|
---|
জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া হাড়িপুকুর গ্রাম। একেবারে বাংলাদেশের শূন্যরেখা লাগোয়া মন্দিরে কালীপুজো করেন হিলির মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এই কালী পূজা ঘিরে সাজো সাজো রব গ্রামে। শুধু গ্রামবাসীরাই নয় এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সামিল হন সীমান্তের প্রহরারত বিএসএফ জওয়ানরাও। শুধুমাত্র ভারতীয় বা বিএসএফরা নয় সীমান্ত লাগোয়া এই পূজোয় মাতেন বাংলাদেশের মানুষও। এমনকী, মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণও করেন তাঁরাই। তবে প্রথম থেকেই রীতি মেনে এই পুজো করেন হিন্দু পুরোহিত। কালী পুজোকে ঘিরে সেজে উঠেছে কাঁটাতারের পাশের গ্রাম হাড়িপুকুর।
উৎসবের রেশ হাড়িপুকুর সংলগ্ন বাংলাদেশের গ্রামগুলিতেও। শুধু গ্রামবাসীরাই নয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সামিল হন সীমান্তের প্রহরারত বি.এস.এফ ও বিজিবি-র জওয়ানরাও। দীপাবলির আলোর এই অনুষ্ঠানে কার্যত মনের আঁধার দূরে সরিয়ে মিলন উৎসবে মাতে ওঠেন দুই বাংলার মানুষ।দেশ ভাগের পর থেকেই হাড়িপুকুরের সীমান্তের শূন্যরেখার পিলারের পাশেই দেবী দীর্ঘ দিন থেকে পূজিত হয়ে আসছেন। তবে এখানে কালীর থানে ঘট পূজা হয়। প্রথম থেকেই ঘট পূজার প্রচলন আজও অব্যাহত।
মূর্তি তুলে পুজো হলেও গ্রামবাসীরা এই কালীর থানকে জাগ্রত বলে মানেন। হাড়িপুকুর গ্রামটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম বলে পরিচিত এবং ওপারে বাংলাদেশের গ্রামগুলিও মুসলিম অধ্যুষিত। হিন্দুদের প্রচলিত রীতি মেনে হাড়িপুকুর গ্রামের এই কালী মাতার থানে পুজো সারা বছরই করেন হিন্দু পুরোহিত। কিন্তু কালীর থান এবং যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করেন ওই গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা। সারা বছরই কাঁটাতারের বেড়ায় বন্দী এই গ্রামবাসীরা। বাইরের পুজোয় আনন্দ না করতে পারলেও গ্রামের মধ্যে আলোর এই উৎসবে মেতে ওঠেন। কালীপুজোকে ঘিরে আলোর ঝর্ণা ধারায় সেজে ওঠে এপারের হাড়িপুকুর গ্রাম এবং ওপারের বাংলাদেশের বাঘমারা গ্রাম। কালীপুজোর পরদিন পুরনো রীতি অনুযায়ী খিঁচুড়ি ভোগেরও আয়োজন করা হয়। যে ভোগে অংশগ্রহণ করে সবাই। হাড়িপুকুর গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে , স্বাধীনতার পর থেকেই পূজিত হয়ে আসা এই কালীপুজোর কয়েকটি দিনে এলাকায় একটি জমজমাট পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিদ্যুতের অভাবে প্রথমে মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজোর প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে গ্রামে বিদ্যুৎ এসে যাওয়ায় পুজোর কয়েকটি দিনে ছোট ছোটো টুনি বাল্বের আলোতে সেজে ওঠে দুই দেশের শূন্যরেখা এলাকা। পুরোনো রীতি মেনেই হিন্দুদের দ্বারা এই পুজো চললেও সেখানে অংশ নেন হাড়িপুকুর গ্রামের সমস্ত মুসলিম মানুষেরা।জাত ভেদাভেদ ও দেশ ভাগাভাগি ভুলে পুজোর দিন ও পুজোর পরের দিন খিঁচুড়ি বিতরণ অনুষ্ঠানে সামিল হন বাংলাদেশের গ্রামের প্রচুর হিন্দু ও মুসলিম মানুষ। দেশজুড়ে যেখানে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ পালটা অভিযোগ। এরই মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ছে হাড়িপুকুর গ্রাম। এযেন দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতার পরিবেশেও অক্ষুন্ন সেখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন । গ্রামের হিন্দু কালী মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। এখানে এসেই মনে হয় বিদ্রোহী কবি নজরুলের লাইন ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’। আর মাএ কয়েকদিন তাই এই কালী পুজো ঘিরে সাজো সাজো রব হিলি হাড়িপুকুর গ্রামে।