কমবেশী সবাই দায়ী। তবে রাজনৈতিক ম্যারাথন শিক্ষাব্যবস্থাকে দিনের-পর-দিন গলাটিপে হত্যা করছে। ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের আগুনে দাও দাও করে পুড়ছে আমাদের দেশ। ক্ষমতায় আসার আগে রাজনৈতিক নেতাদের সেই প্রতিশ্রুতি আজ অ্যামাজনের জঙ্গলের সাথে যেন দাউদাউ করে জ্বলছে। বছরে দু’কোটি চাকরির বদলে ভারতীয় রেল, পারলে জি, এয়ার ইন্ডিয়া,অটোমোবাইল সংস্থাগুলো একের পর এক কর্মী ছাঁটাই করে চলেছে। আমরা যখনই কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষা নিতে যাই, তখন দেখা যায় শিক্ষিত বেকারদের কী করুণ হাল। হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার ঘুরে বেরাচ্ছে চাকুরি নামক সোনার হরিণের পিছনে। এই হরিণ ধরার জন্য একশটি পদের বিপরীতে কয়েকশ কিংবা কয়েক হাজার প্রার্থী এসে হাজির হয়, সবাই উচ্চশিক্ষিত। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর তারা হয় বাবা-মার উপর কিংবা টিউশনি বা এ ধরনের কিছু অস্থায়ী পেশার উপর নির্ভর করে চলছে। কোথায় তাদের ভবিষ্যত, কোথায় দেশকে কিছু দেয়ার চিন্তা আর কোথায় বৃত্তি কিংবা দেশ সেবার চিন্তা। শুধুই বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এই চিন্তাই তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে সর্বক্ষণ। তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠে, যে দেশ তার নাগরিকদের তেমন কিছু দিতে পারে না, সে দেশের নাগারিকগণও সে দেশকে তেমন কিছু দিতে চায় না বা পারে না ।
    ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার সব নিয়মকানুন জানা থাকা সত্ত্বেও কঠিন বাস্তবতা এবং জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তাদেরকে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডেই কেঁদে ফেলতে বাধ্য করেছে। কর্মসংস্থানে বস্ত্র শিল্প, অটোমোবাইল  শিল্প বরাবর বড় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হলেও বিনিয়োগ পরিবেশ ভাল না থাকার কারণে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না, বরং অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এর ফলে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। সরকারি খাতে পরীক্ষা হলেও সেই পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আকাশের দিকে চাতকের মত তাকিয়ে থাকতে হয়।  বেকারত্ব মহামারিতে রূপ নিয়েছে। সরকার দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বেকারত্বের গ্লানি নিয়ে হতাশার জীবন কাটাচ্ছে শিক্ষিত যুবকরা ফলে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
    সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, কাজের সুযোগ না পেয়ে অসংখ্য বেকার যুবক হতাশা থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। হতাশা থেকে আত্মহননের পথও অনেকে বেছে নিচ্ছেন। একই কারণে নিকটাত্মীয়কে হত্যা করার মতো ঘটনাও এই সমাজে ঘটছে। শিক্ষিত যুবকদের অনেকেই হতাশা থেকে মাদকের সংস্পর্শে আসছেন। এই সুযোগে মাদক বাণিজ্যসহ অনেক বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আয় রোজগারের পথ খুঁজছেন। ভারতে বর্তমানে বেকারত্বের যে হার, তা গত ৪৫ বছরে সর্বাধিক। এক  প্রতিবেদনে সরকারি একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এই সময়ে দেশের বেকারত্বের হার ৬.১%, যা ১৯৭২-৭৩ সালের পর সর্বাধিক। দেশটির শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার ৭.৮% এবং গ্রামাঞ্চলে এই হার ৫.৩%।
    ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সমীক্ষাটি চালিয়েছে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দপ্তর (ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস)।
    সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিশনের প্রধান পিসি মোহন জানিয়েছিলেন চাকরি সংক্রান্ত এই তথ্য ডিসেম্বরে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা প্রকাশ করা হয়নি বলে তিনি ও তাঁর সহকর্মী জে মীনাক্ষী খুবই অসন্তুষ্ট।
    অন্যান্য সরকারি সংস্থার চাপ থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
    ভারতীয় গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ছেলে পথে নেমেছে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য।