ESIC চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে চরম বিপাকে পূর্ব মেদিনীপুরের শ্রমিক মহল

শুভদীপ পতি; হলদিয়া: কেন্দ্রীয় সরকারের ESIC সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর চরম বিপাকে রয়েছে হলদিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ার বুকে ESIC হাসপাতাল গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকার বালুঘাটা এবং বিসিরায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যবর্তীতে আড়াই একর জমি অধিগ্রহণ করে এবং ওই জায়গায় হাসপাতাল নির্মান প্রকল্প চলতে থাকলেও, তা চলছে ঢিলে গতিতে। যে প্রকল্প হয়ত শেষ হবে প্রায় ২০২১ সালে গিয়ে। আর এর ফলেই চরম বিপাকে হলদিয়ার শ্রমিকরা।

    বর্তমানে হলদিয়ার দুর্গাচকের তালপুকুরে একটি বসত বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে পরিষেবা প্রদান চলছে, তাতেও সন্তুষ্ট নন ESIC ভোক্তা এবং তাঁদের পরিবার পরিজনেরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রোগী দেখাশোনা চলছে, তা ২য় এবং ৩য় তল। আর এই ২য় বা ৩য় তলে বয়স্ক বা অর্থোপেডিক রোগীদের পক্ষে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

    এছাড়াও অভিযোগ, দুর্গাচকের ওই ESIC হাসপাতালে গিয়ে কেউ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারেন না। নেই বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থা। এমনকি, পুরো হাসপাতাল জুড়ে অপরিষ্কার এবং অপরিচ্ছন্নতা ঘিরে রয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সৃষ্টি করেছে। নেই বসার জায়গা। পাখার সংখ্যা কম থাকায় গরমের দাবদাহে বাড়ে রোগীদের অস্বস্তি।

    অভিযোগ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকৎসকের সংখ্যা নিয়েও। যেখানে ন্যুনতম ৫জন চিকিৎসক থাকার কথা, সেখানে ইনচার্জ এবং চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৪ জন।

    ২০১৭ সালের পর বিল নং ৫৮৬ সংখ্যা থেকে রোগীদের ঔষধের বিল এখনও বকেয়া রয়ে গিয়েছে। এছাড়াও পাশ হয়নি ২০১৮ সালের বিল।

    উল্লেখযোগ্য ভাবে হলদিয়ার বুকে যেসব নার্সিংহোম রয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই কম আসন সংখ্যা যুক্ত। এর ফলে অধিকাংশ রোগীদের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জোকা ESIC হাসপাতালে স্থানান্তরিত (রেফার) করা হচ্ছে। জোকা ESIC হাসপাতালেও কিছু সময় পর্যাপ্ত পরিষেবা না পাওয়া গেলে, পুনরায় সেখান থেকেও রোগীদের পাঠানো হয় বারাসাত ESIC হাসপাতালে।

    এই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থানান্তরিত করার ফলে দরিদ্র শ্রমিকদের এক বা দুদিনের কর্মজীবন নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে দিনে দিনে ক্ষিপ্ত হচ্ছে অধিকাংশ শ্রমিক। দাবি উঠেছে পর্যাপ্ত বেড যুক্ত আরও নার্সিংহোমের। ESIC সুবিধা যুক্ত যেসব নার্সিংহোম রয়েছে, তাদের অভিযোগ, তারাও ঠিকমত বিলের পেমেন্ট পান না।

    হলদিয়ার বুকে ইএসআই স্বাস্থ পরিষেবায় এক একদিন এক একটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন রয়েছে। যা বর্তমানে নেই। এমনকি যে মেডিক্যাল স্টোর রয়েছে, সেখানেও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঔষধের সংকট।

    হলদিয়ার ESIC প্রকল্পে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা INTTUC-র নেতা সৈকত সেন বলেন, নামেই ESIC চলছে। এই ESIC নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গাফিলতি চলছে, তা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের মনে প্রভাব দেখা দিয়েছে। এমন চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিনামূল্যে স্বাস্থ পরিষেবা বিঘ্নিত হবে। তিনি আরও বলেন, রাজ্যের পরিবেশ তথা পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী যখন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন, তখন থেকে এখনও পর্যন্ত হলদিয়ার বুকে ESIC হাসপাতাল তৈরির জন্য লড়ে চলেছেন।

