এ কেমন কান্না, মাটি ভিজে লাল, চোখে জল ঝরে না

শরীফুল ইসলাম, নদীয়া:লোকসভার ষোড়শ অধিবেশনের চব্বিশ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই রক্তাক্ত দেশের ভূ-স্বর্গ! উরির পর এবার পুলওয়ামার। জম্মু-কাশ্মীর পুলওয়ামার আত্মঘাতী জঙ্গি হানার জেরে ভূ-স্বর্গ তো নয়, এক ঝলকে মনে হয়, কোথায় ভু-স্বর্গ এত যেন মৃত্যু পুরী।ভারতীয় জওয়ানদের লম্বা লাশের মিছিল চলছেই। জঙ্গি হামলার জেরে খবর ইস্তক ৪২ জন ভারতীয় সেনা জোয়ান নিহত। আহতের সংখ্যাটা প্রায় পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। মোদির প্রধান মন্ত্রীত্বে এটি সম্ভবত ১৮ তম এবং সব চেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। ‘১৬ সালে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলাতে আঠারো জন শহীদ হন। ঘটনার অব্যবহিত পরই গেরুয়া রঙিন সরকারের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়েছিল।এবার কি হবে ?ঘটনার পরেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট জুড়ে টুইট, ফেসবুকে কমেন্টস ট‍্যাটাস যেন মুড়ি মুড়কি।
ঘটনার পরেই দেশের নেতা -মন্ত্রী আমলা যে যাঁর মতন করে বিবৃতি প্রকাশ ব্যস্ত।ঘটনার পরেই কৃতকর্মের দায় স্বীকার করেছেন সংঘঠনকারী।ঘটনার পরেই সাংবাদিকরা তড়িঘড়ি খবরের আপ ডেট প্রকাশে তৎপর।অতি দেশভক্তদের মাথা গরম জ্বলন্ত আছে ভর্তি তেলের কড়াই। কেউ বলছেন, মোদি আর নয়, কেউ আবার মোদিকেই চায়।বিরোধীরা সংযত। বেশি কথায় ভুলও তো বেশি বেশি হয়।যে যাঁর কাজে যতটা সম্ভব দায়িত্বশীল। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত সাফল্য নিয়ে চিন্তিত।কিন্তু, ওঁদের পরিবার গুলি ? এক মা কে রক্ষায় সমর্পিত আর এক মায়ের হলো কোল খালি !ভালেনটাইন্সডের সাত সকালে হ্যাপি উইশ দিয়ে দিনটা শুরু হয়েছিল। বেলা শেষে আর না থাকার খবরে সমস্ত যগতৎ টাই অন্ধকার ডুবে গেল!!
ছোট্ট শিশু সেই শেষ কোল পেয়েছিল যে, আর কোনোদিন জুটবে না কোল তার এ জীবনে !!! মা-সন্তান আর প্রিয়তমার চোখের জলের মূল্য , কে দেবে ?রাষ্ট্র তো দেবে অর্থ, মেডেল প্রশংসা। ফরাতে পারবে কি আর কোনো দিন তাঁদের ?বর্ণ মালার মতন করে সাজানো প্রশ্ন। সাজানো, গোছানো উত্তরও। শুধু একটা প্রশ্নেই নেই উত্তর , এর শেষ কবে বা কোথায় হবে ?ভোট আসে, দেশের জনগণ ভোট দেয়। নির্বাচিত সরকার দেশ চালায়। দেশ তো চলে না। চলে প্রশাসন। নিজেদের মতন করে সাজানো নীতি মালা নিয়ে সরকার চালায় প্রশাসন। প্রশাসন এবং নীতি মালা গাঁথিয়েদের সম্পর্ক তাই ওতপ্রোত।

    প্রায় বছর পাঁচেক আগে এই দেশের সরকারে নামক দলের হাত ধরে বিরাট ছাতি ওয়ালা এক পুরুষ আসেন। গোটা দেশ উৎসাহ আর উদ্দীপনায় বুক বাঁধে। তিনিও প্রতিশ্রুতি দেন, দেশ রক্ষায় তাঁর ভূমিকা হবে চৌকিদারের।

    বাইরে থেকে এসে নাদিরশাহ দেশের সম্পদ লুন্ঠন করেছিলেন। এই চৌকিদারেরই পাহারায় দেশের সম্পদ কতিপয় দেশীও মহাপুরুষদের (পড়ুন কাপুরুষ) হাতেই লুন্ঠিত হল।এবার, উরি থেকে পুলওয়ামার কেমন পাহারায় চৌকিদার ?যে কোনো ঘটনা পরিণতি আমরা দেখি। তবে ঘটনা ঘটার আগেই ঘটনার ঘনঘটা শুরু হয়ে যায়। যাঁরা তা বিশ্বাস করেন , তাঁরা বলছেন , সতর্কতা তো ছিল।সাধারণ মানুষ বা ভুক্তভোগী মাত্রেই বলছেন, যে কোনো সংবেদনশীল জায়গায়, নিরাপত্তা থাকে। নতুন মানুষ, বা যে কোনো গাড়ির আসা যাওয়া প্রশাসনের নজরদারি থাকে।তবে , কি সেদিন এগুলো ওই রাস্তায় ছিল না ?না কি বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো ?দেশের উন্নতি, বিচ্ছিন্নতাবাদীর কোমর ভাঙতে চাপান্ন ইঞ্চির নোট বাতিলের ধাক্কা সহ্য করেছি।পনেরো লক্ষ একাউন্টে ঢুকবে বলে ব্যাংকের কাউন্টারে লম্বা লাইন দিয়ে পাশ বই খুলেছি।মন্দির নির্মাণ, প্রতিবেশী দেশ নিধন, বিশেষ সংখ্যা লঘুদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করার জন্য তবে কি আরো পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে ?এমন প্রশ্ন কর্তার মুখে ঝামা ঘষার লোকের অভাব পড়বে কি , জানি না, তবে,দেশ রক্ষায় ৪২ জনের রক্ত- হার-মাংস যেখানে মাটির ধুলোয় মাখামাখি খায়, সেখানে আবার পাঁচ বছর নিয়ে প্রশ্ন করা দেশদ্রোহিতা লক্ষণ, এমন বলার লোকের অভাব বোধ করি হবে না।তাই চাপান্ন ইঞ্চি আপাতত চুপসে গেলেও ভরসা করবে , আগলি বার ……