লকডাউনে হাঁড়িতে ফুটন্ত গরম জল, চালের জন‍্য অপেক্ষায় থাকছে চাঁচল- বরতলের মুসহর গিন্নিরা

উজির আলী, নতুনগতি, চাঁচল: ০৭

    সব এলাকায় ত্রান সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে আমরা কেন পাচ্ছি না? লকডাউনে কর্মহীন মুসহর ও অন‍্যান‍্য দুস্থ পরিবারের গৃহবধুরা এমনই অভিযোগ জানাল সাংবাদিকের কাছে।
    মঙ্গলবার চাঁচল ১ নং ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বরতল গ্রামের ঘটনা।

    উল্লেখ্য করোনা সঙ্কট মেটাতে প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে ঘোষনা করেছেন লকডাউন।
    আর এই লকডাউনেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে গ্রাম‍্য দুস্থ হত দরিদ্র পরিবারগুলি। রুজিতে ভাটা পড়ায় অন্ন অনাহারে গোটা বরতল মুসহর গ্রাম।
    কেউ ইট ভাটা, রাজমিস্ত্রি, লেবার কেউ বা দাদনে গিয়ে আটকে পড়েছেন ভিনরাজ‍্যে। কার্যত কমহীনে খাদ‍্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে ওই গ্রামে।

    মতিহারপুর জিপির বরতল গ্রামের অভুক্ত শিশুরা

    ইটভাটার শ্রমিক রামচন্দ্র মুসহর বলেন, লকডাউনে কাজ স্হগিত, সংসারে রয়েছে তিন নাবালক সন্তান। তাদের তিনবেলা পেট পুরে খাওয়াতে পারছিনা। কোনোদিন রাতের বেলা না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। রেশন কার্ডের চাল পেয়েও মেটেনি ক্ষুধা, কারন ২ কেজি চাল পেয়েছিলুম একদিনে সব ফুরাইছে।

    তরকারিও তো নয় ভাত জুটলে কোনো মতো লবন মাখিয়ে খেতে হচ্ছে। তব তরকারি খোঁজে এদিন গ্রামের মরা মহানন্দার ডাঙায় মাছ ধরতে নামেন গোটা মুসহর গ্রাম বলে জানা গেছে।

    তরকারি জোগানে মরা মহানন্দায় মাছ ধরতে বরতলের মুসহররাতবে সবারই একদিনের তরকারি হয়ে যাবে শোনা গেল সবার মুখে। কালকের জন‍্য ভাবতে হবে যে?

    গ্রামের মহিলা বাজো,বিছিয়া, সাদনি ও মালিয়া মুসহর রা জানান, উনুনে হাড়িঁ চড়াই বটে, ফুটন্ত গরম জলে রান্না ঘরে স্বামীর অপেক্ষা করতে হয়। কারন গৃহকর্তা বাড়ি ঢুকলেই চাল নিয়ে আসবেন যে। তাই আগে থেকে চুলাই হাড়িঁ চড়িয়ে দিই। এমন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ লুকিয়ে আছে মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত শেষ সীমান্ত অর্থাৎ আমবাগানের ভিতরের গ্রাম বরতলে। ৫০ টি মুসহর পরিবারের বসবাস ওই গ্রামে জানা গেছে। তবে বাগানের ভেতর গ্রাম বলে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এলকার মেম্বার প্রধানের নজরে তাদের দুর্ভিক্ষ চোখে আসেনা। এমনটাই অভিমান করে বলেছেন বরতলের ক্ষুধার্থ মুসহরেরা।

    গ্রামের গৃহবধু আরতি দাস ও শান্তি দাস জানান, লকডাউনের দুসপ্তাহ কেটে গেল। আজ অব্দি মেম্বার- প্রধান এলাকা পরিদর্শন করেন নি। আমাদের ছোটো ছোটো বাচ্চা ঠিক মতো খেতে পাচ্ছে না। না খেয়ে খেয়ে শারীরিক অসুস্থতার আশঙ্কায় রয়েছি। ভাইরাসে না মরলেও ক্ষিদের জ্বালায় মরতে হতে পারে আমাদের। মৃদু কান্দনে এমনটাই বললেন গ্রামের কর্মহীন দিনমজুরের গৃহবধুরা।
    তবে লকডাউন কে সমর্থন করেছে গোটা গ্রাম। তাই ক্ষিদের জ্বালায় অনাহারে না মরার জন‍্য ও খাদ‍্য সঙ্কট দূরীকরনে এলাকার স্বেচ্ছাসেবী, বিত্তবান ও পঞ্চায়েত প্রধান-বুথ সদস‍্যের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন বরতলবাসীরা।