    সৈকত সেন আরও বলেন, মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সাথে এই একই দাবি আদায় করতে লড়ে চলছেন হলদিয়ার INTTUC-র শ্রমিক নেতা শিবনাথ সরকার। যাঁদের তত্ত্বাবধান এবং সহযোগিতা কেবলমাত্র শ্রমিকদের স্বার্থে। আর এই লড়াই চলছে বলেই, কিছুটা হলেও আজ হলদিয়ার বুকে বিভিন্ন কল কারখানা সহ বেসরকারি সংস্থার শ্রমিকরা কিছুটা হলেও ESIC সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।

    কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের ESIC-র হলদিয়া সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমস্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নিম্মমানের। এরজন্য জেলা জুড়ে শ্রমিকরা আজ বঞ্চনার শিকার। আর এই বঞ্ছনা থেকে মুক্তি দিতে পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রী মাননীয় শ্রী শুভেন্দু অধিকারী শ্রমিকের স্বার্থে ESIC হাসপাতাল গড়ে তুলতে জায়গা দেওয়ার পরেও, দীর্ঘদিন পর নির্মানের কাজ শুরু হলেও, তার নির্মান কাজ ধীর গতিতে তা চলায় আজ জেলার শ্রমিক মহল ভীষণ ক্ষুব্ধ।

    ESIC চিকিৎসা বিভাগে শ্রমিকদের চিকিৎসা পরিষেবার মানোন্নয়ন নিয়ে রয়েছে ভুরি ভুরি অভিযোগ। দাবি উঠেছে সেইসব ক্ষেত্রে দ্রুত মানোন্নয়নের। আর সেইসব দাবির মধ্যে বেশ কয়েটি দাবি হল: ১) অবিলম্বে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে হবে, ২) ২৪ ঘন্টা অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু করতে হবে, ৩) টাইআপ সেন্টার বাড়াতে হবে, ৪) অবিলম্বে এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান সেন্টার করতে হবে, ৫) জেলা জুড়ে প্রতিটি মহকুমায় টাইআপ রেফারেল নার্সিংহোম, প্যাথলজি, ডিজিটাল এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই সেন্টার করতে হবে, যা এতদিন করা হয়নি, ৬) পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতিটি মহকুমায় ESIC এ্যম্বুলেন্স রাখা আবশ্যক করতে হবে, ৭) সাপ্তাহিক ভাবে হলদিয়ায় ESIC আউটডোরে প্রতিদিন ১জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বসাতে হবে, ৮) ESIC-র নিজস্ব ২৪ ঘন্টা এমার্জেন্সি চালু করা হোক। ৯) মেডিক্যাল বিল দ্রুত ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ১০) ESIC ছুটির টাকা সময় মত মিটিয়ে দিতে হবে, ১১) মেডিক্যাল মেডিসিন বিভাগে পর্যাপ্ত ঔষধ রাখাতে হবে, ১২) কেন্দ্রীয় সরকারের মডেল হসপিটালে (জোকা) একটি বেডে দুজন রোগীকে শোয়ানো বাতিল করতে হবে, ১৩) জোকা ESIC হসপিটালে পর্যাপ্ত সংখ্যক ICCU বেড বাড়াতে হবে, ১৪) ICCU, ITU, HDU ইউনিট চালু করতে হবে, ১৫) জোকা ESIC হাসপাতাল কর্মী এবং ম্যানেজমেন্ট রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের সাথে দুর্ব্যবহার ছেড়ে ভদ্র আচরণ করতে হবে, ১৬) রোগীর আত্মীয়দের অপেক্ষা করার জায়গা নিয়মিত পরিস্কার করা সহ মশা-মাছি এবং রোগ জীবাণু থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

    তবে হলদিয়ার বুকে কবে ESIC হাসপাতাল সম্পূর্ণ হবে, তার ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।