হিন্দু মহিলার সৎকারে মুসলিম গ্রামবাসী

 

    নিজস্ব সংবাদদাতা,নতুন গতি, জলঙ্গী : মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গীর ঝাউদিয়া গ্রামে ননীবালা সরকার নামে এক হিন্দু মহিলার শেষ কৃত্তে উপস্থিত গ্রামের দুইশতাধিক মুসলিম গ্রামবাসী।
    ননীবালা সরকার( ৮৫) বেশ কিছু দিন থেকে বয়স জনিত কারণে অসুস্থ ছিলো। মঙ্গলবার রাত পোনে নয়টা নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। তার দুই ছেলে থাকলেও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুব শোচনীয় অবস্থা। ছেলেরা শ্রমিকের কাজ করে কোনো মতে দিন কাটায় । তাই গ্রামের প্রতিবেশীরা সকলে মুসলিম হলেও তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কখনো খাদ্য সামগ্রী দিয়ে , কখনো টাকা পয়সা দিয়ে বা ঔষধ কিনে দিয়ে। এই ঝাউদিয়া গ্রামে একটি মাত্র পরিবার হিন্দুর। তবুও এই ননীবালার পরিবারের উপরে কখনো পড়েনি হিন্দু -মুসমিমের ভেদাভেদের ছায়া । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন ভেদাভেদের বিষবাষ্পের বাতাবরণ তখন এই মেলবন্ধন এক অন্যমাত্রা যোগ করে তা বলবার অপেক্ষা রাখে না । যা সমস্ত দেশবাসীকে বার্তা দেয় জাতিভেদ কে দূরে রেখে মিলনের সুর চির জীবিত। ১৯৯৩সালে সিপিএম থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে পাঁচ বছরের জন্য গ্রামের জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হন। সেই সম্মান এখনো অটুট রয়েছে গ্রামের মানুষের মনে। এ গ্রামের এক প্রতিবেশী একছাদ মণ্ডল জানায়-” আমাদের সবার চোখের মনির মতো ছিল ঠাকুমা ননীবালা সরকার, প্রত্যেকের বাড়িতে যাওয়া-খাওয়া, ছিলো না আত্মীক সম্পর্কে কোনো জাতিভেদের রেশ। ঠাকুমা বলতো, তোরাও যে ছেলে মেয়ে আমার এরাও সেই ছেলে মেয়ে একই, -সবাই মানুষ । ঠাকুমার ছেলে মেয়েদের বিয়েতে সমস্ত রকমের সাহায্য সহযোগিতা করেছি আমরা তথা সমস্ত গ্রামবাসীরা। আজ ঠাকুমার মৃত্যুতে আপন একজনকে হারালাম! ” শ্মশান যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন দুই শতাধিক আবাল বৃদ্ধ বনিতা মুসলিম গ্রামবাসী।

    মুখঅগ্নি করলেন তার সাত ছেলে মেয়েদের সাথে , একছাদ মণ্ডল, আক্কাস মণ্ডল, শুকচাঁদ মন্ডল, রফিকুল সেখ,আমজাদ মণ্ডল, রশিদ সেখ সহ আরও অনেকে। তার বড় ছেলে বিভূতি রঞ্জন সরকার বলে,” ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ থেকে বিনিময় করে এই গ্রামে চলে আসি। কখনো মনে হয়নি কে মুসলিম কে হিন্দু । ভাই ভাই হিসেবে আত্মীয়ের মতো আজ পর্যন্ত বসবাস করছি। বিভিন্ন ভাবে আপদে -বিপদে সবাইকে পাশে পেয়েছি সব সময়।” জামেনা বিবি জানায় -” ঠাকুমার মৃত্যুতে আজ বড় একাকিত্ব মনে হচ্ছে,, সব সময় আপনই মনে করতাম। বড় আদর করতো আমায়! ” শুকচাঁদ মণ্ডল জানায়- ” বাড়ির পাশের এক প্রিয় ঠাকুমাকে হারালাম! যে সকালে উঠে ডাকতো ‘শুকচাঁদ ভালো আছিস? ‘স্মৃতি গুলো খুব মনে পড়ছে! ” বিহ্বল হয়ে চোখে জল গড়িয়ে পড়ে।
    গ্রামের মুসলিম মানুষরাই বাঁশ কাটা থেকে শুরু করে পোড়ানোর কাঠ, পাটকাটি দিয়ে শেষকৃত্য পর্যন্ত সম্পন্ন করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।