সমাজ মাধ্যম সূত্রে ৬ বছর পরে বাড়ি ফিরলেন জাম্বনীর মাড়ধা সরেন

নিজস্ব সংবাদদাতা: আবারও মানবিকতার সাক্ষী রইলো মেদিনীপুর শহর।সমাজমাধ্যমকে হাতিয়ার করে মেদিনীপুরের সমাজকর্মী দের হাত ধরে নিজের ঝাড়গ্রাম জেলার জাম্বনী ব্লকের গৈত গ্রামে ফিরে গেলেন বছর পঁয়ত্রিশের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যুবক মাড়ধা সরেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে বছর ছয়েক আগে পরিবারের সদস্যদের সাথে খড়্গপুর এসে হঠাৎই দলছুট হয়ে হারিয়ে যান “কথা না বলতে পারা” মাড়ধা সরেন। বিগত ছ-বছর ধরে সব রকম চেষ্টা করেও মাড়ধাকে খুঁজে পাননি মাড়ধা বাড়ির লোকজন।গত সোমবার মেদিনীপুর শহরের পাহাড়িপুর এলাকার বাসিন্দা যোগাপ্রশিক্ষক তথা সমাজকর্মী পূর্ণেন্দু শেখর কালী লক্ষ্য করেন তাঁর বাড়ির সামনে আলুথালু পোষক- পরিচ্ছদে ব্যাগপত্র নিয়ে এক ব্যক্তি বসে রয়েছেন। পূর্ণেন্দুবাবু সেই ব্যক্তিকে বিকেলে ও রাতে খাবার দেন।

    পাশাপাশি তিনি ফেসবুক লাইভে বিষয়টি শেয়ার করেন।যদি কেউ এই ব্যক্তিকে চিনতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে বিষয়টি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেন। পাশাপাশি পূর্ণেন্দু বাবু বিষয়টি ফোনে চুয়াডাঙ্গা হাইস্কুলের শিক্ষক সমাজকর্মী সুদীপ কুমার খাঁড়া সহ বন্ধুস্থানীয় অন্যান্য কয়েকজনকে ফোনে জানান। সোমবার রাতে মেয়ের জ্বর থাকার কারণে পূর্ণেন্দু বাবু প্রায় গোটা রাত জেগেছিলেন এবং মাড়ধা বাবুর দিকে নজর রাখছিলেন।ভোর চারটার দিকে পাহাড়িপুর স্কুল এলাকায় কুকুরের পাল একটু উপদ্রব করায় মাড়ধা বাবু অবস্থান বদল করেন এবং পূর্ণেন্দুবাবুর নজরের বাইরে চলে যান। মঙ্গলবার সকালে পূর্ণেন্দুবাবু মাড়ধাকে বাড়ির সামনে না দেখে কিছুটা হতাশ হন। ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যম সূত্রে মাড়ধার মেদিনীপুরে থাকর খবর পৌঁছে যায় মাড়ধা বাবুর বাড়িতে।মাড়ধা বাবুর বাড়ির লোকেরা পূর্ণেন্দু বাবুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। পূর্ণেন্দু বাবু বাড়ির লোকদের বুধবার সকালে মেদিনীপুর আসতে বলেন এবং আশ্বাস দেন যেকোনো ভাবেই হোক মাড়ধা বাবুকে তাঁরা খুঁজে বের করবেন। বুধবার সকালে মাড়ধা বাবুকে জগন্নাথ মন্দিরে চক এলাকায় পুরানো বেথেল অফিসের সামনে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।সেই খবর পূর্ণেন্দু বাবুর কাছে পৌঁছাতেই তিনি মাড়ধা বাবুর কাছে চলে আসেন। পাশাপাশি তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন চুয়াডাঙ্গা হাইস্কুলের শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া। ইতিমধ্যে গ্রাম থেকে বাইকে সেখানে পৌঁছে যান মাড়ধার ভাই চুনারাম সরেন,প্রতিবেশী নিত্যানন্দ টুডু এবং মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে কর্মরত মার্থাদের গ্রামের ছেলে ফকির মান্ডি।তাঁরা মাড়ধাকে সনাক্ত করেন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন খড়্গপুরের অতুলমণি পলিটেকনিক স্কুলের শিক্ষক সেবাব্রত দত্ত। পাশাপাশি ভীড় জমান স্থানীয় মানুষ সবার উপস্থিতিতে মাড়ধা ও মাড়ধার বাড়ির লোকের পরিচয়পত্র যাচাই করে মাড়ধাকে তাঁর বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাড়ির লোকেরা পূর্ণেন্দুবাবু সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।মাড়ধাকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি পূর্ণেন্দুবাবু, সুদীপ বাবুসহ অন্যান্যরা।বাড়ির লোকেরা গাড়ি ভাড়া করে মাড়ধা কে নিয়ে সকাল নটা নাগাদ মেদিনীপুর থেকে জাম্বনীর গৈত গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা দেন।মাড়ধারা গ্রামে পৌঁছালে “হারিয়ে যাওয়া” ঘরের ছেলেকে দেখতে গোটা গ্রাম মাড়ধাদের বাড়িতে এসে ভীড় জমায়।