|
---|
মহম্মদ নাজিম আক্তার,, নতুন গতি মালদা : কখনো মায়ের সঙ্গে জমিতে ধান কেটে কখনো বা অন্যান্য কাজ কর্মের সাথে সাথে লকডাউনের মধ্যে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করল তুলকালাম।এবছর সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশশিকা পরীক্ষায় প্রায় ১৭ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭২০ মধ্যে ৫৮৫ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। সর্বভারতে স্থান অধিকার করেছে ২৭৬০৭।এতে খুশি বাবা-মা,গ্রামবাসী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তুলকালাম এর বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাড়িয়াল গ্রামে।
তাকে আর দশটা শিক্ষার্থীদের মতো শুধু লেখাপড়ার জন্যই সংগ্রাম করতে হয়নি। লেখাপড়ার পাশাপাশি তাকে লড়াই করতে হয়েছে অভাব-অনটনের সঙ্গেও। রাতে ঘুমানোর ও লেখাপড়ার ঘর না থাকার কারনে তাকে ভাবতে হয়েছে। লেখাপড়া নিয়ে তাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। আর সে যুদ্ধকে জয় করে সে তার বাবামা’র মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
রাড়িয়াল গ্রামবাসীর মাঝে অভাবি অসহায় বাবামা’র মুখ উজ্জল করে তুলেছে। তার ভালো ফলাফলে এলাকার মানুষ ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা খুশি হলেও খুশি হতে পারেনি তার অভাবি বাবা মা। এর কারন হিসেবে জানা গেছে, ছেলে ভালো রেজাল্ট করায় তাদের চিন্তায় ঘুম উড়েছে। যে পরিবারে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য বাবাকে গৃহ শিক্ষকতা করতে হয় ও মাকে মাঠে গিয়ে অন্যের ফসল কাটতে হয় সেই পরিবারের ছেলেকে কি করে ডাক্তারি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবে।
তুলকালাম ২০১৬ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক ও ২০১৮ সালে মালদা মহেশমাটি ডি.এন. সাহা বিদ্যাভবন থেকে ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও মালদা আল-আমিন মিশন একাডেমীতে পড়াশোনা করতো।এবছর মালদা আল-আমিন মিশন একাডেমী থেকে সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশশিকা পরীক্ষায় বসে অভাবনীয় ফলাফল করেছে।
বাবা আবুল কালাম একজন গৃহশিক্ষক।বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহশিক্ষকতা করেন। মা সাইনুর বিবি একজন গৃহবধূ। পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন জোগানোর জন্য
অন্যের জমিতে গিয়ে ধান কাটে। বাস্তুভিটা ছাড়া
জমি বলতে তাদের কিছুই নেই।তারা ৩ ভাই। তুলকালাম বড় ছেলে। একটিমাত্র ভাঙাচোরা কাঁচা ঘরেই বাবা-মা ও তিন ভাই সহ মোট পাঁচজনের বসবাস।টালি ছাউনি ঘরের ফাঁকফোকর দিয়ে আলো-বাতাস প্রবেশ করে ঘরের মধ্যে। জরাজীর্ণ দেওয়াল গুলিতে ফুটে উঠেছে দারিদ্র্যতার ছাপ। বাবার গৃহশিক্ষকতা করে যা সামান্য আয় হয় তা দিয়ে চলে তিন ছেলের পড়াশোনার খরচ ও সংসার।
বাবা আবুল কালাম জানালেন গৃহ শিক্ষকতা করে কষ্টের সঙ্গে ছেলেকে মানুষ করেছেন। প্রাথমিক থেকেই তার ছেলে পড়াশোনায় ভালো। দারিদ্রতার মধ্যে ভালো পড়াশোনা করছে বলেই ওকে কষ্ট হলেও বাইরে থেকে পড়াশোনা করিয়েছিলাম। ডী এন সাহা হাই স্কুল থেকে আলামিন মিশন সব জায়গাতেই আমি সাহায্য পেয়েছি তাদের সাহায্যের কথা বলার নয়। আগামী দিনে সরকার যাতে আমাদের পাশে থাকে আমরা সেই আশায় করবো।সংবাদমাধ্যমের কাছে পরিবারের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বাবা আবুল কালাম।
তুলকালাম এর মা শাহিনুর বিবি বলেন ‘খুব কষ্ট করে ছেলেদের মানুষ করছি। আমি সংসারের কাজকর্ম করার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন মাঠে কাজ করতে যাই। তুলকালাম আমাকে মাঠের কাজে সাহায্য করে। ও আমার কষ্ট সহ্য করতে পারে না। ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনার মাঝেও বিভিন্ন মাঠে গিয়ে ধান কেটে ধান বোঝাই করে মাথায় করে নিয়ে আসে। অর্থের অভাবে ঘর করতে পারেনি। বিপিএল তালিকার নাম নেই, তাই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর জোটেনি কপালে। এখন ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগাবো কিভাবে সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।’
তুলকালাম এর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারে নিত্য অভাব। ঘরের অভাবে অন্যের বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল! কেরোসিনের অভাবে অনেক রাতে তার পড়া হয়নি। উপোস থেকে স্কুলে যাওয়া তার নিত্যদিনের ঘটনা ছিল।ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা আছে। জানে না তার স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা। কেননা ডাক্তারি পড়তে অনেক টাকা লাগবে। সে টাকা তো বাবামা দিতে পারবে না।
এর জন্য তাকে অনেক চড়াই উৎড়াই পার হতে হবে। অনেক কষ্ট করতে হবে।
মালদা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান তুলকালাম ও তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।