ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ছলে প্রতারণা, ভুয়ো কল সেন্টারের ৮ জনকেই গ্রেপ্তার করল ইকবালপুর থানার পুলিশ

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক। কিছুদিন আগে একটি গুরুতর অভিযোগ জমা পড়েছিল ইকবালপুর থানায়। ভূকৈলাস রোডের বাসিন্দা মহম্মদ ইশাক জানান, ঋণ দেওয়ার নাম করে তাঁর সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেছে কয়েকজন। মার্চ মাসে মহম্মদ ইশাকের মোবাইলে একটি ফোন আসে। একটি কল সেন্টারের পক্ষ থেকে তাঁকে সহজে ও দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। মহম্মদ ইশাকের সেই মুহূর্তে খানিক টাকার প্রয়োজনও ছিল। অন্যান্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এখানে তেমন কোনও ঝামেলাই নেই। ফলে, ৬ লক্ষ টাকা ঋণের আবেদন করেন তিনি।

    আবেদন মঞ্জুর হয় দ্রুতই। ইশাককে তাঁর সমস্ত নথি জমা দিতে বলা হয়। এরপর তাঁকে ফোনে জানানো হয়,এই গোটা প্রক্রিয়ার ‘প্রসেসিং ফি’ বাবদ ১,০৮,০০০ টাকা লাগবে। দ্রুত ঋণ পাওয়ার প্রয়োজনই তখন বেশি। ইশাক তাই নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েও দেন সেই টাকা। কিন্তু এরপরে ঋণের কোনও টাকাই পাননি ইশাক। তাঁর দেওয়া প্রসেসিং ফি-র টাকাটাও ফেরত আসেনি। যে মোবাইল নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন আসত, সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ইকবালপুর থানায় অভিযোগ জানান মহম্মদ ইশাক।

    অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নেমে পড়ে ইকবালপুর থানা, পোর্ট ডিভিশন অফিস ও পোর্ট ডিভিশন সাইবার সেলের যৌথ টিম। সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারি চালিয়ে জানা যায়, রাজারহাটের একটি এটিএম থেকে ওই টাকা তোলা হয়েছে। সেই এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মালিক নিজে টাকা তোলেনি। কিন্তু সেই ফুটেজ দেখে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

    সোর্সদের খবর দেওয়া হয়। প্রতারকদের খোঁজও চলতে থাকে। অবশেষে, সোর্স মারফত খবর পেয়ে ১৮ জুলাই, সকালে রাজারহাটের চিনার পার্কের কাছে পৌঁছে যায় তদন্তকারী অফিসারদের বিশেষ টিম। বলাই বাহুল্য, টিমের সবাই ছিলেন সাদা পোশাকে।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা মেলে একজনের। এটিএম থেকে টাকা তুলতে এসেছিল। সোর্স শনাক্ত করতেই তাকে গ্রেপ্তার করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তাকে জেরা করে সেই কল সেন্টারের ২টি অফিসের সন্ধান মেলে। একটি অফিস চিনার পার্কেই, অন্যটি সেক্টর ফাইভে। দুটি অফিসেই তল্লাশি চালানো হয়। সেক্টর ফাইভের অফিস থেকে মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। বাজেয়াপ্ত করা হয় ১০টি মোবাইল ফোন এবং বেশ কিছু ডেবিট কার্ড।

    বিভিন্ন মানুষকে সহজে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেখাত এই কল সেন্টারের কর্মীরা। তারপর প্রসেসিং ফি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে নেওয়া হত প্রত্যেকের থেকে। ধৃতদের মধ্যেই হরিদেবপুরের বাসিন্দা অঞ্জন দাস এবং নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত চক্রবর্তী ছিল এই প্রতারণা-চক্রের প্রধান দুই চাঁই। এই প্রতারণার গোটা চিত্রনাট্যটা সাজিয়েছিল তারাই। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলত অঞ্জন ও প্রশান্ত। তারপর, সেই অ্যাকাউন্টে প্রতারিত মানুষটির টাকা জমা পড়লে অ্যাকাউন্ট মালিককে টাকার সামান্য ভাগ দিয়ে বাকি টাকা সরিয়ে ফেলত নিজেরা। এইভাবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৩০০ জনেরও বেশি ঋণ আবেদনকারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছিল তারা। সেই খেল যে এভাবে খতম হবে, ভাবতেই পারেনি।

    নিচে থাকল ধৃতদের ছবি। উদ্ধার হওয়া মোবাইল, ডেবিট কার্ডের ছবিও।ছবি থাকল তদন্তকারী অফিসারদেরও। ছবিতে, দাঁড়িয়ে বাঁ দিক থেকে, সাব ইনস্পেক্টর মহম্মদ আসাদুল্লাহ খান, সার্জেন্ট মানজিৎ গোয়েল, সাব ইনস্পেক্টর সঞ্জয় মিশ্র ও বিনোদ কুমার, অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইনস্পেক্টর নিতাই দে, কনস্টেবল বাপি ঘোষ এবং সাব ইনস্পেক্টর সিরিং তামাং। বসে, বাঁ দিক থেকে, ওসি একবালপুর থানা, ইনস্পেক্টর আমানুল্লাহ এবং অ্যাডিশনাল ওসি একবালপুর থানা, ইনস্পেক্টর তন্ময় সামুই।